প্রতিরক্ষা চুক্তির কোনো প্রয়োজনীয়তা দেখছে না মানুষ
জোনায়েদ সাকি
ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেক ভালো। একটা মর্যদাপূর্ণ সম্পর্ক উভয় দেশের জন্যই ভালো। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য ভারতের সঙ্গে একটা সমমর্যাদাকর সম্পর্ক আমাদের তৈরি করতে হবে। আমরা চাই প্রতিবেশী এই রাষ্ট্রটির সঙ্গে একটা সমতা, মর্যাদার ভিত্তিতে সম্পর্ক তৈরি হোক। যে প্রতিরক্ষা চুক্তি করার কথা শোনা যাচ্ছে তার কোনো প্রয়োজন বাংলাদেশের জনগণ দেখতে পাচ্ছে না। প্রতিরক্ষা চুক্তি ছাড়াই নিরাপত্তার প্রশ্নে আঞ্চলিক সহযোগিতার দায়গুলো সম্পাদন করা দরকার। বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মধ্যে যে বহুপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান সেটা ভূলুণ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের সামরিক এবং প্রতিরক্ষা নীতিতে ভারতের কর্তৃত্ব বাড়বে। এর মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণœ হবে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে অমীমাংসিত বিষয়গুলো রয়েছে তা সামনে আনা দরকার। বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট জায়গাগুলো অমীমাংসিত রেখে ভারত যদি কেবলমাত্র একটা সফরে তাদের স্বার্থ যদি পূরণ করতে পারে বা সক্ষম হয় সেটা তো বাংলাদেশের সরকারের দিক থেকে ব্যর্থতা, পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা। সেটাই এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। কারণ এ সফরে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থই দেখা যাচ্ছে না।
তিস্তা চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এটা হওয়া দরকার। অভিন্ন নদীর যে পানি প্রত্যাহার সে বিষয় নিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে। ভাটির দেশের যে প্রাপ্য, উজানের সুবিধা নিয়ে তারা একতরফা যে প্রত্যাহার করছে এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে। ভারত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পগুলোতে আরও পানি প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধ যেখানে এখন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী বন্ধ করে দিতে বলছেন, ভেঙে ফেলতে বলছেন, সেটার ব্যাপারে আমরা কোনো কথা বলছি না। অভীন্ন নদী বাণিজ্যের যে শুল্ক অশুল্ক বাঁধা, অসম বাণিজ্য এবং এখানে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের মতো সুন্দরবন ধ্বংসের তৎপরতা, সীমান্ত হত্যা এ সমস্ত বিষয়গুলো বন্ধ করার জন্য কিংবা এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্য যে আলোচনা হওয়া দরকার বা চুক্তি হওয়া দরকার সেগুলো সামনে আসছে না। ভারত একের পর এক তার সমস্যাগুলো সমাধান করছে। নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারতের সম্পূর্ণ স্বার্থ নিশ্চিত করা হচ্ছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। ভারত যে সুবিধা চাচ্ছে তাই দেওয়া হচ্ছে। এখন তারা প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চাচ্ছে। ভারতের চাহিদাগুলো একের পর এক পূরণ করা হচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশের যে সমস্যা বা চাহিদা সেগুলো আলোচনার টেবিলে আসছে না। অর্থাৎ এর মধ্যে সরকার যে একটা পররাষ্ট্রনীতির মধ্য দিয়ে আছে এবং ভারত শোষণনীতি চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ক্ষমতা রক্ষার জন্য। কোনো একটা নির্দিষ্ট রাষ্ট্রের সঙ্গে একটা প্রতিরক্ষা চুক্তির মধ্য দিয়ে গেলে আমদের যে একটা বহুপাক্ষিক সম্পর্ক সেটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যার ফলে এ ধরনের কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তিতে যাওয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তাই বাংলাদেশের নেই। দুই দেশের মধ্যে একটা প্রতিরক্ষা চুক্তি হতে পারে অভীন্ন একটা শত্রুর বিরুদ্ধে। এখানে শত্রু কে? সুতরাং এই যে প্রতিরক্ষা চুক্তি তা বাংলাদেশের জন্য তার যে বহুপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও আঞ্চলিক যে প্রভাবের দ্বন্দ্ব আছে সেই দ্বন্দ্বের মধ্যে বাংলাদেশকে যে কৌশলগত ভূমিকা নেওয়া দরকার, এ ধরনের চুক্তি সেক্ষেত্রে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
পরিচিতি: প্রধান সমন্বয়ক, গণসংহতি আন্দোলন
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি
সম্পাদনা: আশিক রহমান