প্রাণ ফিরে আসুক বাংলা চলচ্চিত্রে
আসিফ আকবর
বাংলা ছবির দুই অবিসংবাদিত অভিনেত্রী শাবানা ম্যাডাম এবং ববিতা ম্যাডাম। আবাহনী-মোহামেডানকে ঘিরে যেভাবে দেশ বিভক্ত হয়ে যেত, আমাদের বাসায়ও ম্যাডামদের নিয়ে হতো সেই রকম মাতামাতি। আমার বড় দুই বোনের নেতৃত্বে বাসায় দুটি গ্রুপ সক্রিয় ছিল। কুমিল্লা শহরে রূপকথা, লিবার্টি, রুপালী, দীপিকা এবং সবশেষ আধুনিক ‘হল’ ছিল মধুমিতা। এই হলগুলোতে ছবি রিলিজ হলেই মাইকিংয়ে অস্থির হয়ে যেত শহর। আমরা দৌড়ে বারান্দা বা ব্যালকনিতে ছুটে যেতাম কাস্টিংয়ে কে কে আছেন আর কি গান বাজায়, তা শোনার জন্য।
বছর দুয়েক আগে কক্সবাজারের হিমছড়িতে যাচ্ছিলাম আমার গানের শ্যূটিংয়ে। পথে ফিল্মের শ্যূটিং দেখে থামলাম, পরিচালক রকিব ভাই এগিয়ে এলেন। ইউনিটের সবাইকে হাই-হ্যালো শুরুর আগে একটি মেয়ে দৌড়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াল, তার নাম পরীমনি, সে আমার ফ্যান। এখন বাংলাদেশি নায়িকাদের মধ্যে সবচেয়ে কিউটেস্ট। আমি রীতিমতো অবাক তার উচ্ছ্বাস দেখে, আমরা পরিচিত হলাম, সেই শেষ দেখা। কিছুদিন আগে ‘চাঁদনী’ ছবির মহরত অনুষ্ঠিত হলো, আমার গান দিয়ে সিনেমার কাজ শুরু হবে। অফিসে বসে আছি গান গাওয়া শেষে, হঠাৎ পরিচালক শামীম ভাই পরীকে নিয়ে আমার অফিসে ঢুকলেন। আমি আবারো অবাক, তারপর নানা আনুষ্ঠানিকতায় পরীকে লক্ষ্য করলাম, সে আমার চেয়ে বেশি স্ট্রেইট কাট। সঙ্গে নিরহংকারী এবং অসম্ভব ভদ্র সুন্দরী। পরীর জন্য শুভকামনা সবসময়।
সিনেমা দেখার গল্প আগেও লিখেছি। সিনেমা দেখতে দেখতে ফ্ল্যাশব্যাকে সাদাকালোয় নিজেই হিরো হয়ে যেতাম। অ্যাকশন ছবি দেখে ‘হল’ থেকে বের হয়ে হাঁটার সময় কাউকে গুনতাম না, পারিবারিক এবং সামাজিক ছবি দেখে আবেগী হয়ে যেতাম, বিপ্লবী ছবি দেখে বিদ্রোহী হয়ে যেতাম, রোমান্টিক ছবি দেখে স্বপ্নলোকে হারিয়ে যেতাম। স্বপরিবারে হলে গিয়ে ছবি দেখার মজাই ছিল আলাদা। আজ জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস, একজন বাংলাদেশি প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হিসেবে গর্ববোধ করি। প্রাণ ফিরে আসুক বাংলা চলচ্চিত্রে। ডানা কাটা পরীরা উড়ে বেড়াক পর্দার বাইরের হিরোদের মনে! ভালোবাসা অবিরাম…
লেখক: সঙ্গীতশিল্পী
ফেসবুক থেকে