আমরা গর্বিত, একজন শেখ হাসিনা আমাদের রাষ্ট্রনায়ক
ড. বদরুল হাসান কচি
নানান শ্রেণিপেশার মানুষ নানান দৃষ্টিকোণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে সমীকরণ খোঁজার চেষ্টা করছেন। সমীকরণের বাইরে সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে এ সফরের কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় আছে যা সাধারণের মনে দাগ কেটেছে, সেটাই একটু আলোকপাত করছি। কথা ছিল প্রটোকল মেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পালাম বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন ভারতের ভারি শিল্প, পাবলিক অ্যান্ড এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। কিন্তু আন্তরিকতায় প্রটোকল ভাঙলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি নিজেই বিমানবন্দরে হাজির হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান। আর তিনি বিমানন্দরে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাতে যান কোনো প্রটোকল ছাড়াই। এখানেই শেষ নয়। শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানানোর পর তিনি তার উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেননি। তিনি অভ্যর্থনা জানানোর ছবিসহ পরপর দুটি টুইট করেন। প্রথম টুইটে মোদি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরে অভ্যর্থনা জানাতে পেরে আমি আনন্দিত।’ আর প্রায় একই সময়ে পরের টুইটে মোদি বলেন, ‘আমি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবস্থান করছেন ভারতের রাষ্ট্রপতিভবনে। এ-ও এক বিরল সম্মান বটে। শেখ হাসিনার সম্মানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ছুটে গেছেন নয়াদিল্লিতে। সব মিলিয়ে এক অভূতপূর্ব বন্ধুত্বের উদাহরণ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর উপলক্ষে নেওয়া যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ভারত ভাই-ভাই। মোদি একইভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের যে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটেছে তার কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া শেখ হাসিনার নেওয়া পদক্ষেপের কারণেই বাংলার যে উন্নয়ন তা সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে, শান্তি, স্থিতিশীলতাপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনার সাহসী ভূমিকারও প্রশংসা করেন নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে শেখ হাসিনার দৃঢ় অবস্থান ও ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
যৌথ ঘোষণায় আরও জানানো হয়, দুই প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়, তার নিন্দা করেন এবং উভয়ই আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি এই আহ্বান জানান যাতে ২৫ মার্চকে একটি আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবেই পালন করা হয়। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের যে ১৬৬১ জন সশস্ত্র সেনা শহীদ হয়েছেন তাদের সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে তাদের পরিবারের হাতে যে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়েছে তাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এ উদ্যোগ প্রত্যেক ভারতীয়ের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। পাশাপাশি নরেদ্র মোদি ঘোষণা করেন, ‘বাংলাদেশের সব মুক্তিযোদ্ধার জন্য পাঁচ বছরের করে ভিসা দেওয়া হবে। প্রতি বছর ১০০ জন করে মুক্তিযোদ্ধা বিনা খরচে ভারতে চিকিৎসা পাবেন। এছাড়া তাদের সন্তানদের বৃত্তি দেওয়া হবে; বৃত্তির আওতায় পড়বেন ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।’ এমন ঘোষণা বাংলাদেশের সকল মুক্তিযোদ্ধা তো বটেই, এটা সকল বাংলাদেশিদের জন্য সম্মান ও আনন্দের।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক অমীমাংসিত ইস্যুর মীমাংসা হয়েছে। যেমনÑ ছিটমহল ইস্যুসহ নানা ইস্যুর শান্তিপূর্ণ মীমাংসা। বাদবাকিগুলোর মীমাংসার পথও উজ্জ্বল। এ সফরে আলোচনার কেদ্রবিন্দু ছিল তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ইস্যু। এ বিষয়টিও নরেদ্র মোদি স্পষ্ট করেছেন; তিনি বলেছেন, ‘আমাদের প্রতিশ্রুতি এবং অব্যাহত প্রচেষ্টা সম্পর্কে আমি আপনাকে (শেখ হাসিনা) এবং বাংলাদেশের জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই। আমার ও আপনার সরকারই তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধানে পৌঁছতে পারবে।’
সফরে দুই প্রধানমন্ত্রী এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক যে ইতিহাস, সংস্কৃতি আর ভাষা দিয়ে গাঁথা তা আরও দৃঢ়তার দিকে যাবে। কারণ দুই দেশ একই অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ দিয়ে পরিচালিত। সবশেষে একটি কথাই বলব, এবারের এ সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদির বডি ল্যাংগুয়েজই বলে দিচ্ছে বাংলাদেশ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তাদের কাছে। বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদি বক্তব্যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সার্বিক যে প্রশংসা করেছেন সেটি আমাদের জন্য বিশাল গৌরবের।
এ সফরে শেখ হাসিনাকে কতটুকু সম্মান দেখিয়েছেন সেটি ভারতের উপহারই প্রমাণ করে। আমরা দেখেছি একই সময়, নয়াদিল্লির পার্ক স্ট্রিটের নাম বদল করে রাখা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরণি’। কে না স্বীকার করবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া এ উপহার গোটা বাংলাদেশের জনগণের জন্য উপহার। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মানিত করা মানেই বাঙালি জাতিকে সম্মানিত করা। আমরা ভারতের কাছে আবারও কৃতজ্ঞ।
লেখক: আইনজীবী ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান