সুনানে তিরমিযী : বহু শাস্ত্রের অনন্য সমন্বয়
মুফতী আজীজুল্লাহ আশরাফ
হাদীস গ্রন্থসমূহের মধ্য হতে অন্যতম একটি গ্রন্থের নাম ‘সুনানে তিরমিযী’। পৃথিবীর বুকে কুরআনুল কারীমের পর বিশুদ্ধ ছয়টি গ্রন্থের পঞ্চম পর্যায়ে হলো তার অবস্থান। গ্রন্থটির পূর্ণনাম ‘আল জামি’উল মুখতাসার মিনাস সুনান ‘আন রাসূলিল্লাহি সা. ওয়া মা’রিফাতিস সহীহ ওয়াল মা’লূল ওমা ‘আলাইহিল ‘আমাল’। আকাইদ, কেয়ামত তাবৎ ঘটিতব্য বড় বড় ফিতনা, শরঈ বিধানাবলী, আদব-শিষ্টাচার, কোরআনের তাফসীর, কেয়ামতের আলামত, রাসূল সা. কর্তৃক পরিচালিত যুদ্ধ-বিগ্রহ ও ইসলামের প্রাথমিক যুগের মনিষীদের মর্যাদা ইত্যাদি বিষয়াদি গ্রন্থটিতে গুরুত্ব পাওয়ায় তাকে ‘আল জামি’ বা হাদীসের ইনসাইক্লোপিডিয়া বলা হয়। এরপর অধ্যায় বিন্যাস ফিকহী তারতীবে হওয়ায় তাকে ‘সুনান’ বলা হয়। এছাড়াও আরো দু’টি বৈশিষ্ট গ্রন্থটির নাম থেকে স্পষ্ট: হাদীসের শুদ্ধতায় শক্তিমান ও দুর্বলতাকে চিহ্নিত করা এবং বর্তমান ইসলামী জগত কোন বর্ণনাটিকে ভিত্তি করে ‘আমল করে চলছে তা নির্ধারণ করা। এতদ্ভিন্ন আরো কিছু বৈশিষ্ট গ্রন্থ পর্যালোচনা থেকে বেরিয়ে আসে। যেমন: ইমাম তিরমিযী প্রতিটি অধ্যায়ে সাহাবী ও পরবর্তী মুজতাহিদ ফকীহদের মাযহাবকে গুরুত্বসহ আলোচনা করেছেন। এবং বিশেষভাবে তাদের হাদীসের দলীলগুলো একত্র করেছেন; যা উক্ত গ্রন্থ সংকলনের গুরুত্বপূর্ণ একটি লক্ষ্য। এ হিসেবে গ্রন্থটি হাদীসের হলেও ফিকহের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভা-ারও বটে। প্রত্যেক মাযহাবের দলীলকে ভিন্ন ভিন্ন শিরোনাম দিয়ে তার অধীনে সংক্ষেপে হাদীসের প্রয়োজনীয় অংশটি তিনি এনেছেন; অন্যান্য সুনানে নেই এমন এক বা একাধিক বর্ণনাকে অপেক্ষাকৃত সহীহ সনদে এনে বাকি বর্ণনাগুলোর দিকে ‘ওফিল বাবি ‘আন ফুলান’ বলে ইঙ্গিত করে হাদীসের বিশাল এক জগতের দিকে ইশারা করে দিয়েছেন। সেসব ইশারাকৃত বর্ণনাগুলো দিয়ে বিরাট স্বতন্ত্র গ্রন্থও রচিত হয়েছে। এছাড়াও নাম-উপনাম দিয়ে হাদীসের বর্ণনাকারীকে নির্দিষ্টকরণ, সনদ তথা সূত্রগত সমস্যাকে সবিস্তর আলোচনা পূর্বক সিদ্ধান্ত নিরূপণ ও পূণরুক্তিবর্জন এ গ্রন্থের স্বাভাবিক বৈশিষ্টের অন্তর্গত। উপরন্তু গ্রন্থটি এতটা বিন্যস্ত ও সর্বসাধারণের ব্যবহার উপযোগ্য যে, অন্য কোন হাদীস গ্রন্থ এ বিবেচনায় তার সমকক্ষতা অর্জন করতে পারেনি। উক্ত উপকারিতা ও উপযোগিতা বিবেচনা করেই দেওবন্দ ধারার মাদরাসা ও জামিয়াগুলোতে যতটা গুরুত্ব ও বিশ্লেষণধর্মী মানসিকতা নিয়ে সুনানে তিরমিযীর পাঠদান করা হয় অন্য কোন হাদীস গ্রন্থের বেলায় তেমনটি করতে দেখা যায় না।
তথ্যসূত্র : সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, কাশফুয যুনূন, মুকাদ্দিমাতু সুনানিত তিরমিযী, দরসে তিরমিযী, হালাতুল মুসান্নিফীন।