ইসলাম জঙ্গিবাদের ধর্ম নয় : মোস্তফা কামাল গাজী
চারপাশে আজ আতঙ্ক বিরাজ করছে। সন্ত্রাসীদের নিষ্ঠুর আক্রমণে নির্বিচারে ঝরছে মানুষের প্রাণ। দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল। গুম, খুন, ধর্ষণ এসব যেনো নিত্যকার শব্দ। শিশু থেকে বৃদ্ধ- কেউ রেহাই পাচ্ছে না এর থেকে। বাইরে তো বটে, ঘরেই নিরাপত্তা নেই কারোর। ঘরে সম্পদের সঙ্গে লুট হচ্ছে মানুষের জীবন। এসব জঙ্গিবাদি কর্মকা-কে ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। ইসলামের সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে কারো প্রাণের বদলায় প্রাণ নিলো, পৃথিবীতে অনর্থ ও ত্রাস সৃষ্টি করলো এবং নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করলো, সে যেনো দুনিয়ার সকল মানুষকেই হত্যা করলো। আর যে কারোর জীবন রক্ষা করল, সে যেনো দুনিয়ার সকল মানুষের জীবন রক্ষা করলো।’ (মায়েদাহ :৩১২) অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন তারা ফিরে যায়, তখন চেষ্টা করে যেনো সেখানে সন্ত্রাসবাদ ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে। শস্যক্ষেত ধ্বংস ও কারো প্রাণনাশ করতে। মূলত আল্লাহ তাআলা সন্ত্রাস এবং দাঙ্গাহাঙ্গামা পছন্দ করেন না।’ (বাকারা :২০৫)
রাসুলুল্লাহ সা. পুরোটা জীবন সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে ভেবেছেন। সন্ত্রাসের মোকাবেলা করেছেন। বারবার সাহাবায়ে কেরামকে (রা.) উপদেশ দিয়েছেন অন্যের জান, মাল হেফাজতের জন্য। তিনি বলেন, ‘তোমাদের কোন ভাই যেনো অন্য ভাইকে ছোট না করে। কেননা প্রত্যেক মুসলমানের রক্ত, সম্পদ ও সম্মান ক্ষুণ্ণ করা অপরের জন্য হারাম করা হয়েছে।’ (মুসলিম:২৫৬৪)
কেউ কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করলে, সমাজে ত্রাস সৃষ্টি করলে, তার জন্য রয়েছে ভয়ঙ্কর শাস্তি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘কোন মুমিনকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করলে, তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে থাকবে দীর্ঘকাল। আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য প্রস্তুত রেখেছেন ভয়ঙ্কর শাস্তি।’ (নিসা :৯৩) রাসুলুল্লাহ (স.) সন্ত্রাসের শাস্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘কিয়ামতের দিন সবার আগে রক্তপাত ও হত্যার বিচার হবে।’ (বুখারি :৬৫৩৩, ৬৮৬৩; মুসলিম :১৬৭৮)
অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করার ভয়াবহ শাস্তির কথা উল্লেখ করে রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, ‘নিহত ব্যক্তি কিয়ামতের দিন হত্যাকারীর মাথা এমনভাবে ধরে রাখবে যে, হত্যাকারীর গলার রগসমূহ থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে। তখন নিহত ব্যক্তি এ কথা বলতে বলতে আরশের কাছে আসবে “প্রেভু, সে আমাকে হত্যা করেছে।” (মুসনাদে আহমদ :২৫৫১, তিরমিজি :২৯৫৫)
মানুষ হত্যা নিয়ে মহানবী সা. ভবিষৎবাণী দিয়ে বলেছেন, ‘সেই সত্ত্বার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! মানুষ এমন এক যুগে উপনীত হবে, যখন হত্যাকারীও জানবে না, কেন সে হত্যা করল। নিহত ব্যক্তিও জানবে না, কেন তাকে হত্যা করা হলো। কেউ জিজ্ঞেস করলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সঃ), এমনটি কীভাবে হবে?’ তিনি উত্তর দিলেন, হত্যাযজ্ঞ ব্যাপক আকার ধারণ করার ফলে এমনটি ঘটবে।’ (মুসলিম :২৯০৮)