কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ী কে!
রবিউল আলম
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে। আরও অনেক লেখা হবে সামনে। কেউ নির্বাচনে জয়লাভ করে উৎফুল্ল, কেউ পরাজয়ের গ্লানি মুছতে অনেক যুক্তির সহায়তা নিচ্ছেন। আমি সেদিকে আজ যাচ্ছি না। আমার মতে, কুমিল্লার নির্বাচনে জনগণের মতের বিজয় হয়েছে, একথা স্বীকার করেও অনেক যুক্তি দেওয়া যায়। অনেকেই বলেন, আওয়ামী লীগ জনমত গ্রহণ করতে ভয় পায়, নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয় না, ভোট ছাড়া নির্বাচন করে,। কিন্তু ওরা যে নির্বাচনে আসে না একথা বলতে শুনিনি। নির্বাচন আসলে কুমিল্লার মতো জয় হতে পারে, ক্ষমতার ভাগ নিতে পারে, দলীয় কর্মীদের বাঁচাতে পারেÑ বিএনপি যেন তা ভুলেই গিয়েছিল। বিএনপি এতই হতাশায় ডুবে গিয়েছিল যে, কোনো কূল-কিনারাই পাচ্ছিল না। কুমিল্লার নির্বাচন তাদের সেই পথ দেখিয়েছে।
জনগণ মতপ্রকাশের অধিকার পেলে মতামত দিতে পারেন, আর জনগণকে জিম্মি করে জ্বালাও-পোড়াও, পেট্রলবোমা, হরতাল, জঙ্গিবাদ বিস্তার, দেশ ধ্বংসের আন্দোলন, বিদেশিদের কাছে বিচার ইত্যাদি করলে দেশের জনগণ অসহায় ও অপমানিত বোধ করে। প্রশ্ন ওঠে বিএনপির কি আমাদের উপর আস্থা নেই? জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য বোমা মারতে হবে কেন, ভোটের জন্য আন্দোলনের প্রয়োজন কি? বিএনপিকে আরেকটি কথা বুঝিয়ে দিয়েছে যে, অধিকার আদায় বোমা মেরে হবে না, কিছু করার প্রয়োজন হলে বাংলাদেশের জনগণ তা ভোটের মাধ্যমেই করতে পারে। অযথা অতিরিক্ত কথা বলে জনগণকে অপমান, অপদস্থ করবেন না। ফলাফল ফেয়ার হয়েছে, নির্বাচন ফেয়ার হয়নি, কারচুপির চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনিÑ এ সকল অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। নির্বাচনে জিতলে বলবেন, আমরা আরও ভোট বেশি পেয়ে জিততাম, আর হারলে বলবেন নির্বাচনে সুক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে। তাহলে জনগণ কোথায় থাকে, জনগণের ভোটের অধিকার ও ক্ষমতা কোথায়, জনগণই বা কষ্ট করে ভোট দিবে কেন, সব যদি আপনারাই বলেন এবং করেন। কুমিল্লা নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি, আওয়ামী লীগের শিক্ষা নেওয়া উচিতÑ জনগণ ক্ষমতার উৎস। পারমাণবিক বোমার চেয়েও জনগণের ভোটাধিকারের ক্ষমতা অনেক বেশি। সেই জনগণকে সামান্য পেট্রলবোমা দেখিয়ে লাভ হবে না, জনগণ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে অর্থ প্রাচুর্য চায় না, একটু সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা চায়। ৫০ হাজারেরও বেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট আছে কুমিল্লায়। তাহলে আওয়ামী লীগের ভোট কোথায়? তারপরেও আওয়ামী লীগ জয়লাভ করতে পারেনি। প্রশ্নগুলো ভাবিয়ে তুলেছে, ওবায়েদুল কাদের ও আলহাজ্ব মো. সাদেক খানকে অনেক সমাবেশে বলতে হয়েছে যে, লীগের পোস্টার-ফেস্টুনের জন্য রাস্তায় চলা যায় না, ঢাকা থেকে থেকে কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম যেতে আর কোনো দলের ফেস্টুন দেখা যায় না, তারা ভোটের মাঠে থাকে না, এর প্রমাণ হচ্ছে কুমিল্লা নির্বাচন।
ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে ছাত্রলীগ যখন পরাজিত হয়েছিল তখন প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন তারা পরাজিত হলো? উত্তরে তারা বলেছিল, আমরা অনেক ভোটে এগিয়েছিলাম, কিন্তু ছাত্রীদের ভোট আমরা পাইনি। উত্তরদাতা রসিকতা করে বলেছিলেন, তোমরা তো প্রেম করতে জানো না, খালি নীতি-আদর্শ নিয়ে থাকো আর শক্তি প্রদর্শন করো, একেকজন তিন-চারজন মেয়ের সঙ্গে প্রেম করলেই তো ভোটের অভাব হতো না। কুমিল্লার নির্বাচনেও কি জনগণের সঙ্গে প্রেম ছিল, নাকি শক্তি প্রদর্শন করা হয়েছে তা তদন্ত করে দেখতে হবে। যারা ঢাকায় এসে চাপা মারে, তোষামোদি করে, জনগণের উপর শক্তি প্রদর্শন করেন, কিছু হলে ঘরে গিয়ে বসে থাকে, পরাজিত হলে জনগণের উপর রাগ করেন, তাদের দিয়ে আর যা কিছুই হোক, রাজনীতি হবে না। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের রাগ-অভিমান থাকতে নেই। সাদেক খান বলেন, রাজনীতিতে পরাজয় বলতে কিছু নেই, জনগণের ভুল নেই, তাই জনগণের পাশে থাকতে হয়, আপনি ফেল-পাস যাই করেন জনগণকে ছেড়ে যেতে পারেন না। যিনি পাস করেছেন তিনি উন্নয়ন কাজ করবেন এবং যিনি পরাজিত হয়েছেন তিনি আশার বাণী নিয়ে জনগণের কাছে যাবেন। বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীÑ উভয়কেই জনগণ ভোট দিয়েছিলেন। হয়তো কিছু কম-বেশি হয়েছে। আমার মতে, পরাজিত প্রার্থীর জনসংযোগ হওয়া উচিত পরাজিত হওয়ার দিন থেকেই। জনগণের কাছে পরাজিত প্রার্থীর গুরুত্ব অনেক, বোঝাতে হবে আমি জনগণের মাঝে আছি এবং থাকব। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে বিএনপি কাউন্সিলর বেশি পেয়েছে, কুমিল্লার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর বেশি পেয়েছে, তবুও মেয়র পদ হারাতে হয়েছে। না হারালে আমাদের হুঁশ হতো না, অহংকার মানুষকে শেষ করে দেয়। অবৈধ শক্তি প্রদর্শন করলে রাজনৈতিক দলকে শেষ করে দেয়। বিএনপির করুণ অবস্থা দেখে আওয়ামী লীগকে শিখতে হবে। কুমিল্লার নির্বাচন থেকে বুঝতে হবে জয় সবসময় জনগণের হয়।
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান