আবার মাঠে ফেরার স্বপ্ন দেখেন ক্রিকেটার রবিউল
রিকু আমির: দীর্ঘসময় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) থেকে সাধারণ শয্যায় ফিরতে পেরেছেন তরুণ ক্রিকেটার রবিউল আলম। এখন তিনি কথা বলতে পারেন, নিজ হাতে খেতে পারেন, আনন্দ-দুঃখ প্রকাশ করতে পারছেন। জীর্ণ-শীর্ণ দেহ নিয়ে শয্যায় শুয়ে শুয়ে মাঝে মধ্যে প্রাণপ্রিয় খেলা ক্রিকেটের কথা স্মরণ করছেন আর দুচোখ ভেজাচ্ছেন। আইসিইউ থেকে ফিরলেও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার সন্তান রবিউল এখন স্বপ্ন দেখছেন পূর্বের মতো ভরা যৌবন নিয়ে ক্রিকেটের মাঠে ফিরতে। অনুশীলনের সময় গতবছরের আগস্ট মাসে তরুণ ক্রিকেটার এই রবিউল অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপরই প্রথমে দুই কিডনি বিকল ও পরে ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ ধরা পড়ে। যা নিয়ে ঢাকার কিছু হাসপাতাল হয়ে ভারত, তারপর আবারও ঢাকায় ফিরে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হচ্ছে তাকে। তার পরিবারের এ চিকিৎসা ব্যয়ভার বহনের সাধ্য না থাকলেও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রাপ্ত সহযোগিতায় এখনো রবিউলের হৃদপি- সচল রাখতে পেরেছে। কিন্তু সহযোগিতা আরও প্রয়োজন। রবিউল শ্যামলী রিং রোডে একটি ভাড়া বাসায় থেকে ঢাকা সেন্ট্রাল হাসপাতালের কিডনি বিভাগের অধীনে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন।
তার বড় ভাই আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এতটুকু যে ওর উন্নতি হবে, এটা ভাবিনি। সামর্থ্যবানদের সহযোগিতা না পেলে ভাইটার এ উন্নতি দেখতে পারতাম না। ৬ ফুট ১ ইঞ্চি উচ্চতার সুঠাম দেহী রবিউলের দেহ এতটাই ভেঙে পড়েছে, কেউ স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাসই করবে না। হাড্ডিসার দেহ নিয়ে শুয়ে থাকা রবিউলকে খেলার বিষয়ে প্রশ্ন করলে রবিউলের দুচোখ ভিজে আসে। তখন জাহাঙ্গীর আলম টিস্যু পেপার দিয়ে রবিউলের দুচোখ মুছে দিয়ে বলেন, জীবনে বড় হবার অনেক রাস্তা আছে। শুধু ক্রিকেটের কথা ভাবলে চলবে না।
গত ৪ এপ্রিল ঢাকা সেন্ট্রাল হাসপাতালের আইসিইউ থেকে মুক্তি পাবার পর চিকিৎসকরা পরামর্শ অনুযায়ী তাকে পারিবারিক পরিবেশে রাখা হয়। ঢাকায় নিজস্ব বাসা না থাকায় ভাড়া বাসা নিতে হয়েছে। সেটাও বেশ ব্যয়সাপেক্ষ।
জাহাঙ্গীর বলেন, চিকিৎসকরা বলেছিলেন কেবিনে নিতে। আমরা দুতিনজন সবসময় ওর সেবায় ঢাকা থাকি। কেবিনে একসঙ্গে সবার থাকা সম্ভব না। তাই কষ্ট করে হলেও ভাড়া বাসা নিলাম। এতে পারিবারিক পরিম-ল তৈরি হলো, যা রবিউলের জন্য উপকারিই হবে।
৬ এপ্রিল রাতে এ প্রতিবেদক যখন রবিউলের শয্যা পাশে যায়, তখন রবিউল বাংলাদেশ ও শ্রীলংঙ্কা মধ্যকার খেলা দেখছিলেন মেজো ভাই আলমগীরের স্মার্ট ফোনে। প্রশ্নের উত্তরে শুয়ে থাকা রবিউল বলেন, বুঝতে পারি খেলা। প্রবল আত্মবিশ্বাসী রবিউল বলেন, ছিলাম তো মৃত্যুর মুখে, আইসিইউতে। সেখান থেকে ফিরতে পারছি সবার দোয়ায়। আমার মন বলছে, আমি সুস্থ হব, খেলতে পারব।
২০১৫ সালে কুমিল্লা জেলা প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন রবিউল। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ‘মানিগ্রাম পেসার হান্টে’ কুমিল্লা অঞ্চলের সেরা বোলারও তিনি। বিপিএলের দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসে খেলতে ট্রায়াল দিয়ে ভালো করেছেন। অসুস্থতার আগ পর্যন্ত তিনি কুমিল্লার ট্যালেন্ট হান্ট ক্রিকেট একাডেমিতে নিয়মিত খেলতেন। এ একাডেমি পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের বলে জানান রবিউলের ভাই জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, ও যখন ভাল পারফর্ম করা শুরু করছিল, ওর নাম চারদিকে ছড়িয়ে যখন পরিচিতি লাভ করছিল, তখনই এ ধাক্কা আসলো। এটা আমাকে ভীষণ কষ্ট দেয়। ৬ ফুট ১ ইঞ্চি উচ্চতার ভাইটা আমার আজকে কীভাবে বিছানায় শুয়ে আছে। বলতে বলতে গলা ধরে আসে জাহাঙ্গীরের।
তিনি বলেন, ভারতের ভোলোর হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন কিডনি প্রতিস্থাপন করতে। ডোনার খুঁজতে ও অর্থ যোগাড় করতে। ততদিন দেশে রেখে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে। সেটাই করা হচ্ছে। আসলে প্রচুর অর্থ দরকার। নিজেদের সহায়-সম্পত্তি বিক্রয় লব্ধ অর্থ, আত্মীয়-স্বজন থেকে প্রাপ্ত অর্থ, ধারদেনা ও দান-অনুদান থেকে প্রাপ্ত অর্থ মিলিয়ে এ পর্যন্ত রবিউলের পেছনে প্রায় ২৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়ে গেছে জানিয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, আমার জান থাকতে ওর জন্য সব ধরনের চেষ্টা করে যাব। জানেন, কীভাবে যে এই টাকা ম্যানেজ হয়েছে, আমি হিসাব করে মেলাতে পারি না। যাই হোক, নিয়ত করেছি, কাজ করেছি, পাচ্ছি। চিকিৎসকরা ওর কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের পরামর্শ দিয়েছে। সেই প্রস্তুতির দিকে এগুচ্ছি। কিন্তু আরও বিপুল পরিমাণ অর্থ দরকার। তিনি সামর্থ্যবানদের প্রতি রবিউলকে সহায়তার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। রবিউলকে সহায়তা করা যাবে জাহাঙ্গীরের বিকাশ নম্বর ০১৭২৬৮৪২৪৯৭ অথবা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, অ্যাকাউন্ট নম্বর ১৯৪১০১০০৮১২৩১, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটিডে, কুমিল্লার ঝাউতলা শাখায়। আরও কিছু জানতে যোগাযোগ করতে পারেন- ০১৬৭০১০৫৩১১। সম্পাদনা: গিয়াস উদ্দিন আহমেদ