কালের সাক্ষী ময়মনসিংহের ‘শশী লজ’
মাহমুদুল হাসান রতন, ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের জমিদারদের যে সকল স্থাপনা পর্যটকদের আকর্ষণ করে শশী লজ (বর্তমানে মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ) সেগুলোর অন্যতম একটি। পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের তীরে অবস্থিত ‘শশী লজ’ জমিদার আমলের এক অনন্য ¯’াপনা। এই শশী লজ মহারাজা শশীকান্ত আচার্যের বাড়ি, যা ময়মনসিংহের রাজবাড়ী নামেও খ্যাত। মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে নির্মাণ করেছিলেন এক মনোরম প্রাসাদ। এ প্রাসাদটি ‘ক্রিস্টাল প্যালেস’ বা ‘রংমহল’ নামেও পরিচিত ছিলো।
১৮৯৭ সালের ১২ জুন গ্রেট ইন্ডিয়ান ভূমিকম্পে বিখ্যাত ‘রংমহল’ ধ্বংস হয়ে গেলে সেই স্থানে নির্মাণ শুরু করেন বাইজেন্টাইন ধাঁচের বর্তমান ভবনটি। ভবনটির নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার আগেই সূর্যকান্ত আচার্য মত্যুবরণ করেন। নি.সন্তান সূর্যকান্তের দত্তক পুত্র শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী ভবনটির নির্মান শেষ করেন ১৯০৫ সালে এবং তার নাম অনুসারে এর নামকরণ করেন ‘শশী লজ’।
জানা যায়, শশীকান্ত নির্মিত শশী লজ এখনো অনেকর মনে বিস্ময় জাগায়। তিনি রাজা থেকে মহারাজা পর্যন্ত উপাধি পেয়েছিলেন। ১৯২০ সাল (বাংলা), বাংলার গভর্নল রোনাল্ড তাকে মহারাজা উপাধি দেন। তিনি ছিলেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এ বংশের জমিদারদের জন্যই ময়মনসিংহ শহর জমিদারদের শহর বলে পরিচিত। দৃষ্টিনন্দন শশী লজ তাদেরই কীর্তি। পুরো বাড়িটি ৯ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। শশীলজের মূল ফটকে রয়েছে ১৬টি গম্বুজ। সর্বমোট ২৪ টি কক্ষ রয়েছে এই ভবনটিতে। ভেতরে প্রায় প্রতিটি ঘরেই রয়েছে ঝুলন্ত, প্রায় একই রকম দেখতে, ঝাড়বাতি। শশীলজের মূল ভবনের সামনে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন বাগান। বাগানের মাঝখানে আছে শ্বেতপাথরের ফোয়ারা, যার মাঝখানে রয়েছে গ্রিক দেবী ভেনাসের মূর্তি। শশী লজের ভেতরের বারান্দা অতিক্রম করে কয়েক ধাপ সিঁড়ি পেরোলেই রঙ্গশালা। সুদৃশ্য সেই রঙ্গশালার এক প্রান্তে বিশ্রামঘর। বিশ্রামঘরের পর কাঠের মেঝেযুক্ত হলঘর। হলঘরের পাশেই মার্বেল পাথরে নির্মিত আরেকটি জলফোয়ারা। ভবনটির পেছনে উঠান। সবুজ ঘাসের সেই উঠান পেরোলে একটি জলাশয়। জলাশয়ের পূর্ব ও পশ্চিম পারে দুটি জরাজীর্ণ ঘাট থাকলেও দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত দ্বিতল স্নানঘাটটির সৌন্দর্য অসাধারণ। মূল ভবনের পেছন ভাগে রয়েছে একটি দোতলা স্নানঘর। কথিত আছে- এই স্নানঘরে বসে রানী পাশের পুকুরে হাঁসের খেলা দেখতেন। পুকুরটির ঘাট মার্বেল পাথরে বাঁধানো। এছাড়াও অর্ধ গোলাকার খিলান সম্বলিত প্রধানপ্রবেশ পথটি শশী লজের স্থাপত্যিক সৌন্দর্য বাড়তি শোভা যোগ করেছে। বাড়িটির আশেপাশে এখনো রয়েছে বেশকিছু দুষ্প্রাপ্য ও প্রচীন গাছগাছালি। আছে দুষ্প্রাপ্য নাগলিঙ্গম যা তখন হাতির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বাড়িটিতে বেশ কিছু স্নানঘর রয়েছে।সম্পাদনা : মুরাদ হাসান