কিনতে হবে ভারত থেকেই প্রতিরক্ষা খাতের ৫০ কোটি ডলার ঋণের পুরোটাই ব্যয় করতে হবে সহযোগিতা আর কেনাকাটায়
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: ভারতের তরফ থেকে সামরিক সরঞ্জামাদি কেনার জন্য বাংলাদেশ যে ৫০ কোটি ডলার অর্থ পাবে সেই অর্থ দিয়ে ভারত থেকে সরঞ্জামাদি কিনতে হবে। ভারত যদিও বলছে, সরঞ্জামাদি কেনার ব্যাপারে বাংলাদেশের চাহিদা প্রাধান্য দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ বলছে, সামরিক সরঞ্জামাদি কেনার জন্য অর্থ পেলেই ভারত থেকে সামরিক বাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় ও খুব গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামাদি কেনা যাবে না। কারণ ক্রাইসিসের সময়ে ভারতের কাছ থেকে কেনা সরঞ্জামাদি নষ্ট হলে তা নতুন করে প্রয়োজন হলে তারা সরবরাহ না করলে বাংলাদেশ সমস্যায় পড়বে। বিশেষ করে সামরিক বাহিনীর যেসব ট্রাক রয়েছে। ওই সব ট্রাকের সরঞ্জামাদি তারা সরবরাহ করতে চায়। ভারতের অশোক লে-ল্যান্ডের গাড়ি সরবরাহ করতে চায়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ওই গাড়ি ও ট্রাক দেওয়ার জন্য চেষ্টা অনেক দিন ধরেই চলছে। কিন্তু সেটা কেনা ঠিক হবে না। আগামী দিনের ও আগামী ২০৩০ সালের কথা বিবেচনা করেই সামরিক সরঞ্জামাদি কিনতে হবে। কারণ কোনো একটি ট্রাক নষ্ট হলে তা পার্টসের অভাবে ঠিক না করা গেলে সমস্যা হবে। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামাদি কেনা হলে তা নষ্ট হলে নিজেরা সাড়াতে পারবে নাকি তাদের লোকই লাগবে সেটারও বিষয় আছে। তেমন হলে প্রয়োজনের সময়ে লোক না পাওয়া গেলেও সমস্যা হবে।
এদিকে বিএনপিও ভারতের কাছ থেকে সমরাস্ত্র কেনার বিরোধী। তারা বলছে, ভারতের সমরাস্ত্র মানসম্মত নয়। তারা সামরিক সমঝোতা স্মারক-এর বিরোধিতা করছে। তারা বলছে, এতে করে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁিকতে পড়তে পারে।
বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর জন্য ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে ভারত। এই অর্থের পুরোটাই দেওয়া হবে প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি ও সামরিক সরঞ্জামাদি কেনার জন্য। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে শনিবার নয়াদিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউসে দুই প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে শীর্ষ বৈঠকে এ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়।
ভারতে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের সামরিক খাতের জন্য ৫শ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা ঘোষণা করেন। আর এরমধ্যে ৫০ কোটি ডলার প্রতিরক্ষা খাতের জন্য। তিনি আরও বলেন, প্রতিরক্ষা খাতে ঋণের কেনাকাটায় বাংলাদেশের চাহিদা প্রাধান্য পাবে।
প্রতিরক্ষা খাতের তিন সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষে সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) ও ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব স্বাক্ষর করেন। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতে যেসব সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে এরমধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা রূপরেখা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক।
ভারত ও বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে কৌশলগত ও ব্যবহারিক শিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য মিরপুরের ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ ও ভারতের তামিলনাডু রাজ্যের ওয়েলিংটনে (নিলগিরি) ডিফেন্স সার্ভিস স্টাফ কলেজের মধ্যে সমঝোতা স্মারক। জাতীয় নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও কৌশলগত শিক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য ঢাকার ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ ও নয়া দিল্লির ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি উগ্রবাদ ও চরমপন্থা থেকে জনগণকে রক্ষা করে সমৃদ্ধির লক্ষ্যে দুদেশের অংশীদারিত্বের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এগুলোর বিস্তার শুধু ভারতের ও বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো এই অঞ্চলের জন্য হুমকি তৈরি করেছে। আমাদের জনগণ ও এই অঞ্চলের শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন আমাদের সম্পর্কের কেন্দ্রে থাকবে বলে আমরা একমত হয়েছি। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার বিষয়ে চুক্তি সই করে আমরা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা ও সব ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম দমনে দুই দেশের মধ্যে দৃঢ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তাছাড়া তিনি এও জানিয়েছেন, ভারত-বাংলাদেশ সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অব্যাহত রাখবে।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির শীর্ষ বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এরমধ্যে চারটি চুক্তিপত্র বিনিময় হয়। এর আগে ২০১৫ সালের জুনে মোদির ঢাকা সফরে দুই দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল।