রমনায় বোমা হামলা ১৭ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক আইনের মামলা
মামুন খান: ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের দিনে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জঙ্গিদের বোমা হামলায় ১০ ব্যক্তি নিহত এবং অনেকে আহত হন। ওই ঘটনার ১৭ বছর পার হতে চললেও শেষ হয়নি বোমা হামলার একটি মামলার বিচার। মামলাটির বিচার কাজ অনেকটাই থমকে আছে।
ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় পুলিশ হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে ২টি চার্জশিট আদালতে দাখিল করে। হত্যা মামলায় ২০১৪ সালে রায় হলেও বিস্ফোরক আইনের মামলাটি এখনো বিচারাধীন। ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. শাহেদ নুরুদ্দিনের আদালতে বিচারাধীন ওই মামলার বিচারে কোনো অগ্রগতি নেই। ২০০৯ সালে মামলাটিতে ৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য হলেও মাঝে প্রায় ৪ বছর মামলাটির বিচার স্থগিত ছিল। হত্যা মামলার রায়ের পর ২০১৪ সালে মামলাটির বিচার পুনরায় শুরু হলে এ পর্যন্ত ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে ট্রাইব্যুনাল। বিচারাধীন বিস্ফোরক আইনের মামলাটির সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, সাক্ষীদের অবহেলায় মূলত এ মামলার বিচার কাজ এগুচ্ছে না। সাক্ষীদের প্রতি আদালত থেকে সমন ও ওয়ারেন্ট পাঠানো হচ্ছে। তবুও তাদের আদালতে হাজির করতে পারছে না পুলিশ। গতবছর পর্যন্ত এ মামলায় মাত্র ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছিল। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ২৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এ মামলার এক অন্যতম আসামি জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নান। তিনি শুধু এ মামলারই আসামি নয়। মুফতি হান্নান অনেকগুলো মামলারই আসামি। এজন্য আদালত তাকে সময় মতো পায়নি। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। তবে আগের চেয়ে সাক্ষী হাজিরা বেড়েছে। খুব শিগগিরই মামলাটির বিচার শেষ হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপক্ষের এ কৌঁসুলি।
এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিনাবিচারে কারাগারে থাকা কারও জন্যই কাম্য নয়। সাক্ষী হাজিরের দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু পুলিশ তা না করে দায়িত্বে অবহেলা করছে। মামলাটিতে বিচারের নামে প্রহসন চলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ২০০১ সালে রমনার বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলে ৭ জন নিহত ও ২০ জন গুরুতর আহত হন। দুটি মামলার মধ্যে প্রায় ১৩ বছর পর এ ঘটনায় করা হত্যা মামলার রায় হয় ২০১৪ সালের ২৩ জুন। রায়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ৮ জনকে মৃত্যুদ- ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেন আদালত। মৃত্যুদ-প্রাপ্তরা হলেন, মুফতি আব্দুল হ্ন্নাান মুন্সি ওরফে আবুল কালাম ওরফে আব্দুল মান্নান, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা আকবর হোসাইন ওরফে হেলালউদ্দিন, মো. তাজউদ্দিন, আলহাজ মাওলানা হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আব্দুল হাই। আর যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্তরা হলেন- শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা আ. রউফ, মাওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ ও হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া। তাদের মধ্যে সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ চার আসামি এখনও পলাতক।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল ১ বৈশাখ ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে জঙ্গিদের বোমা হামলায় ১০ ব্যক্তি নিহত হন। নিহতরা হলেনÑ চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ থানার দুবলা গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে আবুল কালাম আজাদ (৩৫), বরগুনা জেলার বামনা থানার বাইজোরা গ্রামের আবুল হোসেন ওরফে এনায়েত হোসেনের ছেলে জসিম (২৩), কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার বিরামকান্দি গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে এমরান (৩২), পটুয়াখালির সদর থানার ছোট বিমাই গ্রামের মৃত অনবী ভূষণ সরকারের ছেলে শ্যামলী পরিবহনের অসীম চন্দ্র সরকার (২৫), পটুয়াখালি জেলার বাউফল থানার কাজীপাড়া গ্রামের আবুল কাশেম গাজীর ছেলে মামুন (২৫), একই গ্রামের সামছুল হক কাজীর ছেলে রিয়াজ (২৫), একই এলাকার আবুল হাশেম গাজীর মেয়ে শিল্পী (২০), নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার রথি রুহিত রামপুর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ইসমাইল হোসেন স্বপন (২৭), ঢাকার দোহার থানার চরনটসোলা গ্রামের মৃত আয়নাল খাঁর ছেলে আফসার (৩৫) ও অপর এক জন অজ্ঞাত পুরুষ ব্যক্তি। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ