দুর্যোগে দিশেহারা হাওরাঞ্চলের মানুষ
নুর উদ্দিন, ছাতক (সুনামগঞ্জ): হাওরাঞ্চলের জেলা সুনামগঞ্জে মহাদুর্যোগ চলছে। চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে হাওরের উঁচু-নিচু সকল এলাকার জমিতে এখন কোথাও ৬-৭ফুট পানি, কোথাও কোথাও গলা থেকে হাটু সমান পানি। কোন কৃষকই এক মুঠো ধান ঘরে তুলতে পারেনি। বড় হাওরগুলো প্রায় সব কয়টিই ডুবে গেছে। হাওরপাড়ের মানুষ অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
সোমবার দেখার হাওরে গেলে বেলা আড়াইটায় প্রচন্ড বেগে ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। ঝড়ের মধ্যেই হাওরের দিকে দৌঁড়াচ্ছিলেন পীরপুরের ইসলাম উদ্দিন। বজ্রপাতের গর্জন, প্রচ- বেগে ঝড় এবং ভারী বৃষ্টি শুরু হওয়ায় হাওর পাড়ে থাকা অন্যরা পেছন দিক থেকে তাকে ডাকছিলেন। এমন দৃশ্য এখন দেখা যায় অনেক হাওর পাড়েই। জেলার সবচেয়ে বড় দেখার হাওরে অবস্থানের সময় মনে হয়েছে এই হাওরপাড়ের বসতিগুলোতে মানবিক বিপর্যয় আসন্ন।
হাওরপাড়ের গ্রাম সরদাবাজের রঞ্জিত দাস কাঁচা ধান গরুর ঘাসের জন্য ছোট নৌকায় করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। বললেন, ‘গতবারও ধান গেছে, তবু টাইন্না-টুইন্না (চেষ্টা করে) কিছু ধান পানির তল থাকি আনছিলাম। ই-বার ইটাও করা যার না। কাঁচা ধান কাইট্টা নেরাম গরুরে ১-২ দিন খাওয়ানির লাগি, আমরা না অয় (হয়) অন্য কোন যেগাত চাকরি-বাকরি করলাম গিয়া, হারাবছর গরুরে কিতা (কী) খাওয়াইমু, গরু হয় বেছতাম (বিক্রি করা) অইবো, না অয় গরু না খাইয়া মরবো।’
কেবল এরাই নয়। ৩ ঘণ্টা অবস্থানের সময় দেখার হাওরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক যাদের সঙ্গেই কথা হয়েছে সকলেই একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। এমন হৃদয়স্পর্শী কথা পুরো হাওর পাড়ের কৃষকদের মুখেই।
হাওর পাড়ের সরদাবাজের মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাঁধের কাজ আগে হলে এবং সোনাপুর, উতারিয়া ও টোলাখালি বাঁধ না ভাঙলে হয়তো হাওরের উঁচু এলাকার ফসল রক্ষা হতো।’
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন বলেন, ‘আমার ৬০ বছর বয়স, কৃষকদের এতো বড় দুর্যোগ এর আগে আমি দেখিনি। হাওর রক্ষা বাঁধ সময়মত না হওয়া এবং অসময়ে ভারী বর্ষণ এবং পাহাড়ী ঢলে দেখতে দেখতে সব কয়টি হাওরের ফসল ডুবে গেল। সুনামগঞ্জকে দুর্যোগপুর্ণ জেলা ঘোষণা দিয়ে মানুষের বাড়ি-ঘর মেরামত এবং বিনা সুদে ঋণ, বীজ ও সার দিয়ে সহায়তা না করলে কৃষকরা বিপন্ন হয়ে যাবে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক জাহিদুল হক জানান, জেলার বড় হাওরগুলোর বেশিরভাগই ডুবেছে। এই পর্যন্ত ৬৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে।