মাশরাফিদের মতো সাহসী ব্যক্তিত্ব সর্বত্র দরকার
ফিরোজ আহমেদ
ক্রীড়া সংবাদিকরা শুধু নন, পাড়াতো ছেলেপেলেদের কাছেও শোনা যাবে তিনচাকার রিকশাভ্যানে চড়ে মাশরাফির রাতবিরেতে চা খাওয়া, আড্ডা দেওয়া। সবচেয়ে সহজে মানুষের সঙ্গে মিশতে পারেন অত বড় একজন তারকা।কিন্তু মাশরাফি শুধু তারকা নন, তারকা আরও কজন আছেন বাংলাদেশ দলে। মাশরাফি একজন নেতা। এমন নেতার অভাব বাংলাদেশে বোধ করেছে বেশ কয়েক দশক। ব্যক্তিকে ইতিহাস নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু ব্যক্তিরাও ইতিহাসে নির্ধারক হন। মাশরাফি বাংলাদেশ দলকে দিয়েছেন আত্মবিশ্বাস। আমরাও পারি, যে কারও সঙ্গেই পারি, এই সাহস না থাকলে মানুষ তো খেলার আগেই হেরে থাকে।
মাশরাফির প্রভাব খেলার মাঠ ছাড়িয়ে বাইরেও বিশাল। এর আগে যে তরুণ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন, তিনি নিয়াজ মোর্শেদ, দাবায় বাংলাদেশকে যে উচ্চতায় তিনি তুলেছিলেন, তার আলোড়নে আরও কয়েকজন উল্লেখযোগ্য গ্রান্ড মাস্টারকে আমরা পেয়েছি। আরও অজস্র শিশু-কিশোর দাবা খেলতে শুরু করেছিল নিয়াজের প্রেরণায়। কিন্তু মাশরাফি শুধু খেলার মাঠের ব্যক্তিত্ব নন, তার প্রভাব আর প্রেরণার সঙ্গে তুলনীয় কিছু আমরা বহুকাল দেখিনি। আজ যারা তরুণ, তাদের ওপর এবং আরও বেশি করে আজ যারা কিশোর, বছর পাঁচেক পরই যারা তরুণের খাতায় নাম লেখাবে, তাদের যৌথ মনস্তত্বে মাশরাফির নিশ্চয়ই একটা গভীর প্রভাব থাকবে। এই প্রভাব বহুক্ষেত্রে সচেতনভাবে যতটুকু অনুভব করা যায়, অচেতনে গোপনে গোপনে কাজ করে যায় অনেক বেশি।
মাশরাফিকে দেখা তরুণরা, কিশোররা নিশ্চয়ই তাদের আগের প্রজন্মের অধিকাংশের মতো আত্মসমর্পণকারী হবেন না। ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী, ভাড়াটে নেতা, ভাড়াটে সাংবাদিক, ভাড়াটে সাহিত্যিক এদের সকলের মুখে মুখে আশা রাখি তারা কথা বলতে শিখবেন, বলতে শিখবেন আমরাও পারি। সুন্দরবনকে ধ্বংস করা ঠেকিয়ে দেবেন তারা, তাদের প্রতিবাদের মুখে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে, তাদের রাজনৈতিক উত্থানে বাংলাদেশে একটা সত্যিকারের অসম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক গণমুখী শাসনব্যবস্থা কায়েম হবে।
মাশরাফি একজন খেলোয়াড় শুধু নন, তিনি মানুষের মাঝে এই আত্মবিশ্বাস আর গর্ব সঞ্চারিত করতে শিখিয়েছেন। মোসাহেবি তার চরিত্রে নেই, শেষ পর্যন্ত তার পরিচয়টি রেখেছেন। তার স্মৃতি আর ব্যক্তিত্বের প্রভাব বহুকাল অনুভূত হতে থাকবে। মাশরাফিদের মতো সাহসী ব্যক্তিত্ব আমাদের জীবনের সর্বত্র দরকার। সমাজচিন্তা-সাহিত্য-গবেষণা-চিকিৎসা-শিক্ষা-সাংবাদিকতা-রাজনীতি সবখানেই। জয়তু মাশরাফি।
লেখক: কেন্দ্রীয় সদস্য, গণসংহতি আন্দোলন