তোমরা কখনো পদের লোভ এবং সম্পদের লোভ করবে না
তিরমিযি শরীফ। হাদিসের বিশুদ্ধ গ্রন্থ। কওমী মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসে গ্রন্থটি পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বখ্যাত ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে গত সপ্তাহে শেষ হয় গ্রন্থটির আনুষ্ঠানিক পাঠদান। সমাপনী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন দেওবন্দ মাদরাসার বর্তমান মহাপরিচালক ও তিরমিজি শরিফের শাইখ হজরত মাওলানা মুফতি আবুল কাসেম নোমানি বানারসি। তাঁর সেই বক্তব্যের চুম্বুকাংশ দৈনিক আমাদের অর্থনীতির ইসলামি চিন্তার পাঠকদের জন্য অনুবাদ করে পাঠিয়েছেন দেওবন্দে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মুনশি মুহাম্মদ আবু দারদা কাসেমি।
শিক্ষার্থীদের সর্বদা উস্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা চাই। কখনও নিজেকে উস্তাদের চেয়ে বড় মনে করা ঠিক নয়। হতে পারে যোগ্যতায় তুমি উস্তাদের চেয়ে বড়। তবু তাকে সারাজীবন সম্মানের আসনে আসীন করা তোমাদের কর্তব্য। প্রতিবছর হাজারো শিক্ষার্থীর ঢল নামে দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হবার জন্য। কিন্তু সবাই ভর্তি হতে পারে না। রাব্বুল আলামিন সবাইকে ‘কাসেমি’ শুরা পান করান না। কিন্তু যাদের ভর্তি হবার সুযোগ মিলেছে, তাদের জন্য এটা আল্লাহর অনেক বড় মেহেরবানি। পড়াশুনো ও কাজে কর্মে বিষয়টির কদর করা চাই। দাওরায়ে হাদিস অবধি পড়ে নিজের পড়াশুনোর সমাপ্তি মনে না করা চাই। বোঝা উচিত, সবে তোমাদের কোনো কিছু পড়ে বুঝবার ক্ষমতা তৈরি হলো। এখন নিজে নিজে কিতাব গভীরভাবে অধ্যয়ন করে পা-িত্ব অর্জন করতে হবে। দাওরায়ে হাদিস অবধি উস্তাদগণ তোমাদের কেবল কিতাব পড়ে বুঝবার যোগ্যতা তৈরি করে থাকেন। বাকিটা তোমাকেই অধ্যয়ন করে করে এগোতে হবে যুগ-শতাব্দের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়। সবসময় নিজের জন্য এমনকি যে সমস্ত মানুষ তোমাকে সাহায্য করছে (চাই তা অর্থ কিংবা দোয়া দিয়ে হোক), নিজের একান্ত মোনাজাতে তাদের মূল্যায়ণ করা চাই। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ও অগ্রগতির প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা চাই। আমরা যখন দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে দাওরায়ে হাদিস শেষ করি, তখন আমাদের শায়খ ফকিহুল উম্মাহ হজরত মুফতি মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহি (রহ.) আমাদের দুটো উপদেশ দিয়েছিলেন। ১. হুব্বে জাহ তথা পদের লোভ না করা।
তোমরা পড়াশুনো শেষ করার পর নানান কাজে যোগ দেবে, কেউ বা মাদরাসার উস্তাদ হবে, তখন হয়তো মনে মনে খেয়াল আসতে পারে, আমি তো অমুক উস্তাদের চেয়েও বেশি জ্ঞানী। আমার বেতন তার চেয়ে কম কেনো? আমার নাম রেজিস্টারে তার নিচে কেনো? তখনই ইস্তিগফার পড়বে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে। সবসময় নিজেকে ছোট মনে করবে। হিংসা-বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকবে। ২. হুব্বে মাল তথা সম্পদের লোভ না করা, অল্পতে সন্তুষ্ট থাকা। আল্লাহ যতোটুকুন নেয়ামত দিয়েছেন, তার ওপর সন্তুষ্ট থাকা ও নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা চাই।
এক কবির পায়ে একবার জুতো ছিলো না। তিনি বাইরে যেতে লজ্জাবোধ করছিলেন। শেষমেষ প্রয়োজনের তাগিদে শূন্য পায়ে বাইরে বেরোতে হয় তাকে। কিছুদূর হাঁটার পর দেখেন পথে এমন একজন ব্যক্তি বসে আছে, যার দুটো পা নেই। তখন তিনি নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে বললেন, ‘আল্লাহ তুমি আমায় অনেক দিয়েছো।’ তোমরা যে অবস্থাতেই থাকো না কেনো, সবসময় নিজের স্তরের লোকের প্রতি তাকাবে। তাহলে দেখবে পার্থিব মোহ তোমায় কখনও গ্রাস করতে পারবে না। নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হবে।