যারা দেশ বিক্রির কথা বলেন তারা অর্বাচীন অথবা অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে : শেখ হাসিনা
ডেস্ক রিপোর্ট: ভারতের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে সরকার দেশ বিক্রি করে দিয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা দেশ বিক্রির কথা বলেন, তাদের অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে, তারা অর্বাচীন। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমার এই সফরে আমি দিয়ে গেলাম না নিয়ে গেলাম তা আপনারাই দেখছেন। খবর: বাসস ও বিভিন্ন গণমাধ্যম।
গতকাল নয়াদিল্লির হোটেল তাজ প্যালেসে ভারত-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসি) এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের বলেন, আপনারা বলুন, আমরা দেশ বেচে দিলাম নাকি কিছু অর্জন করে ফিরছি। এই অঞ্চলের জনগণের জীবন ও জীবনযাত্রার উন্নয়নে বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ করার জন্য ভারতের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এমন একটি উদ্ভাবনী ও বাস্তবভিত্তিক অর্থনীতি বিনির্মাণ করা, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। আমি নিশ্চিত আমরা একত্রে এই অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবনমানের পরিবর্তন আনতে পারবো।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল দেশ। এ দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং একসাথে উন্নয়নের লক্ষ্যে ভারতের সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশের চমৎকার সম্পর্ক।
তিনি বলেন, আপনারা ধনী। এজন্য আমি বাংলাদেশে আপনাদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাই। ভারতের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বেশি মুনাফা সাশ্রয়ী ব্যয় ও বিপুলসংখ্যক ভোক্তা সুযোগ নিতে পারে।
আপনাদের বিনিয়োগের সুরক্ষায় আমাদের রয়েছে ইন্দো-বাংলা বিনিয়োগ চুক্তি। এতে রয়েছে শতভাগ মুনাফা ও পুঁজি ফেরত নেয়ার আকর্ষণীয় প্যাকেজ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে ইইউ, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাসহ বিশ্বে ৩৮টি দেশ থেকে জিএসপি সুবিধা পায়।
শেখ হাসিনা ভারতের ব্যবসায়ীদের বলেন, আপনারাও চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও চিলির মতো দেশগুলো থেকে বাংলাদেশকে দেয়া শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধার সুযোগ নিতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্পায়ন ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ ১শ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে। এর মধ্যে মংলা, ভেড়ামারা ও মীরসরাই বিশেষভাবে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে, যার বিরোধিতা করে আসছে বিএনপি।
ওই সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে ইংগিত করে রোববার রাতে আইনজীবীদের এক অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, আরও পাঁচ বছর ‘ক্ষমতায় থাকার জন্য’ বর্তমান সরকার ‘দেশ বিক্রির চুক্তি’ করেছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন গোদরেজ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি আদি গোদরেজ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের জ্বালানি ও প্রাকৃতিক গ্যাস প্রতিমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। অন্যদের মধ্যে ভারতের অ্যাসোসিয়েটেড চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (অ্যাসোচ্যাম) প্রেসিডেন্ট সন্দীপ জাযোদিয়া, এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এফআইসিসিআই এর সাবেক প্রেসিডেন্ট হর্ষ মারিওয়ালা। সম্পাদনা: এনামুল হক