নকশি কাঁথায় জীবিকা
প্রবীর মোহন্ত ,বগুড়া : শষ্য ভা-ার হিসেবে খ্যাত বগুড়া অঞ্চল। এ অঞ্চলের মানুষেরা প্রধানত জমি চাষাবাদ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কৃষিকাজে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু, বয়সের কারণে অনেক নারী কৃষি কাজে অংশ নিতে না পারলেও বাড়িতে বসে কাঁথা সেলায় কাজে ব্যস্ত সময় পার করেন। আর এ কাজ করে তারা উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করতে সক্ষম হচ্ছেন।
সরেজমিনে জানা যায়,এ জনপদের গ্রামগুলোতে এখনো তৈরি হচ্ছে নকশি কাঁথা। বিশেষ করে গৃহস্থালি পাশাপাশি নারীরা অবসর পেলেই সুঁইসুতা হাতে নিয়ে সেলাইয়ে বসেন। তবে কেউ কেউে শখের বশে করলেও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর নারীরা মজুরির বিনিময়ে অন্যের কাঁথায় রঙ্গিন সুতায় নকশা আঁকেন। এসব কাঁথা তৈরির মূল উপাদান হলো পুরাতন কাপড় ও নানান রঙের সুতা। পুরোনো কাপড় কয়েক ভাঁজ করে চারদিকে সেলাই করে আটকে নেয়া হয়। তারপর সেলাইয়ের সমান দূরত্ব বজায় রেখে প্রথমে বড় বড় ফোঁড় দিয়ে কাপড়ের পরলগুলোকে আটকানো হয়। তারপর নকশি সেলাই শুরু করা হয়। নকশি কাঁথার নকশগুলোর বিভিন্ন নাম আছে, রান ফোঁড়, ডবল রান, তেরছা ফোঁড়, কাইত্যা ফোঁড়, এক ফুঁইড়া, বখেরা ফোঁড়, গাট ফোঁড়, লিক ফোঁড়, ক্রসস্টিচ, তারা ফোঁড়, বাঁশপাতা ফোঁড়, বৈকা ফোঁড়সহ আরো অনেক নাম আছে। নিপুন হাতে তৈরি এসব নকশি কাঁথায় কেউ বা আবার সেলায়ের মাধ্যমে ফুটে তোলেন গ্রাম বাঙলার নানা ঐতিহ্য। পাখিলতা, আটপাতা ফুল, খেঁজুর ছড়ি, চোখ, তাবিজ, মাছ, পিঁপড়ার সারি, চাঁদ, নৌকাবিলাস। সুন্দর নকশি কাঁথা তৈরি করে নেয়ার পর নিজেদের ব্যবহারের পাশাপাশি জামাই বাড়ীতে উপহার হিসাবে পাঠিয়ে দিতে পেরে নিজেকে গর্ববোধ করেন।
ষাটোর্ধ মঞ্জিলা বেগম, জোলেখা বেগম, সাহেরা বেওয়া জানান, ৬শ থেকে ৮শ টাকার মজুরির বিনিময়ে তারা সেলাইয়ের কাজ করছেন। মাঝারি একটা কাঁথা সেলাই করতে তাদের সময় লাগে ৩০ থেকে ৪০দিন। অপরদিকে বিশেষ নকশি কাঁথা সেলাই করতে তিন মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়। রকম ভেদে এসব নকশি কাঁথার মজুরি ৫শ’থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে মহিলারা নকশি কাঁথা সেলায়ের ব্যস্ত সব সময় পার করেন বছর জুড়ে। তারা আরো জানান, উপার্জিত টাকা দিয়ে নিজেদের ডাল ভাতের পাশাপাশি নাতি-পুতিদের জন্য শখের বায়না পূরনে ভূমিকা অনেক। তবে নকশি কাঁখা তৈরীতে ওই সব মহিলাদের জন্য নেই কোন বিশেষ সুযোগ সুবিধা। সম্পাদনা: মুরাদ হাসান