টাইগারদের বড় হওয়ার গল্প
এস আর আলিফ
খুব বেশিদিন আগের কথা কি, যখন আমরা ক্রিকেট মাঠে খেলতে নামতামÑ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য। ভালো খেলার জন্য। আনন্দিত হওয়ার জন্য। মাঝে মধ্যে কাউকে হারাতে পারলেই সন্তুষ্ট হতাম। আনন্দে উদ্বেলিত হতাম। রাস্তায় বিজয় র্যালি বের করতাম। মাঝেমধ্যে সফলতা পাওয়ার কারণেই আমাদের মধ্যে আনন্দ হতো অনেক বেশি। এখন কি সেই দিনে আছি আমরা? আমরা কি এখন সেই মাঝেমধ্যে জয়ী হওয়া কোনো দল? না। আমরা এখন নিয়মিতই ভালো ক্রিকেট খেলি। নিয়মিতই শক্তিধর দেশগুলোকে একরকম বলে কয়ে হারাই। খুব বেশি বাড়িয়ে বলছি? মনে হয় না। যদি সর্বশেষ উদাহরণটাই টানি তাহলে পরিষ্কার হবে সকলের কাছে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে ড্র করার ভালো সুযোগ থাকলেও ম্যাচটি আমরা বাঁচাতে পারিনি। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টটিই ছিল আমাদের শততম টেস্ট। এই টেস্টের আগে তো আমরা একরকম জয়ের ঘোষণা দিয়েই মাঠে নেমেছিলাম। জয়ী দলটি কিন্তু আমরাই ছিলাম। শততম টেস্টে লঙ্কা জয় আমরা করেছি। একরকম ঘোষণা দিয়ে। এটা কি আমাদের বড় হওয়ার, তর তর করে এগিয়ের যাওয়ার গল্প নয়? একটু পেছনে যদি যাই ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ সফরের কথা বলি। দুই টেস্টের প্রথম জয় পেতে পেতে পরাজিত দলে আমরা। ইংল্যান্ডের বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিলাম। জয় আমাদের একরকম পাওনাই ছিলাম। কিন্তু ভাগ্য আর নিজেদের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে পরাজিত দলে আমরা। এই পরাজয়ের মানে কি আমরা খারাপ খেলেছিলাম? না। খারাপ খেললে জয়ের দ্বারপ্রান্তে চলে যাই কী করে? ইংল্যান্ডের শক্তিমত্তার সঙ্গে আমরা আমাদের শক্তির জানান দিয়েছিলাম। দ্বিতীয় টেস্ট তো ইতিহাসই। তিনদিনে হারাই নাক উঁচা ইংলিশদের। এসব কি আমাদের বড় হওয়ার গল্প নয়? ওয়ানডে ক্রিকেটে গত দুইতিন বছর ধরে সমীহ জাগানো দল। সবাই আমাদের নিয়ে চিন্তা করতে বাধ্য হয়। আমরা আমাদের পারফরমেন্স দিয়ে তাদের আমাদের নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছি। একের পর এক শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে সিরিজ জয় আমাদের শক্তিশালী হওয়া, বড় হওয়ার কথাই প্রমাণ করছিল। চূড়ান্ত ভালো হয়তো আমরা করছি না, কিন্তু যে কয়টি টেস্ট খেলুড়ে দেশ রয়েছে, আমার বিবেচনায় বাংলাদেশ এখন সেরা চার-এ! এটা আমার র্যাংকিং। আইসিসির র্যাংকিংয়ে ৭-এ থাকলেও দলের বর্তমান পারফরমেন্স, অভিজ্ঞতা, খেলোয়াড়দের মানÑ সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন সেরা চার-এ। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাÑ তারপর বাংলাদেশ। আবারও বলছিÑ আমার এ র্যাংকিং আমার বিবেচনায়। সত্যিই এখন আমরা শক্তিধর ক্রিকেট দল। দলটির প্রতিটি খেলোয়াড়ের দিকে তাকালেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। অন্য দলের সঙ্গে বিবেচনা করলে, পারফরমেন্স দেখলে একথা আপনাকে মানতেই হবে।
যদিও আমাদের দিনগুলো এত সহজ ছিল না। অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে আসতে হয়েছে এদিনে। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রজি জয়ের পর থেকেই মূলত আমাদের ক্রিকেটের পালাবদল। ক্রিকেট আমাদের মননে, প্রতিমুহূর্তে সঙ্গী হলো। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়ে গেলাম। যতটা না ক্রিকেট দলের যোগ্যতায়, তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল এদেশের ক্রিকেটপাগল মানুষের ক্রিকেট ভালোবাসায়। মানুষের কল্যাণে, কিছু নিজেদের সাফল্যে আমাদের টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছিলাম। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে যে রক্ষা করা কঠিন সেটা আমাদের বেলাও সত্য হলো। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর দিনগুলো আমাদের খুব ভালো যাচ্ছিল না। যদিও অভিষেক টেস্টে ভারতের বিরুদ্ধে ৪ শতাধিক রান করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে পেরেছিলাম। কিন্তু তারপরের পথটুকু প্রতিকূল ছিল না। ভালো পারফরমেন্স করতে না পারার কারণে লোকেরা কটুকথা বলতে ছাড়েনি। পুড়ে পুড়ে ছাঁই হয়েছি, তবু আমরা হাল ছাড়িনি। তার ফল এখন আমরা পাচ্ছি। দেশ পাচ্ছে। এদেশ এখন বিশ্বের কাছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল। ক্রিকেটও তাই। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখন অন্যের জন্য অনুকরণীয়। দৃষ্টান্ত। সাহস। বাংলাদেশ দেখে তারা এগিয়ে যাচ্ছে। এটা আমাদের পাওনা ছিল। পাওনা ছিল এদেশের জনতার। জয় জনতা। জয় বাংলা। জয় ক্রিকেট।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী/সম্পাদনা: আশিক রহমান