পহেলা বৈশাখ এক সার্বজনীন উৎসব
সৈয়দ হাসান ইমাম
পহেলা বৈশাখ বর্তমানে আমাদের প্রধান উৎসব হয়ে গেছে। আগে ছিল ব্যবসায়ীদের একটা হালখাতার দিন এবং এই দিনে গ্রামে গ্রামীণ মেলা হতো। এখন নাগরিক জীবনেও আমরা এটাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি ছায়নটের মাধ্যমে। এখন শুধুমাত্র ছায়ানট নয়, অনেক সাংস্কৃতিক পরিষদ এই উদযাপন পালন করে। দেশের সমস্ত টিভি চ্যানেলে অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। দৈনিকগুলোতে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এখন এটা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রধান উৎসব হয়ে গেছে। সব ধর্ম বর্ণের মানুষ, সব শ্রেণিপেশার মানুষ এই দিনে আমরা মিলিত হই। ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো যেমন ঈদ, পূজা, বড়দিনেÑ যার যার ধর্মের মানুষ অংশগ্রহণ করে। কিন্তু পহেলা বৈশাখে সব শ্রেণির মানুষ একসঙ্গে মিলিত হয়। এটা আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসব হিসেবে পরিচিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পরে, বিশেষ করে এটা আরও ব্যাপক হয়েছে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই আমরা বাঙালি জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের উপাদান হচ্ছে ভাষা এবং বাঙালি সংস্কৃতি। মঙ্গল শোভাযাত্রা আমরাই শুরু করেছিলাম আর্ট কলেজের ছাত্ররা মিলিতভাবে। আর্ট কলেজের ছাত্ররা বিভিন্ন ধরনের মুখোশ, পাখি আরও অনকে ধরনের জিনিস তৈরি করত। আমরাই শুরু করেছিলাম এবং আমাদের খুব ভালো লাগে যে, এখন সেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। চীনের বছরের প্রথম দিনে তারা এটা করে বিভিন্ন ধরনের ড্রাগন এর মূর্তি নিয়ে আমরা আমাদের মতো পাখি, মুখোশ, বাঘ, ময়ূর নানা রকম জিনিস বানিয়ে শোভাযাত্রা করে থাকে। এইদিনে ছেলেমেয়েরা নতুন নতুন জামা-কাপড় পরে। মেয়েরা বাসন্তি রঙ বা পহেলা বৈশাখের শাড়ি লাল সাদা শাড়ি, ছেলেরা পাঞ্জাবি পরে। এই দিনে বাঙালি জীবনে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এখন এটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা দরিদ্র দেশ কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি এখন সারাবিশ্বের সংস্কৃতির একটা অংশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ইতোপূর্বে বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এখন পহেলা বৈশাখ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে এটা আমাদের অনেক বড় পাওয়া বলে আমি মনে করি। আমরা মানুষ হয়েছি সংস্কৃতির মাধ্যমেই। আদিম মানুষের কোনো সংস্কৃতি ছিল না, কোনো ভাষা ছিল না তারা আদিম জন্তুর মতো জীবনযাপন করত। আজকের যে আধুনিক মানুষ সেটা তৈরি হয়েছে সংস্কৃতির মাধ্যমেই। সংস্কৃতি আমাদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কৃতি একটি শক্তি। এই শক্তির ভালো ব্যবহার হতে পারে আবার পাশাপাশি অপব্যবহার হতে পারে। আমাদের অপসংস্কৃতি পরিহার করতে হবে। কারণ অপসংস্কৃতি আমাদের মাঝে আদিম প্রবৃত্তি জাগিয়ে তোলে। আর আমাদের সুষ্ঠু সংস্কৃতি মানুষের মাঝে কোমলতা জাগ্রত করে। মানুষের মাঝে এই কোমলতা থাকলে মানুষ আর হিংস্র হবে না মানুষ আর সন্ত্রাসী হবে না। মানুষ আর মাদকাসক্ত হবে না তারা সুন্দর মানুষ হবে। অতএব আমাদের সুষ্ঠু সংস্কৃতি গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং অপসংস্কৃতি পরিহার করা প্রয়োজন।
পরিচিতি: সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি/সম্পাদনা: আশিক রহমান