ভারত আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু, কীভাবে
সাজ্জাদ হোসেন সজীব
ভারত বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধুই নয়, পরীক্ষিত বন্ধুও বটে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার যথার্থ প্রমাণ হয়েছে। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সরকার শুধু বাংলাদেশকে সমর্থনই দেননি, লাখ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয়, খাবার ও অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে ভারতীয় সৈন্যরা পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে ভূমিকা রেখেছেন।
আবার যখন যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে এদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন তখন ইন্দিরা গান্ধী বিলম্ব না করে শেখ মুজিবের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সঙ্গে সঙ্গে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিলেন। ইন্দিরা গান্ধী হলেন ইতিহাসের মহিয়সী নারী। বাঙালি জাতির প্রতি ইন্দিরা গান্ধীর দরদ, মায়া, ভালোবাসা, সম্মান ও সহযোগিতার কথা কখনো ভুলতে পারবে না।
বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার কন্যা শেখ হাসিনা স্থল সীমান্ত চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র উপহার দিলেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ও ভারত মোদির সরকারের সঙ্গেও উজ্জ্বল সম্পর্ক বিদ্যমান আছে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দলের প্রধান খালেদা জিয়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিরূপ মন্তব্য করে গেছেন। নরেন্দ্র মোদি স্পষ্টই খালেদা জিয়াকে বলেছেন, ভারত গণতন্ত্র চায়; কিন্তু মৌলবাদ, সন্ত্রাস কিংবা জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না। এ বক্তব্য শুধু খালেদা জিয়া নয়, সব জঙ্গিগোষ্ঠী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে একটি সুস্পষ্ট বার্তা।
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিরূপ পরিস্থিতির পরিবর্তন শুরু হয়। শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে আবারও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সৃষ্টি করতে সক্ষম হন। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেছিলেন বলেই আলোচনার মাধ্যমে ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি হয়েছিল। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবারও ভারতের সঙ্গে গড়ে ওঠা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে আঘাত আসে। একের পর এক ভারতবিরোধী নেতিবাচক কর্মকা- এবং সেই দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশের মাটিতে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে তৎকালীন সরকার থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটিগুলো শুধু গুঁড়িয়েই দেননি, বাংলাদেশের মাটিতে লুকিয়ে থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দেশ থেকে বিতাড়ন করেছেন। অনেক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে ধরে ভারতের কাছে হস্তান্তরও করা হয়েছে। এর ফলে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে উন্নতর হয়েছে। সামনের দিনে দুই দেশ একে অপরের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবে। সম্মানজনক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে বলেই মনে করি।
লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা/সম্পাদনা: আশিক রহমান