আলেম-ওলামাদের সম্মেলন জঙ্গিবাদ রুখতে মানুষের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
শাহানুজ্জামান টিটু ও আল হেলাল শুভ : সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের কাছে ইসলামের মূল বাণী পৌছে দেওয়ার আহবানের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলেম-ওলামাদের মহা সম্মেলন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।
এছাড়া সম্মেলনে পবিত্র মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববির ভাইস প্রেসিডেন্ট শায়খ মুহাম্মদ বিন নাসের আল খুজাইম ও মসজিদে নববির ইমাম শায়খ আবদুল মুহসিন বিন মুহাম্মদ আল কাসিমসহ ছয় সদস্যের সৌদি প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বিশ্বব্যাপি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এবং ইসলামের এই ধরণের নৈরাজ্যের কোনো স্থান নেই বা শান্তির ধর্ম ইসলাম এটা কোনোভাবেই সর্মথন করে জানিয়ে বক্তব্য দেন বক্তারা। গতকাল দুপুর দুইটায় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্যে দিয়ে এই সম্মেলন শুরু হয়। দেশের প্রায় সব জেলা অসংখ্য আলেম-ওলামা সম্মেলনে যোগ দেন।
প্রায় লাখো মানুষের উপস্থিতির মধ্যে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ওলামা মাশায়েখ ও আলেম-ওলামাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ইসলাম শান্তিতে বিশ্বাস করে। ইসলাম ধর্ম কখনো নিরীহ মানুষ হত্যা সমর্থন করে না। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে চলমান কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে লাভবান হয় অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। তারা অস্ত্র তৈরি করে, বিক্রি করে। সেই অস্ত্রে রঞ্জিত হয় মুসলমানের রক্ত।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম নিয়ে ব্যবসা হয়েছে। দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ এদেশে ইসলাম ধর্মের উন্নতির জন্য অনেক কাজ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ যারা এখানে বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও ওলামায়ে ইকরাম এসেছেন, আমরা চাই তারা স্ব স্ব এলাকায় জনগণের কাছে ইসলামের মূল বাণী পৌছে দেবেন। আপনারা অন্যদের শিক্ষা দেবেন যেন কেউই অহেতুক জঙ্গিবাদে জড়িয়ে এই ধর্মের মূল বাণীর ক্ষতি না করে।
দুপুরের আগে থেকে আলেম-ওলামারা সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হন। এসময় সম্মেলনস্থলের প্রবেশ মুখে তাদেরকে আপ্যায়ন করতে দেখা গেছে বিভিন্ন সংগঠনের। “লন লন ভাই, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পানি, কেক, ট্যাকা লাগবো না, একদম ফ্রি। খালি নেত্রীর লাইগা দোয়া করবেন”। রাজধানীর দোয়েল চত্বরের সামনে দুপুরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি খন্দোকার এনায়েতুর রহমান পিকআপ ভ্যানে করে ওলামা মাশায়েখদের মধ্যে হালকা নাস্তা ও পানি বিতরণ করছিলেন এভাবে। তিনি বলেন, রাজধানীর পাঁচটি স্পটে ট্রাকে করে আমরা হালকা খাবার বিতরণ করছি। বিভিন্ন জেলা থেকে ওলামা মাশায়েখরা এখানে আসছেন। তারা আমাদের অতিথি। এ কারণে তাদের একটু সেবা করছি।
এদিকে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এর আশপাশের ২৫টি সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ ছাড়া সমাবেশের মাইক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পল্টন এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে এবং বাইরে তিনটি অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণকক্ষ সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। অনুষ্ঠানস্থলের এক কিলোমিটার দূরে বিভিন্ন ধরণের তল্লাশিচৌকিসহ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তোলা হয়।
এর প্রভাবে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি ধীর গতিতে চলাচল করতে দেখা যায়।
এরআগে আয়োজকদের পক্ষ থেকে দুই লাখের বেশি মানুষের উপস্থিতি কথা জানানো হয় এবং ঢাকার বাইরে থেকে ওলামা-মাশায়েখদের নিয়ে প্রায় আড়াই হাজার যানবাহন ঢাকায় আসতে পারে। এরফলে দুটি রাস্তা বন্ধ রাখার পাশাপাশি ২৫টি স্থানে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের কথা জানিয়ে আগের দিনই নগরবাসীকে সতর্ক করে দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ।
সম্মেলন ঘিরে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বিকেল থেকে তীব্র যানজটের কবলে পড়ে। মোহাম্মদপুর থেকে মহাখালী আসার পথে আসাদ গেইট, বিজয় সরণি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে পলাশী, চানখারপুল, রূপসীবাংলা, কাঁটাবন ও বাংলামোটর এলাকায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করে।
এ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন জেলার সর্বমোট এক লাখ ৬ হাজার ৭৭৩ জন নিবন্ধন করে। যশোর থেকে আসা আবু তাহের জানান, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলা আগত ১৫৪টি গাড়ি আগারগাঁওয়ের পিএসসি ভবনের সামনের রাস্তায় পার্কিং করা হয়। সেখান তাদের পায়ে হেঁটে সম্মেলনস্থলে আসতে হয়েছে। ঢাকায় পৌঁছানোর পর তাদের জন্য আলাদা গাড়ির ব্যবস্থা করলে ভালো হতো বলেও জানান তিনি।