মমতাকে ম্যানেজ করেই আগামীতে তিস্তা চুক্তি করতে চায় ভারত
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সমঝোতার ভিত্তিতে ও হিসাব-নিকাশ করেই বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি করতে চাইছে। অথচ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রীদের ইচ্ছে ছিল তিস্তা চুক্তি করা। কিন্তু বারবারই এতে বাঁধ সেধেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। এবারও তিনি বাঁধ সেধেছেন। এটা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি না চাইলে পশ্চিমবঙ্গের মতকে উপক্ষো করে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে তিস্তা চুক্তি বাংলাদেশের সঙ্গে করা সম্ভব হবে না।
তাছাড়া তিনি এটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন যে কেন্দ্রীয় সরকার না চাইলেও তিনিও যে নতুন কোনো ইস্যু অন্য দেশের সামনে তুলে ধরতে পারেন। সেই সঙ্গে নতুন করে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের কথা বলার জন্য তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি পাশ কাটিয়ে নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন। তার এই প্রস্তাবে অনেকেই অবাক হয়েছেন বটে। তবে মততা মনে করছেন, তিস্তা নদীর পানি এখন কমে গেছে। এই অবস্থায় তিস্তা থেকে বাংলাদেশে কোনো পানি দিলে পশ্চিমবঙ্গে মারাত্মক আর্থিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় হতে পারে। আর সেটা হলে তার জনগণ বিপদে পড়বে। তবে তিনি এনিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো বৈরিতা তৈরি করতে চান না। তিনি চান বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি না হোক। আর এই জন্য বাংলাদেশ কিভাবে জল পেতে পারে তার পথ বাতলে দিয়েছেন।
জানা গেছে, তিনি যে সব নদীর কথা বলেছেন ও প্রস্তাব দিয়েছেন, তোরসা ও অন্য কয়েকটি নদী। ওই সব নদী তিব্বত থেকে এসে ভারত থেকে বাংলাদেশের মধ্যে বয়ে গেছে। তিনি মনে করেন, ওই সব নদী থেকে বাংলাদেশের জন্য বেশির পানির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কলকাতার বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, মমতার ঘোষণায় দুই দেশের মধ্যে অশান্তি তৈরি করতে পারে। সেই সঙ্গে লাভ হবে পাকিস্তানের। কারণ সুবিধা হবে দুই দেশের ধর্মীয় মৌলবাদীদের। যাদের জন্য এতদিন সীমান্তে অবাধ যাতায়াত ও বাণিজ্যের বিকাশ ঘটতে পারেনি। ভারতের বিশ্লেষকরা আরও মনে করছেন, ভারতের নরেন্দ্র মোদি মমতার উপস্থিতিতেই জানান দিয়েছেন, কিছুদিনের মধ্যেই তিস্তা নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি হবে। তিনি হয়তো মনে করেছেন তার ঘোষণার মাধ্যমে হাসিনা নিশ্চিত হতে পারবেন যে চুক্তিটি হচ্ছে। আর মমতাও বুঝতে পারবেন যে সরকার চুক্তিটি করবে। আর তাতে করে তার ভাবনায় ও সিদ্ধান্তে আগামী দিনে পরিবর্তন আনতে হবে।
সূত্র জানায়, মমতা তার মতো করে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিলেও এটা খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। কারণ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার চায় তিস্তা চুক্তি করতে। আর সেই জন্য তিস্তা নিয়ে আলোচনাও অব্যাহত রাখবে। সময় ও সুযোগ মতো তারা চুক্তি করবে। আর এর আগেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে শুরু করবেন।
সূত্র জানায়, মমতা তিস্তার বিকল্প প্রস্তাব দিবেন এমন কথা মমতা আগেভাগে কেন্দ্রীয় সরকারকে জানাননি। যে কারণে তার প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় সরকার ও অনেকেই অবাক হয়েছেন। সেই সঙ্গে বিস্মিতও বটে। কারণ ভারত সরকার এর আগে কখনো বাংলাদেশকে তোরসা ও অন্যান্য যেসব নদীর নাম মমতা বলেছেন সেই সব নদীর পানি বণ্টনের কথা বলেননি। আর এই কারণে এখন কেন্দ্রীয় সরকার ও বাংলাদেশ সরকার হিসাব-নিকাশ কষতে শুরু করেছেন কি কারণে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশকে তিস্তার পানি না দিয়ে অন্য নদীর পানি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। আর এই প্রস্তাবের পেছনে তার উদ্দেশ্যই বা কি ছিল।
সূত্র জানায়, মমতা তিস্তা বিকল্প প্রস্তাব দিলেও বাংলাদেশ হাল ছাড়ছে না। তিস্তার পানি চা-ই চাই। আর এই জন্য বাংলাদেশ এতদিন ধৈর্য ধরেছে। আরও ধৈর্য ধরবে। বাংলাদেশ আশা করে মমতার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। আর বাংলাদেশও মমতার সঙ্গে এই বিষয়ে চেষ্টা অব্যাহত রাখবে যাতে করে মমতা তিস্তার পানি দিতে রাজি হন। যদিও বাংলাদেশ মনে করছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই পারবেন তিস্তা চুক্তি করতে এবং মমতাকে রাজি করাতে।
ভারতের বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস মমতার এই ধরনের প্রস্তাবকে ইতিবাচক মনে করছে। তবে কোনো কোনো দল সমালোচনাও করছে। সিপিআই (এম) এমপি মোহাম্মদ সেলিম গণমাধ্যমে বলেছেন, তিস্তা দুই দেশের জন্য স্পর্শকাতর সমস্যা। বাংলাদেশে পানির অভাব হলে তাদের সাহায্য করতে হবে। সেখানে চাষাবাদ বন্ধ হলে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের রাজ্যগুলোতে অর্থনৈতিক চাপ পড়বে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশকে দুই পক্ষের স্বার্থেই পানি দেওয়া প্রয়োজন। কংগ্রেস রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরী মনে করেন, এই সমস্যা নিয়ে অনেকদিন আলাপ-আলোচনা হয়েছে। এখন চুক্তি করে ফেলতে হবে। তিনি আরও মনে করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের জিদ বাড়িয়ে চলছেন। যেখানে ভারত সরকার ও অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক চায়। সেখানে তার ও তার দলের এই আচরণ দুর্ভাগ্যজনক। কংগ্রেসও চায় তিস্তা চুক্তি হোক। ওই দলের নেতা আবদুল মান্নান গণমাধ্যমকে বলেছেন, মুশকিল হলো তিনি (মমতা) ও তার দল রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, কোনো রকম ন্যূনতম রীতিনীতি মেনে চলে না। এটা বিশ্বাসও করে না। এই কারণে কোনো কারণ ছাড়াই সমস্যা তৈরি করে। পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় জনতা পার্টি সভাপতি দিলিপ ঘোষ মনে করেন, মমতা নিজের রাজ্যের দুর্নীতিসহ আর্থিক ও অন্যান্য বহু সমস্যার সমাধানের জন্য দিল্লির ওপর চাপ তৈরি করছেন। আর অন্যায় ভাবেই বাংলাদেশকে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। সম্পাদনা: এনামুল হক