ম্যাশের সিদ্ধান্ত সঠিক, না ভুল?
মাশরাফি বিন মুর্তজা আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিদ্ধান্তটি তিনি হঠাৎ করে নিয়েছেন বলে মনে হতে পারে অনেকের কাছেই, কিন্তু আমার কাছে তা মনে হয় না। মাশরাফির এই সিদ্ধান্ত হয়তো হঠাৎ করে কোনো নেওয়া নয়। অবসরে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা অনেক আগে থেকেই শুরু করেছিলেন বলেই আমার ধারণা। এক অর্থে তার এই সিদ্ধান্ত সঠিক। কারণ এখন নতুন ক্রিকেটাররা উঠে আসছে, তাদের জায়গা দেওয়ার জন্য এটা সঠিক সিদ্ধান্ত। পাশাপাশি ফর্মে থাকতে থাকতেই সরে যাওয়াটা মাশরাফির জন্যই ভালো হয়েছে। আমরা এখন আলোচনা করছি মাশরাফির এই সরে যাওয়া নিয়ে। মাশরাফি সরছে না কেনÑ মানুষকে এমনটি বলার সুযোগ তিনি দিলেন না। এটা হচ্ছে তার অভিজ্ঞতা, ভদ্রতা, শিষ্টাচার, বোধদয়ই তাকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সহযোগিতা দিয়েছেন। কখন দল থেকে সরে যেতে হবে এই ব্যাপারটা অনেক বড় বড় ক্রিকেটার বা স্পোর্টসম্যানরা বোঝেন না, মাশরাফি সেটা বুঝেছেন বলেই তিনি সরে গেলেন। হয়তো এই ধারাবাহিকতায় ওয়ানডে থেকেও সরে যাবেন। একটা দেশের হয়ে ১৬ বছর ক্রিকেট খেলতে পারাটাও অনেক বড় ব্যাপার। পাশাপাশি নিজের সঙ্গে লড়াই করে খেলা চালিয়ে যাওয়া কম চ্যালেঞ্জ ছিল না তার জন্য। সব মিলিয়ে মাশরাফির ক্যারিয়ার হয়তো অনেক আগেই শেষ হয়ে যেতে পারত, তা তিনি যেতে দেননি। তার নিজের সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে যে কখন সরে যেতে হবে। আমার মনে হয় সঠিক সময়েই তিনি সরে যাচ্ছেন।
তার চলে যাওয়াতে দলে খুব বেশি প্রভাব পড়বে বলে আমার মনে হয় না। কারণ ক্রিকেট দল এখন পেশাদারী মনোভাব নিয়েই ক্রিকেট খেলে। এখন যে ছেলেটা তার জায়গায় খেলছে বা বাংলাদেশ টিমে খেলছে সে ভালো করেই জানে যে, দলে এখন ভালো ক্রিকেট খেলেই থাকতে হবে। এমন একটি দলে খেলতে হলে যে ধরনের মনমানসিকতা লাগে, সেখানে আবেগ থাকতে পারে। কিন্তু আবেগে ভারাক্রান্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই, আবার বেশি উচ্ছ্বাসে ভাসারও কোনো সুযোগ নেই এটা প্রত্যেকেই জানে। তবে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমার মনে হয় না। তবে হ্যাঁ, বোলার মাশরাফি যে দলকে এখনো অনেক কিছু দিতে পারেন তা প্রথম টি-টুয়েন্টি ম্যাচেও দেখা গেছে। বোলার মাশরাফির অভাবটা কে কিভাবে মেটাবে দল সেটা দেখার বিষয়। যদিও বাংলাদেশ দলে এখন অনেক অপশন আছে। রুবেল হোসেনের মতো বোলার এখন দলের বাইরে, খেলতে পারছে না। আশা করছি, মাশরাফির অভাবটাও পূরণ হয়ে যাবে। নতুনরা তা করতে পারবে বলেই আমার ধারণা।
মাশরাফির মতো আমরা আর কোনো অধিনায়ক পাব কি না সেটা সময়ই বলে দিবে। তবে কারও সঙ্গে কারও তুলনা হয় না। প্রত্যেকেরই দল পরিচালনা ভিন্ন থাকে, পরিকল্পনাটা ভিন্ন থাকে। যিনি আসবেন তিনিও মাশরাফির থেকে ভালো কিছু হতে পারেন। সাকিব দায়িত্বে আসবেন কিনা তা সময়ই বলে দিবে। অধিনায়ক মাশরাফি দলে একটা স্ট্যান্ডার্ড ক্রিয়েট করেছিলেন। দলকে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাটা তার মধ্যে প্রবলভাবে ছিল। ইনজুরি, অনেক সীমবদ্ধতা নিয়েও তিনি সে কাজটা করেছেন। সেই জায়গায় অন্যদের প্রমাণ করতে হবে যে, আমি মাশরাফির মতো করলাম বা আমি মাশরাফির চেয়ে খারাপ নই। তবে এই ব্যাপারগুলো আগাম বলা কঠিন।
বাংলাদেশ থেকে বলে কয়ে বিদায় নেওয়ার সুযোগ খুব কম ক্রিকেটারই পেয়েছেন। মাশরাফি এই জায়গায় সুযোগ পেলেন, সারাবিশ্বকে বলে দিতে পারলেন, দিস ইজ মাই লাস্ট সিরিজ। এটা বলতে পেরে অবসর নেওয়াটাও অনেক বড় ব্যাপার। বাংলাদেশের অনেকেই এটা বলতে পারেননি। বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক বড় বড় তারকা ক্রিকেটারও তা বলতে পারেননি। সবচেয়ে ভালো যদি মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারেন। আমরা ধরে নিচ্ছি পরবর্তী ম্যাচটাই আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিতে তার শেষ ম্যাচ। ম্যাচটা খেলেই তিনি বিদায় নিচ্ছেন, এটা অনেক বড় ব্যাপার হবে।
পরিচিতি: সিনিয়র সাংবাদিক ও ক্রীড়াবিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি
সম্পাদনা: আশিক রহমান