আইপিইউ সম্মেলনে নোবেলজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী ‘অর্থনৈতিক সহিংসতা এবং আয় বৈষম্য বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি’
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: শিশু অধিকার কর্মী ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী বলেছেন, বিশ্বের ৫০ শতাংশ মানুষের সমপরিমাণ সম্পদ মাত্র ৮ জন ধনীর কাছে আছে। দিনে দিনে এই বৈষম্য বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী আয় বৈষম্য এবং অর্থনৈতিক সহিংসতা বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৬তম সম্মেলনের সাধারণ আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ভারতীয় নাগরিক কৈলাশ একথা বলেন। সাধারণত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় লিখিত বক্তব্য দেওয়া হলেও কৈলাশ উপস্থিত বক্তৃতা দেন। তিনি বলেন, বিশ্বে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান ক্রমেই বেড়ে চলছে। যুদ্ধের কারণে বর্তমান বিশ্বের প্রায় ২৩ কোটি শিশুর জীবন বিপন্ন।
তিনি বলেন, বিশ্বের একশো কোটি মানুষ দিনে দুই ডলারও আয় করতে পারে না। কয়েক দশক আগে যুক্তরাষ্ট্রে একটি প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শ্রমিকের আয়ের ব্যবধান ছিল ২০:১। এই বৈষম্য বেড়ে হয়েছে ২০০:১। বিশ্বের ৫০ শতাংশ মানুষের সমপরিমাণ সম্পদ মাত্র ৮ জন ধনীর কাছে আছে। তিনি বলেন, এই সহিংসতা মানবজাতির নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠছে।
এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য, ‘রিড্রেসিং ইনইকুয়ালিটিজ: ডেলিভারিং অন ডিগনিটি অ্যান্ড ওয়েল বিং ফর অল’। সাধারণ আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এই শিশু অধিকার কর্মী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমরা যখন এই সম্মেলন করছি তখন ২৭০ মিলিয়ন শিশু স্কুলে যেতে পারছে না। ২১ মিলিয়ন মানুষ বিক্রি হয়ে শ্রম দাসে পরিণত হয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না, সহ্য করা যায় না। একদিকে ১০০ মিলিয়ন শিশু দাসত্ব, পাচার ও শিক্ষাবঞ্চনাসহ বিভিন্ন সহিসংতার শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে ১০০ মিলিয়ন তরুণ রয়েছে যারা চাচ্ছে পৃথিবীকে বদলে দিতে। তাদের পৃথিবী বদলে দেওয়ার শক্তি, ক্ষমতা ও আদর্শ আছে। আমরা কি এই তরুণদের পাশে দাঁড়াতে পারি না?
বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে কৈলাশ বলেন, দক্ষিণ এশিয়াসহ পৃথিবীর কিছু অংশে তরুণরা কিভাবে ভুল পথে যাচ্ছে। উগ্রবাদের পথ বেছে নিচ্ছে। বিশ্বের ২৩০ মিলিয়ন শিশু সংঘাতপূর্ণ এলাকায় বসবাস করছে। তাদের জীবন ও শিক্ষা বিপদগ্রস্ত। যৌথভাবে এর সমাধান আমাদের দায়িত্ব। আমি আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাবো এই বিপদগ্রস্ত শিশুদের বাঁচানোর জন্য।
এই নোবেল বিজয়ী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, আমাদের এই বিশ্ব কি এতই গরিব যে এই পরিমাণ অর্থ প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ব্যয় করতে পারবো না?
কৈলাশ সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় শিশুর জন্য যা বলা হয়েছে তা অর্জনের জন্য যার যার দেশে ফিরে কাজ করবেন। বাজেটে এই অর্থ বরাদ্দ করার দায়িত্ব আপনাদের। তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আজই সময়, এই ঢাকাই স্থান, এখান থেকেই আমাদের শিশুদের জন্য কিছু করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সহানুভূতি নিয়ে সারা বিশ্বের শিশুর পাশে দাঁড়াতে হবে।
তিনি শিশু শিক্ষার বিষয়ে নোবেল বিজয়ীদের একটি ক্যাম্পেইন প্রোগ্রামের কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা সব নোবেল জয়ীরা একটা ক্যাম্পেইন শুরু করেছি। ২০ সেপ্টেম্বর এমপিরা নিজ নিজ স্কুলে যান। আপনাদের স্কুলে শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান। বিশ্ব নাগরিকদের জন্য একটি নতুন সভ্যতা গড়তে হবে। তিনি বলেন, করপোরেট নেতৃত্বের ক্ষমতা রয়েছে কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে এই ক্ষমতা মেলালে চলবে না। আপনারা কেবল জনগণ, ভোটার ও এলাকার জনপ্রতিনিধি নন, আপনারা লাখো, প্রত্যাশা ও স্বপ্নের প্রতিনিধিত্ব করেন। আপনারা তাদের বিবেক এবং বিশ্বাসের রক্ষক।
কৈলাশ বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন অনেক বেশি জরুরি। যদি নারীকে আমরা সমভাবে ক্ষমতায়িত করতে পারতাম তাহলে গত ৫ হাজার বছরের সভ্যতার ইতিহাসে অনেক সমস্যা আমাদের মোকাবিলা করা লাগতো না। যা এখন আমাদের করতে হচ্ছে। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ