কথা বলার অধিকার না থাকলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকে না
বিশ্বজিৎ দত্ত
৩টার সময় জেলে খবরের কাগজ এলো। অর্ধেক কাগজ কালো কালি দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। অথচ জেল কর্তৃপক্ষের সেন্সর করার কোনো অধিকার নেই। আমি জেলার বা ডেপুটি জেলারকে খোঁজ করলাম এ বিষয়টির প্রতিবাদ করার জন্য। হায়রে দেশ হায়রে রাজনীতি। লুমুম্বার হত্যার পেছনে যারা ছিল আজ তারাই ফাঁসি কাষ্ঠে জীবন দিল। কঙ্গোর একজন প্রধানমন্ত্রীসহ ৪জন সাবেক মন্ত্রীর প্রকাশ্যে ফাঁসি হলো। ২০ হাজার দর্শক উপস্থিত ছিল। কারাগারের রোজ নামচায় বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, কঙ্গোতে সাম্রাজ্যবাদের দাবা খেলা এখনো চলছে। জেনারেল মুবুতু যে পথ বেছে নিয়েছে সে বড় কণ্টকাকীর্ণ। রক্তের পরিবর্তে রক্তই দিতে হয়। এ কথা ভুললে ভুল হবে। মতের বা পথের মিল না হতে পারে তার জন্য ষড়যন্ত্র করে বিরুদ্ধ দলের বা মতের লোককে হত্যা করতে হবে এ বড় ভয়াবহ রাস্তা। এ পাপের ফল অনেককেই ভোগ করতে হয়েছে। খবরের কাগজ এসে গেল আমি শিহরিয়া উঠলাম। এদেশ থেকে গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথ চিরদিনের জন্য এরা বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে। সরকারি গোপন তথ্য আইন সংশোধনী বিল আনা হয়েছে। কেউ সমালোচনামূলক বা অন্য কোনো কথা বলুন না কেন মামলা দায়ের হবে। বক্তৃতা করার জন্য ১২৪ ধারা ৭(৩) স্পেশাল পাওয়ার অর্ডিন্যান্স এবং ডিপি রুল দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মোট ৫টি মামলাসহ আরও ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদেশকে তারা কোথায় নিতে চায় বুঝতে আর বাকি নাই। যে কোনো বক্তৃতা বা বিবৃতিকে সরকার অপব্যাখ্যা করে মামলা দায়ের করতে পারে। ৭ জুনের হরতাল সম্বন্ধে সংবাদ ছাপা যাবে না বলে সরকার হুকুম দিয়েছিল। এক অংশ অন্য অংশকে শোষণ করছে এটা লিখতে পারবা না। ছাত্রদের কোনো নিউজ ছাপাতে পারবা না। এটাই হলো সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, আমরা তো লজ্জায় মরে যাই। দুনিয়া বোধ হয় হাসে আমাদের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দেখে। যে দেশে মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয় সেদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকবে কীভাবে।