স্রষ্টাকে ভয় করো!
রায়হান রাশেদ
নিখিল জগতের অধিপতি মহান আল্লাহ তায়ালা। জগতের সবকিছু সৃষ্টি হয়েছে তাঁর আদেশে। তাঁর হুকুমের বাইরে গাছের পাতাও নড়তে সক্ষম নয়। দুনিয়ার মুখ দেখতে পারে না কোন মায়ের উদরের ভেতরের শিশু। তিনি সবকিছুর একচ্ছত্র মালিক ও স্রষ্টা। মায়ের পেটের ভেতরের শুক্রকীটের নড়াচড়া থেকে গহীন সমুদ্দুর গভীরে বাসকারী পিঁপড়ার গতিবেগ তার কুদরতি জ্ঞানে ও চোখে ষ্পষ্ট। দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানবজাতি আল্লাহ তায়ালার প্রিয় সৃষ্টি। তাদের কারণে দুনিয়ার সবকিছু গড়েছেন। পৃথিবী সাজিয়েছেন। বান্দার কাছে আল্লাহর চাওয়া হলো, মানুষ তাঁর উপসনা করবে। তাঁর হুকুম পালন করবে। তাঁকে ভয় করবে। আল্লাহভীতি মানুষকে পবিত্র পরিশুদ্ধ করে। মানুষকে সম্মানিত করে ও সবিশেষ তাকে জান্নাতে পৌঁছায়। আল্লাহ তাঁকে ভয় করার আদেশ দিয়েছেন। কুরআনে আছে- “হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় করো যেমন তাঁকে ভয় করা উচিত”। আলে ইমরান ১০২। আরেক আয়াতে ঘোষিত হয়েছে, “তোমরা আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় করো”। সূরা তাগাবুন ১৬।
আল্লাহকে কেমন ভয় করা উচিত? আমরা যদি তাঁর সৃষ্টিরাজিকে নিয়ে সামন্য ভাবি তাহলে সহজে বোধগম্য হবে। আল্লাহকে ভয় করার মাঝে রয়েছে চির মুক্তির পথ। শাশ্বত জান্নাতের বাসিন্দা হবার উপায়। কারো ভেতর যদি আল্লাহ তায়ালার ভয় থাকে, তাহলে সে কোন পাপ কাজ করতে পারবে না। পাপ কাজ করতে প্ররোচিত হবে না। তিমির রাতের অন্ধকারে, পৃথিবীর সৃষ্টিকে ঘুমন্ত রেখে, পৃথিবীর সবাইকে ফাঁকি দিয়ে পাপ কাজ করা যায় কিন্তু কেউ না দেখুক আল্লাহ দেখেছেন, এই ভয় আমাদের ভেতরে জাগ্রত হতে হবে। তাহলে আমাদের জীবন কেল্লাফতে এবং আল্লাহকে ভয় করার মধ্যে রয়েছে অভাবিত রিজিকের ফায়সালা। আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে চলে আল্লাহ তার মুক্তির পথ বের করে দেন এবং যা সম্পর্কে সে ধারণা লাভ করেনি সেখান থেকে রিযিক দেন। সূরা তালাক ২-৩। আল্লাহভীতিতে রয়েছে ভাল মন্দের মাঝে পার্থক্য তৈরির শক্তি। আল্লাহকে ভয় করলে বান্দার গুনাহ মাফ হয়। তার আমলের তরি সওয়াবে ভরপুর হয়। আল্লাহ বলেন, “যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করে চলতে থাক তাহলে তিনি তোমাদের ( ভাল মন্দের মধ্যে) পার্থক্যকারী (যোগ্যতাশক্তি) দান করবেন। তোমাদের থেকে তোমাদের গুনাহসমূহ দূর করে দিবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করে দিবেন। আর মহান ক্ষমতার অধিকারী। সূরা আনফাল ২৯। খোদাভীতি মানুষকে সম্মানী করে তুলে। মানুষকে অন্যদের কাছে মর্যাদাশীল করে। যার ভিতরে খোদাভীতি আছে প্রভুর কাছে সে সবচে সম্মানী ব্যক্তি। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সা. কে জিজ্ঞাসা করা হলো, সবচেয়ে সম্মানী ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, ‘ সকলের চেয়ে যে বেশি আল্লাহভীরু’। বোখারি ৩৩৫৩, মুসলিম ২৩৭৮।
ইসলামের বিধানে কসম করা খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। কসমের বিধানে কোন শীতলতা নেই। কসম খেলে তা আদায় করা অপরিহার্য। উপরুন্ত সঠিক সময়ে কসম আদায় করতে না পারলে পরবর্তীতে কাফফারা দিতে হয়। কিন্তু আল্লাহ ভীতির নগরে কসম গৌণ। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আদি ইবনে হাতিম তাঈ থেকে বর্ণিত নবি সা. কে বলতে শুনেছি , ‘যে ব্যক্তি কোন ব্যাপারে কসম করার পর অধিকতর আল্লাহভীতির কোন কাজ দেখলে ঐ অবস্থায় তাকে সেটাই করতে হবে’। মুসলিম ১৬৫১। সমাবেত মানুষের প্রতি রাসুল সা. শেষ ভাষণ ইতিহাসের মহল্লায় আজ বিদায়ী ভাষণ বলে পরিচিত। সমাদৃত।
এমন প্রাঞ্জল ঐতিহাসিক মানব কল্যাণে নিবেদিত, জাতি গঠনে নির্ভেজাল, রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণে নজিরবিহীন সনদ কেউ কায়েম করতে পারেনি। ঐতিহাসিক ভাষণে রাসুল সা. বলে গেছেন খোদাভীতির অমোঘ বাণী। আবু উমামা সুদাই ইবনে আজলান আল বাহিলী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুল. কে বিদায় হজে ভাষণ দিতে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘ তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করো, রমযানের রোযা রাখ, নিজেদের মালের যাকাত দাও এবং নিজেদের শাসকবর্গের আনুগত্য কর, তাহলে তোমরা তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ করবে’। রিয়াজুস সালেহীন ৭৩। আমাদের প্রতিপালক জগতের অধিশ্বর মহান আল্লাহকে ভয় করা আবশ্যক। আল্লাহর ভয় আমাদের জীবন স্বার্থকতার পথ দেখবে। জীবন অপার্থিব মুগ্ধতায় সুভাসিত হবে। জীবনে বইবে সুখের ফল্গুধারা। খোদাভীতি সফল জীবনের মূলমন্ত্র।