বিশ্বকাপ জয়ের সামর্থ্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ?
এস আর আলিফ
‘বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নতি করছে। যথেষ্ট প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে বাংলাদেশের। আমি বিশ্বাস করি, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিততে পারে। কারণ ওই আসরটি এই উপমহাদেশে হবে।’ বক্তা শ্রীলঙ্কার ’৯৬ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গার। বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতিতে নিজেদের অবদানও দেখেন রানাতুঙ্গা, ‘আশির দশকের শেষ দিকে অনেক শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার ঢাকার ক্লাবগুলোতে খেলত। বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতিতে অবশ্যই লঙ্কান ক্রিকেটের অবদান আছে।’ একদিন বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতবে এমন আশাবাদ, বক্তব্য, মন্তব্য এর আগে অনেকেই করেছেন। স্বপক্ষে দিয়েছেন নানা যুক্তি। সবার চেয়ে রানাতুঙ্গার মন্তব্যই সবেচেয় গুরুত্বপূর্ণ ধরা হচ্ছে। কারণ রানাতুঙ্গা এমন একজন মানুষ যা বিশ্বাস করেন তাই বলেন। তার ক্রিকেট জ্ঞান নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। তিনি যা বলেন বুঝে শুনে বলেন। তাই তার বক্তব্যে গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছে সবাই।
বাংলাদেশ দলের বর্তমান পারফরমেন্স, প্রতিভাবান ক্রিকেটার থাকার যে কথা তিনি বলছেন তা শুধু বলার জন্যই বলা? না। কারণ একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে তার কথার যুক্তিকতা। বর্তমান বাংলাদেশ দলটি অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের সমন্বয়ে গড়া। একদিকে অভিজ্ঞতা দিয়ে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সামর্থ্য সমৃদ্ধ, অন্যদিকে প্রতিভাবান তারুণ্য দলকে উড়তে সহযোগিতা করছে। বাংলাদেশ তো একরকম উড়ছেই। পারফরমেন্স দিয়েই ক্রিকেট বিশ্বে নিজেদের সামর্থ্যরে প্রমাণ রাখছে প্রতিনিয়তই। সৌম্য সরকারÑ তরুণ একজন ক্রিকেটার। কিন্তু তার প্রতিভায় মুগ্ধ না হওয়া মানুষ কি পাওয়া যাবে। যখন ছন্দে থাকে কী অসাধারণ খেলাটাই না খেলে সে। ক্রিকেটবিশ্বে সৌম্যের মতো কয়টা খেলোয়াড় আর আছে? তামিম ইকবাল তো দেখাচ্ছেন তার ক্যারিয়ার সেরা পারফরমেন্স। ২০০৭ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে জহির খান ডাউন দ্য উইকেটে এসে যে ওভার বাউন্ডারি মেরেছিলেন তা এখনো ক্রিকেটমোদীদের চোখের সামনে ভাসে। সেই তামিম এখন অনেক পরিণত। অনেক সমৃদ্ধ। সাকিব আল হাসান। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। এ আচানক ঘটনা। একই সঙ্গে একটি খেলার একজন খেলোয়াড় তিনটি ফরম্যাটেই বিশ্বসেরা। সহজ কথা নয়। পরিণত সাকিব এখন দলের প্রাণভোমরা। এই আরেকটি সাকিব বিশ্বের কোন দলে আছে? মুশফিক তো বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। মাহমুুদুল্লাহ তো তার সামর্থ্যরে প্রমাণ দিয়েছেন ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে। তরুণ সাব্বির আর মোসাদ্দেক তো এখন গেম চেঞ্জার। অত্যন্ত আকর্ষণীয় ক্রিকেট তারা খেলেন। দুজনের ব্যাটিংয়ের ধরণ প্রায় একই। ক্যাপ্টেন মাশরাফি সামর্থ্যরে প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়তই। তার নেতৃত্বেই তো বাংলাদেশ আজ আকাশ ছুঁতে চায়। পরাজয়ে ডরে না বীরÑ এই নীতিতে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় করে দল। মেহেদী হাসান মিরাজÑ অনেকেই তার মধ্যে আরেকজন সাকিব আল হাসানের ছায়া দেখেন। তিনি কী করতে পারেন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজেই তো দেখিয়েছেন। এর আগে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেই প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। প্রতিনিয়তই তিনি উন্নত করছেন। ভালো করছেন। আর ক্রিকেট বিশ্বের বিস্ময় কাটার মাস্টার, ‘দ্য ফিজ’- যে দলে থাকে সে দল তো এমনিতেই অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে। দলে তিনি থাকা মানেই প্রতিপক্ষের চেয়ে এগিয়ে থাকা। মোস্তাফিজই আগামী দিনের বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাফল্যের বড় অবদান রাখবেন।
ব্যাটিং, বোলিং গভীরতায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বের যেকোনো শক্তিধর ক্রিকেট দেশের তুলনায় পিছিয়ে নেই। সামনের কাতারেই তাদের অবস্থান। তারা প্রতিটি সিরিজেই সামর্থ্যরে প্রমাণ রাখছে। সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সফরে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে এসেছে বাংলাদেশ। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিÑ তিন ফরম্যাটেই সিরিজ ড্র করেছে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে তাদের বিরুদ্ধে এমন উজ্জল পারফরমেন্স বিশ্বজয়ের আশা করতেই পারেন ক্রিকেটমোদীরা। শ্রীলঙ্কার যে দলটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দুর্দান্ত পারফরমেন্স শো করল, সেই দলটি অত্যন্ত প্রতাপশালী টিম অস্ট্রেলিয়াকে টেস্টে হোয়াইটওয়াশ করেছিল। রানাতুঙ্গা যে অমূলক কিছু বলেননিÑ সময়ই প্রমাণ করবে।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী/সম্পাদনা: আশিক রহমান