সাত বছর পর আজ ভারত সফরে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: সাত বছর পর চারদিনের সফরে আজ ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এই সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত সফরটি বার বার পেছানোর পর অবশেষে এই সফর হচ্ছে। এই সফরে স্বাক্ষর হতে পারে ৩৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক। চুক্তির সংখ্যা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনা করার পর চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের সংখ্যা বাড়তে পারে কিংবা কমতে পারে। ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ সরকারের উচ্চপদস্থরা দিল্লিতে অবস্থান করছেন। আনুষ্ঠানিক সফরসূচির মধ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এর বাইরেও শেখ হাসিনা বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সাক্ষাতে অংশ নেবেন।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিপক্ষীয় সফরে শুক্রবার সকালে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন। তিনি চারদিনের এ সরকারি সফরে ভারতে ব্যস্ত সময় পাড় করবেন। এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধান, সরকারের মন্ত্রী, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এরমধ্যে রয়েছেন, ভারতের কংগ্রেস পার্টির নেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও তার ছেলে রাহুল গান্ধী। তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। শেখ হাসিনার সম্মানে নয়াদিল্লি পৌঁছবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার সঙ্গেও বৈঠক হবে প্রধানমন্ত্রীর।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-১০৯৭ ভিভিআইপি ফ্লাইটটি নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন। ফ্লাইটটি নয়াদিল্লি পৌঁছবে দুপুর সাড়ে ১২টায়।
প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে উষ্ণ সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এরপর তাকে বিমানবন্দও থেকে প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রা সহযোগে রাষ্ট্রপতি ভবনে নিয়ে যাওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী এবার ভারত সফরের সময়ে রাষ্ট্রপতির ভবনেই থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে কেন্দ্র করে ভারতের দিল্লি এখন সরকারের কর্মকর্তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কারণ এই সফরে ৩৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার কথা পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের প্রথম দিন ৭ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৪টায় রাষ্ট্রপতি ভবনের দক্ষিণ ড্রইংরুমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী সন্ধ্যায় ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে অভ্যর্থনা ও নৈশভোজে অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী প্রথম দিনে কিছুটা বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে তিনি ৮ এপ্রিল ও ৯ এপ্রিল অত্যন্ত ব্যস্ত থাকবেন।
সফরের দ্বিতীয় দিন ৮ এপ্রিল সকাল ৯টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রপতি ভবনের ফোর কোর্টে রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার ও রীতি অনুযায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হবে। সাড়ে ৯টায় গান্ধীর সমাধিসৌধ রাজঘাটের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সেখানে শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় হায়দরাবাদ হাউসে শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎ করবেন। একঘণ্টা স্থায়ী হবে এই বৈঠক।
দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর দুপুর ১২টায় হায়দরাবাদ হাউসের কনফারেন্স রুমে প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। সাড়ে ১২টায় বলরু সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই হবে। সেখানে ৩৫টির মতো সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই হতে পারে। সূত্র জানায়, প্রতিরক্ষা চুক্তি ও তিস্তা চুক্তির বিষয়টি স্বাক্ষরের ব্যাপারে এখনো কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি দুই দেশ। এই কারণে ওই চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে দুই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হলে প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে।
চুক্তির স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষ হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ দিবেন হিন্দি ভাষায় অনুদিত বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে। তিনি মোড়ক উন্মোচন করবেন। এরপর বেলা পৌনে একটার দিকে সেখানেই দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথ বিবৃতি দিবেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী হায়দরাবাদ হাউসের ব্যাংকুয়েট হলে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ভোজে অংশ নেবেন। তার সফর সঙ্গীরাও অংশ নিবেন।
বেলা সাড়ে ৫টার দিকে শেখ হাসিনা দিল্লি ক্যান্টনমেন্টে মানিকশো সেন্টারে মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর শহীদদের সম্মাননা দেবেন। শহীদ পরিবারের সদস্যরা এ ক্রেস্ট নেবেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এই সম্মাননা দিচ্ছেন।
ওই অনুষ্ঠান শেষ করে সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মওলানা আজাদ অ্যাভিনিউয়ে ভারতের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হামিদ আনসারির সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান।
প্রধানমন্ত্রী ৯ এপ্রিল অর্থাৎ তৃতীয় দিনও ব্যস্ত সময় পার করবেন। ওই দিন শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে আটটার দিকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ ফ্লাইটে জয়পুর যাবেন। তিনি ৯টা ১০ মিনিটে জয়পুর বিমানবন্দরে পৌঁছবেন। ৯টা ২০ মিনিটের দিকে সেখান থেকে হেলিকপ্টারে আজমির শরিফের উদ্দেশে রওনা হবেন।
প্রধানমন্ত্রী আজমির শরিফ জেয়ারতের পর হেলিকপ্টারে জয়পুর বিমানবন্দর যাবেন। সেখান থেকে বিশেষ ফ্লাইটে বেলা সোয়া ১টার দিকে নয়াদিল্লি ফিরবেন। তিনি বিমানবন্দর থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনে যাবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন কংগ্রেস পার্টির সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। তার সঙ্গে ছেলে রাহুল গান্ধীও থাকবেন বলে জানা গেছে।
এরপর ওইদিনই সন্ধ্যা ৭টায় রাষ্ট্রপতি ভবনের নর্থ ড্রইংরুমে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সময়ে ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভারতের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলবেন।
রাষ্ট্রপতি তার সম্মানে ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর নৈশভোজে যোগ দিবেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। রাষ্ট্রপতি ভবনের অশোকহলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এরপরই বাংকুয়েট হলে রাষ্ট্রপতি আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি।
এরপর সোমবার ১০ এপ্রিল সকাল ১০টায় শেখ হাসিনা ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন। সেখানে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লিতে হোটেল তাজ মহলের শাহজাহান হলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকাল ৪টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-১০৯৮ ভিভিআইপি ফ্লাইটে নয়াদিল্লি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। সন্ধ্যায় ঢাকায় এসে পৌঁছবেন তিনি। বিমানবন্দরে ভারত সরকারের ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানাবেন। সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময়ে যেসব বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর হতে পারে এরমধ্যে রয়েছে, বর্ডার হাট স্থাপন, তথ্য ও সম্প্রচার, বেসমারিক পারমাণবিক সহযোগিতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট ও মহাকাশ গবেষণা, ভূ-তাত্ত্বিক বিজ্ঞান, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা, ভারত প্রদেয় তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি), কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্পর্কিত।