প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে কীভাবে
মুহাম্মদ মঈনুল হাসনাত
তিস্তা এবং প্রতিরক্ষা চুক্তি দুইটার মধ্যে আসলে তুলনা নেই। কারণ প্রতিরক্ষা চুক্তিতে ভারত বাংলাদেশকে যে ঋণ দিচ্ছে সেটাও বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আরেকটা ব্যাপার এখানে গুরুত্বপূর্ণ, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক উন্নয়ন হয়েছে, সেটা আমাদের জন্যই ভালো। সে জন্যই কিন্তু ভারত আরও বেশি এগিয়ে আসছে বাংলাদেশের দিকে। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। এখন চীন যেহেতু আমদের বড় একটা ব্যাকআপ দিয়েছে, এ জন্যই ভারত আরও বেশি এগোচ্ছে। যেহেতু চীন তাদের জন্য থ্রেট। চীনের সঙ্গে তাদের অনেক আগে থেকেই সম্পর্ক ভালো নয়। এ জন্যই ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করার জন্য এই সমঝোতা স্মরকের কথাটা সামনে এসেছে।
যদিও তিস্তার ব্যাপারে নরেদ্র মোদি খুবই ইতিবাচক। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের কথা চিন্তা করেই তিস্তা চুক্তির ব্যাপারটি এগোচ্ছে না। আমাদের সরকার তো অবশ্যই চেষ্টা করবে তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে। কারণ এটা আমাদের প্রাণের দাবি, তিস্তা চুক্তিটা যেন স্বাক্ষরিত হয়। সেটা নিয়ে অবশ্যই আলোচনা হবে। কিন্তু এই সফরে প্রতিরক্ষা বিষয়টিই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। এবং অন্যান্য যে সমঝোতাগুলো আছে সেগুলোই বেশি প্রাধান্য পাবে।
আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প চুক্তিটা আগেই স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তার কন্টিনিউশন ছিল তিস্তার পানি চুক্তি। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের ব্যাপারে খুবই ইতিবাচক। বিশেষ করে তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি ও পশ্চিমবঙ্গের কথা চিন্তা করে তারা এই বিষয়টা সামনে এগিয়ে নিতে পারছে না। কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সম্ভব হচ্ছে না। তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিও আমাদের দেখতে হবে। ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যদি তারা একত্র হতে পারে তাহলে আলটিমেটলি তিস্তার পানি চুক্তিটি হবে। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের কাছে এখন বিকল্প অপশন আছে। ভারতের বাইরে চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক উন্নয়ন হয়েছে। এখন কিন্তু আমরা ভারতকে হুমকি দিতে পারি বা শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে পারি যে, তোমরা যদি তিস্তা চুক্তিটা না করো তাহলে আমরা বিকল্প পছন্দ হিসেবে চীনকে আমাদের সঙ্গে নিয়ে আসতে পারি। বাংলাদেশের সামনে এখন পথ আছে। বাংলাদেশ এখন কথা বলতে পারে। ইচ্ছা করলে আলাপ-আলোচনাও করতে পারে। এটা আমাদের সামর্থ্য বাড়ার বড় প্রমাণ। আশা করছি, তিস্তাসহ যে সমস্ত সমস্যা দুই প্রতিবেশীর মধ্যে রয়েছে তা নিরসনে আন্তরিকতার প্রকাশ ঘটাবে দুই পক্ষই। বিশেষ করে ভারতে দুই দেশের মধ্যে যে সমস্ত সমস্যা আছে তা নিরসনে তারাই আগে এগিয়ে আসবে। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রাখার স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো তারা গ্রহণ করবে।
পরিচিতি: সহকারী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাবি
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান