চমক থাকলেও শেখ হাসিনা নিজ সিদ্ধান্তেই অটল থাকলেন
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেষ পর্যন্ত তার সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন। আর ভারতকে বুঝিয়ে দিলেন এখন বাংলাদেশ এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কোনো চাপেই কাজ হবে না। এর আগে তিনি আন্তর্জাতিক বিশ্বকেও নির্বাচন করে ও ক্ষমতায় থেকে দেখিয়েছেন আন্তজার্তিক বিশ্ব বললেই বাংলাদেশ তাদের কথা শুনবে না এবং নতুন করে নির্বাচন দিবে না। বরং তিনি যা বলবেন এবং যেই সিদ্ধান্ত নিবেন সেটাই করবেন। আর ভারতের বেলাও তিনি তাই করলেন। প্রতিরক্ষা চুক্তি হচ্ছে কি, হচ্ছে না এ নিয়ে গতকাল দুপুর পর্যন্ত দিল্লি স্পষ্ট করেনি। তাদের ধারণা ছিল শেষ পর্যন্ত হয়তো শেখ হাসিনাও সামরিক চুক্তি করে ভারতকে চমক দিতে পারেন। কিন্তু তিনি কোনো ঝুঁকি নিতে চাননি এবং নেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে আগেই ঠিক করেন এবার চুক্তি হবে না। বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কোনো চুক্তি করা যাবে না। সহযোগিতা সম্প্রসারণে দু্টি সমঝোতা স্মারক সই করা হবে। সেই হিসাবে করেছেনও তাই। পররাষ্ট্রমন্ত্র্রী বলেছিলেন, ভারত সফরের সময়ে বাংলাদেশ ৩৫টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি হতে পারে। কিন্তু তা ৩৫ পর্যন্ত যায়নি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিমানবন্দরে এসে অভ্যর্থনা জানাবেন এটা কোনো সূচিতে ছিল না। এর আগে একবার এমন ঘটেছিল। তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে। বঙ্গবন্ধু ভারত সফরে যাওয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধী তাকে বিমানবন্দরে অর্ভ্যথনা জানান। ওই সময়ের পর আর কখনো কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাতে আসেননি। কারণ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এই অভ্যর্থনায় চমকিত শেখ হাসিনাও। তবে ভারত তাকে অনেক সম্মান দিয়েছে। সেই সঙ্গে আতিথেয়তারও কমতি ছিল না। এত কিছুর পরও শেখ হাসিনা তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন এবং থাকলেন। মোদির চমকে চমকিত হলেও সিদ্ধান্ত বদলালেন না।
সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত ছিল এবার তিনি কোনোভাবেই ভারতের সঙ্গে সামরিক চুক্তি কিংবা সামরিক সহযোগিতা করবেন না। ভারতের সঙ্গে চুক্তি তিনি এত তাড়াহুড়া করে করতে চাননি। তিনি এ ব্যাপারে আরও সময় নিতে চান। তিনি জানেন হুট করে সামিরক চুক্তি করা হলে তা বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর জন্য মেনে নেওয়া কঠিন হতে পারে। আর সেই রকম হলে আগামী দিনের জন্য বিষয়টির ফল ভালো নাও হতে পারে। তাছাড়া চীনের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা চুক্তি আছে বলে ভারতের সঙ্গে এখনই তা করতে হবে তাও মনে করছেন না। তিনি ভিশন ২০২১ ও ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়ন করতে চাইছেন। এজন্য চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে সামরিক বাহিনীর জন্য অস্ত্র, সরঞ্জামাদি ও সামরিক বাহন কিনছেন। চীনও সহযোগিতা করছে। তিনি ভারতের কাছ থেকে এখন এই সব কিনতে চাইছেন না। কারণ সামরিক বাহিনীকে আধুনিক বাহিনীতে রূপান্তরিত ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হলে চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে আরও অস্ত্র ও সামরিক বাহন কিনতে হবে। তাছাড়া সামরিক বাহিনীর জন্য অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি ও বাহন কেনা হলে আগামীতে কখনও যদি সমস্যা তৈরি হয় সেই ক্ষেত্রে ভারত যদি জরুরি অবস্থায় যন্ত্রপাতি এবং প্রয়োজনীয় গোলাবারুদ ও অস্ত্র সরবরাহ না করে সেক্ষেত্রে সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ। এছাড়া আরও বিভিন্ন দিক বিবেচনা করছেন তিনি।
সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা সামরিক চুক্তি করার আগে বিষয়টি নিয়ে আরও পর্যালোচনা এবং এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলতে চান। এই ক্ষেত্রে তিনি তাদের মতামতও গুরুত্ব দিতে চান। সেই সঙ্গে দেশের জনমতও দেখতে চান। পাশাপাশি এখন এই ধরনের চুক্তি করে বিএনপিকে আন্দোলন করার কোনো সুযোগ দিতে চাননি। এই কারণে তিনি তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলছেন। তিনি ভারত যাওয়ার আগে স্পষ্ট করেই একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, তাকে দিয়ে দেশের স্বার্থের বাইরে কোনো কাজ করানো যাবে না।
সূত্র জানায়, সামরিক সহযোগিতা চুক্তি করতে রাজি না হওয়ায় এবং ভারত তিস্তার সমস্যার সমাধান না করায় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর কয়েকবার পিছিয়ে যায়। তারপরও তিনি সমঝোতা স্মারকের অবস্থানেই থাকেন। সেই অনুযায়ী অবশেষে দুটি সামরিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়।
এদিকে ভারতের শ্রীপ্রিয় রঙ্গনাথন গণমাধ্যমকে জানান, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে দুটি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর হবে। চলতি সামরিক সহযোগিতাগুলোকে একটি ছাতার তলায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে থাকা বিষয়গুলো সামগ্রিক ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে সাবমেরিন প্রশিক্ষণ, তথ্য সহযোগিতা, সেনাপ্রধান পর্যায়ে আদান-প্রদানসহ আরও বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। ভারত বাংলাদেশকে সেদেশ থেকে সমরাস্ত্র এবং সামরিক প্রযুক্তি কেনার জন্য ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিবে। তার এই ঘোষণার মধ্য দিয়েই স্পষ্ট হয়ে যায় যে চুক্তি হবে না। বরং তিনি সামরিক চুক্তি হওয়ার আগে তিস্তা ও অন্যান্য যেসব অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে সেগুলোর সমাধান চান। সম্পাদনা: গিয়াস উদ্দিন আহমেদ