কৃষকের ঘাড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার সার্টিফিকেট মামলা
জাফর আহমদ: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়ে কৃষকরা না দিলে সে ঋণের টাকা আলোচনার মাধ্যমে আদায়ের কথা বলা হলেও তাতে কাজ হচ্ছে না। কৃষকের কাছে থেকে অনাদায়ি ঋণ আদায়ের জন্য সার্টিফিকেট মামলা করা হচ্ছ্।ে ক্ষেত্র বিশেষে কৃষকের বিরুদ্ধে জবরদস্তি করা হয়ে থাকে। অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশনের তথ্য অনুযায়ী সর্বশেষ এ ধরনের মামলার সংখ্যা ১ লাখ ৭৯ হাজার মামলা ছাড়িয়ে গেছে।
তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ এ মামলার সংখ্যা রয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৭৮৭টি। ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন করে আরও ১,৬৫০টি মামলা হয়। একই মাসে নিষ্পত্তি হয় ২,৮১৯টি মামলা। মাস শেষে অনিষ্পত্তিকৃত সার্টিফিকেট মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৮টি। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সাধারণত কৃষকের কাছ থেকে মন্দ ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট মামলা করে থাকে। খেলাপির ক্ষেত্রে কৃষকরা ঋণ নেওয়ার পর কিস্তি দিতে ব্যর্থ হলে তা মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণে পরিণত হয়। এ ঋণ তিন মাস অতিবাহিত হলে তা এসএস পর্যায়ের খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। এরপর আরও তিন মাস অতিক্রান্ত হলে তাকে ডিএফ বা সন্দেহযুক্ত ঋণ বলা হয়। এরপর কোনো ডিএফ বা সন্দেহযুক্ত ঋণ যখন তিনমাস পরিশোধে ব্যর্থ হলে তখন ওই ঋণ বিএল বা মন্দ ঋণে পরিণত হয়। বিএল বা মন্দমানের ঋণ গ্রহীতা কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়ে থাকে। অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুুযায়ী এ ধরনের মামলা সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৮টি। কৃষক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ আছে কৃষকের কাছে থেকে এ ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে কখনো কৃষকের গোয়ালের গরু ও চালের টিন খুলে আনা হয়। কখনো কখনো ঋণের টাকা আদায়ের জন্য কৃষককে বেঁধে এনে টাকা আদায় করা হয়। উপজেলা পর্যায়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। যদিও ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ ব্যাপারে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, কোনো কৃষক খেলাপি হয়ে পড়লে তার বিরুদ্ধে মামলা হলেও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। খেলাপি ঋণের টাকা আদায়ে কখনো কোনোভাবেই যেন কৃষকের উপর জবরদস্তি না করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে দক্ষিণাঞ্চলের একটি জেলার জেলা প্রশাসক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, যে কৃষক ঋণ নিয়ে দিতে পারবে না, এমন কৃষককে ব্যাংকগুলো ঋণই দেয় না। ঋণ খেলাপি হবে বিভাবে? ঋণ নিতে গেলে কৃষকের নানা প্রকার বাধার মুখে পড়তে হয়। এ কারণে তারা ব্যাংকের দ্বারস্থ হয় না। তবে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান বলেন, কুৃষ্টিয়ায় কোনো কৃষককে বেঁধে এনে টাকা আদায়ের কথা শোনা যায়নি। ব্যাংকের শাখাগুলোকে বলে দেওয়া হয়েছে মামলার পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আগেই যেন নোটিস করে ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়। ব্যাংকগুলো তা করে থাকে। কৃষকের কাছে নোটিস বা ব্যাংকের লোক গেলেই তারা ঋণ পরিশোধ করে দেয়। তারপরও যদি কৃষকের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনা ঘটে সেক্ষেত্রে কৃষকের সঙ্গে কথা বলে আলাপ-আলোচনা করে ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়।
খেলাপি কৃষিঋণ আদায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে নির্দেশনা আছে তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণায়ের মাসিক ভিত্তিতে পর্যবেক্ষণ করা উচিত বলে মনে করেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তিনি বলেন, সার্টিফিকেট মামলা মাসিক ভিত্তিতে পর্যবেক্ষণ করা হলে কি প্রক্রিয়ায় টাকা আদায় হচ্ছে বা মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে সে চিত্র পাবে সরকার। ফলে খেলাপি কৃষিঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো কৃষকের উপর অনাকাক্সিক্ষত কিছু হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। সম্পাদনা: রফিক আহমেদ