রমজানের প্রস্তুতির মাস ‘রজব’ : মাওলানা হাফিজুর রহমান
চাঁদকে কেন্দ্র করে বছরের যে হিসাব গণনা করা হয় তাই চন্দ্রিকাবর্ষ হিসেবে পরিচিত। ইসলামের মৌলিক ইবাদত যেমন, রোযা ও হজ্জ চন্দ্র মাসের হিসেবেই আদায় করতে হয়। ইসলামী ইতিহাসের অনেক ঐতিহাসিক দিবসও চন্দ্র মাসের আলোকেই অমর হয়ে আছে। আর এ চাঁদকে কেন্দ্র করেই হিজরি বর্ষ প্রবর্তিত হয়েছে। পৃথিবীতে প্রবর্তিত সকল পঞ্জিকাবর্ষের মাসগুলো মানবরচিত। আর চন্দ্রমাস আল্লাহ্ প্রবর্তিত। তন্মধ্যে ৪টি মাসকে আল্লাহ্ তা‘আলা বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন, তাহল—জিলক্বদ, জিলহজ্জ, মুর্হারম ও রজব মাস।
জাহিলী যুগের যুদ্ধবাজ ইহুদী, নাসারা, পৌত্তলিকসহ তৎকালীন আরবের সবাই এ ৪টি মাসকে বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করে চলত এবং উক্ত মাসগুলোতে সকল প্রকার যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে বিরত থাকত। আল্লাহ্ তা‘আলাও এ মাসগুলোতে যুদ্ধ ও হত্যাকান্ডে লিপ্ত হওয়াকে কবীরাহ্ গুণাহ্ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। সূরা বাকারাহ্/২১৭। আল্লাহ্ তা‘আলা আরও বলেছেন, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহ্র বিধান ও গণনার দিক থেকে মাস মোট ১২টি। তন্মধ্যে ৪টি মাস অতি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমারা (অন্যায় ও গুণাহের কাজে লিপ্ত হয়ে) নিজেদের প্রতি অত্যাাচর করো না। সূরা তাওবা/৩৬।
বিখ্যাত তাবেয়ী কাতাদাহ্ র. বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা সৃষ্টিকূল থেকে কতিপয় ব্যক্তিকে তাঁর নিকটতম হিসেবে, ফিরিস্তাকূল থেকে ক’জনকে বার্তাবাহক হিসেবে, মানবজাতি থেকে কিছু ব্যক্তিকে নবী-রাসূল হিসেবে, কথাভান্ডার থেকে কিছু কথা যিকির হিসেবে, সমগ্র পৃথিবী থেকে কিছু জায়গা মসজিদরূপে এবং ১২ মাস থেকে রমযান, জিলক্বদ, জিলহজ্জ, মুর্হারম ও রজব মাসকে অতি সম্মানিত হিসেবে, দিবসমূহ থেকে জুমুআর দিনকে এবং রাতসমূহ থেকে কদরের রাতকে অতি সম্মানিত হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। সুতরাং আল্লাহ্ তা‘আলা যেগুলোকে সম্মান প্রদর্শন করেছেন তোমারাও সেগুলোকে সম্মান প্রদর্শন করো।
উপর্যুক্ত বর্ণনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, রজব মাস একটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ মাস। অধিকাংশ মতানুযায়ী রজব মাসের ২৭ তারিখে রাসূল সা. এর মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল। সুতরাং মুসলিম জাতির উচিত ফরয ও ওয়াজিব ইবাদতের পাশাপাশি এ মাসে অধিকহারে নফল নামায, রোযা, দান-সাদকাহ্, কুরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ ও যিকির ইত্যাদি বেশি বেশি করে আমল করার চেষ্টা করা। এ মাসে নফল রোযা আদায়ের বিষয়ে হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল সা. সম্মানিত মাসসমূহে রোযা রাখাকে নফল সাব্যস্ত করেছেন। আর রজব মাস উক্ত মাসসমূহের একটি। (আবূদাউদ) রাসূল সা. আরও বলেন, তোমরা সম্মানিত মাসসমূহের কিছু দিবসে রোযা রাখবে, কিছু দিবসে রোযা ছেড়ে দিবে (আবূ দাউদ)। যেহেতু আল্লাহ্ তা‘আলা জিলক্বদ, জিলহজ্জ, মুর্হারাম ও রজব মাসকে সম্মানিত মাস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন সুতরাং রজব সহ উক্ত মাসগুলোতে বেশি বেশি ইবাদত ও ভাল কাজ করা অবশ্যই ফযিলতপূর্ণ কাজ। তবে রজব মাসের নির্দিষ্ট কোন দিনে রোযা রাখা বা উমরাহ্ পালন করা, নির্দিষ্ট কোন রাতে নামায আদায় করা অথবা এ মাসেই যাকাত আদায় করাকে সুন্নাত মনে করার নির্ভরযোগ্য কোন দলীল নেই। রজব মাসের আগমন হলে রাসূল সা. একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন, তা হলো, আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রজাবা ও শা‘বান ওয়া বাল্লিগ্না রমাযান (হে আল্লাহ্! রজব ও শা‘বান মাসে আমাদের বরকত দান করুন এবং রমযান মাস পর্যন্ত আমাদের হায়াত দীর্ঘ করুন। মুসনাদে আহমাদ/২৩৪৬, কাশফুল আসতার/৬১৬ ও তাবারানী/৩৯৩৯। অতএব, আল্লাহ্ তা‘আলা এ মাসে আমাদের বেশি বেশি ইবাদাত করার এবং সকল প্রকার পাপাচার থেকে বিরত থাকার তাওফীক দান করুন।