আগামী বছরের ২৫ মে হতে পারে হাসিনার সঙ্গে বৈঠক মোদির বাংলাদেশ সফরেই তিস্তা চুক্তি!
তিস্তা বিষয়ে দিল্লিতে দুই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় আশাবাদ বিশেষজ্ঞদের
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আলোচ্যসূচিতে বিষয়টি উল্লেখ না থাকলেও যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দুই প্রধানমন্ত্রী তিস্তার বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। গত শনিবার নয়াদিল্লিতে শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দেশের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিস্তা এই দুই প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদে হবে বলেই দৃঢ় ঘোষণা দেন। জানা গেছে, গত শনিবার দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউজে দুই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বৈঠকে শেখ হাসিনা দু’দেশের মধ্যে তিস্তা নিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির অনুরোধ জানান। এছাড়া তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরেরও আমন্ত্রণ জানান। মোদি সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন এবং তিনি বলেছেন, আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাসে সুবিধাজনক সময়ে তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকেও আমন্ত্রণ জানান।
জানা গেছে, আগামী বছরের মে মাসে মোদি বাংলাদেশ সফরে আসবেন এবং ২৫মে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই বৈঠকেই তিস্তার চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে।
হাসিনা-মোদির এই ঘোষণায় বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে চলমান অস্বস্তি অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছর। আর ভারতের মোদি সরকারের মেয়াদ শেষ হবে ২০১৯ সালের মে মাসে। কাজেই হাসিনা সরকারের মেয়াদে চুক্তি হলে অবশ্যই তা হবে ২০১৮ সালের মধ্যে। তারা বলেন, এই ঘোষণায় দেশের জনগণের আস্থা ফিরে এসেছে। দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান যখন এক মঞ্চ থেকে কোনো ঘোষণা দেবেন, তখন এই চুক্তি হওয়ার ক্ষেত্রে খুব বেশি শঙ্কা আর থাকার কথা নয়।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং কূটনৈতিক বিশ্লেষক শাহীদুজ্জামান বলেন, এই সফর নিয়ে অনেক বিতর্ক করতে পারেন কেউ কেউ। তবে আমি বলবো এই সফর দুই দেশের সম্পর্কের মাত্রা নতুন জায়গায় নিয়ে গেছে। এছাড়া তিস্তা নিয়ে যে স্থবিরতা এবং দমবন্ধ অবস্থা তৈরি হয়েছিল তাও কেটে গেছে। তবে মোদির এই ঘোষণার বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারকে এ নিয়ে চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়া ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে যে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে সেটিও দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাবির অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এই সফরটি কূটনৈতিকভাবে সফল হয়েছে। তিস্তার বিষয়ে মোদির ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য স্বস্তি নিয়ে এসেছে। আশা করা যাচ্ছে, যৌথ সংবাদ সম্মেলনে হাসিনা-মোদি যে ঘোষণা দিয়েছেন তিস্তার পানি বন্টনে তাতে ধরা যায় আগামী এক বছরের মধ্যেই তিস্তা চুক্তি হবে।
উল্লেখ্য, নরেন্দ্র মোদি তার বক্তৃতায় বলেছেন, আমার এবং শেখ হাসিনার সরকারই শুধু পারবে এই চুক্তি করতে-আর সেটা হবে আমাদের সরকারের মেয়াদের মধ্যেই। মমতা ব্যানার্জি দিল্লিতে এসেছেন, বাংলাদেশকে তিনিও ভালবাসেন এবং অচিরেই তিনি তিস্তা চুক্তিতে রাজিও হবেন, সেটা শুধু সময়ের অপেক্ষা।
নয়াদিল্লির একটি কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, তিস্তা বিষয়ে শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগেই দিল্লি বার্তা পাঠিয়েছে, এই সফরে না হলেও ২০১৯ সালে বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের আগেই তিস্তা চুক্তি হবে। এ বিষয়ে একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করবে। এর মধ্যে ভারত সরকার পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির অভিন্ন নদী সংযোগ থাকা সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোর কাছে তিস্তার খসড়া পাঠাবে। মমতাসহ রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেই তিস্তা সমস্যার সমাধান করা হবে।
জানা গেছে, শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগেই আগামী বছরের মে মাসে নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে আলোচনা হয়। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, মোদির সফরেই তিস্তা চূড়ান্তরূপ পাবে। মোদি সরকারের এই আশ্বাসেই শেখ হাসিনা ভারত সফরে রাজি হয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছরের মে মাসে মোদি বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন। ২৫ মে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীসহ আরো কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা থাকবেন। সেইদিনই চুক্তিটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে না কোন কোন চুক্তি হবে। তবে এটা বলা যায়, তিস্তা চুক্তির বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে আপত্তি নেই। এর আগেও তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদও শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই সরকারই তিস্তা চুক্তি করতে পারবে। হাসিনা সরকারই চুক্তি করতে পারবে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও সফরের আগে আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিষয় এবং অমীমাংসিত বিষয়ের সমাধান হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারই করতে পারবে।
পশ্চিমবঙ্গের কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই দেশটির গণমাধ্যমগুলোতে আলোচনা চলছে। মমতার সঙ্গে তিস্তার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের আলোচনা চূড়ান্ত হয়নি বলে তিনি গণমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মমতা বলেছেন, বাংলাদেশকে তিনি ভালোবাসেন। তবে দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো কাজ তিনি করবেন না। তিস্তা নিয়ে তার আপত্তি নেই, তবে আলোচনা করে সমাধান করার কথা বলেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের পর গোটা চুক্তির খসড়া প্ল্যানটির প্রতিপাদ্যও রাজ্যকে পাঠানো হবে। সম্পাদনা: গিয়াস উদ্দিন আহমেদ