প্রধানমন্ত্রী দয়া করে এই ভুল করবেন না
অজয় দাশগুপ্ত
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাদের বিশ্বাস ও আস্থার প্রতীক। কে না জানে আপনি বঙ্গবন্ধুকন্যা। এই পরিচয়টি শাসন ক্ষমতার চাইতে অনেক বড়। কারণ তিনি আমাদের যে দেশটি দিয়ে গেছেন সেটি ছিল কূপম-ূকের হাতে। পাকিদের উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও হীনতার কবল থেকে আমাদের মুক্ত করার নেতা তিনি। তার কন্যা বলে আপনার ওপর প্রগতির যে ভরসা সেটা এবার টাল খেয়েছে মাননীয়া। এদেশে অন্ধদের রাজনীতি নতুন কিছু না। জামায়াতের মতো মৌলবাদী, ক্যাডারভিত্তিক দলকে সাইজ করেছেন আপনি। মানবতাবিরোধী রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিতে ঝোলানো আপনি কেন হেফাজতের জালে আটকা পড়বেন? এই হেফাজতের উত্থান কি খুব বেশি দিনের ঘটনা? এদের বাড়বাড়ন্ত হবার কারণ যদি শাপলার ঘটনা হয়তো সেটিও আপনি সামাল দিয়েছেন। কিন্তু তখন থেকে এরা লাই পেতে পেতে এখন মাথায় উঠেছে। শোনা যায়, যতবার তারা ক্ষেপে ততবার রেলের জমি, টাকা বা উপঢৌকন দিয়ে বশ করা হয়। এবার তারা পৌঁছে গেছে গণভবনে। গণভবনে তারা যেতেই পারেন। তাদের আদর্শ বা নীতি তাদের মতো। কিন্তু মুশকিল হলো তারা যখন তাদের মনগড়া কাহিনী ও খায়েশের নামে বাংলাদেশকে অন্ধকূপে ফেলতে চায় তখন কি করে সরকার তাতে সায় দেয়?
কোর্ট-এর বাইরে থাকা মূর্তিটি আসলে ভাস্কর্য। সেটি আপনি ভালোই বোঝেন। এর সুরত আদল বা মান নিয়ে কথা থাকতেই পারে। কিন্তু হেফাজতের এজেন্ডা ভিন্ন। তাদের উদ্দেশ্য বলার দরকার পড়ে না। তারা যখন গণভবনে গিয়ে এ আশ্বাস পায় যে, এটি সরানো হবে এবং তা আপনারও অপছন্দের, নৌকা কিন্তু দুলে ওঠে। কারণ নৌকার মাঝি মাল্লারা এদেশের সাধারণ ও মুক্তমনের মানুষ।
আপনি অবগত আছেন এখন দলের চেয়ে আপনার ইমেজ বড় ও কার্যকর। আপনি না বললে বা না চাইলে অনেক দরকারি কাজও হয় না। সেখানে অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার জায়গাটা আপনার হাতে বন্ধ হয়ে গেলে ক্ষমতা থাকলেও ভবিষ্যৎ হাতে থাকবে না। এটা সবাই জানে এই শক্তি বা অপস্রোত নৌকা ডোবানো ছাড়া কোনো কাজে আসবে না।
একটা গল্প মনে করিয়ে দিই মাননীয়া। এক সাপ আর এক ব্যাঙে দারুণ বন্ধুতা। তাই ব্যাঙ চাইত না সাপটির কিছু হোক। বারবার তাকে বলত ভাই আঁকাবাঁকা চলিস না। সোজা চললেই ভালো থাকবি। সাপ হাসত আর বলত, আমি বিষধর। কেউ আমার কিছু করতে পারবে না। তুই বরং সামলে থাক। ব্যাঙ দুদিনের জন্য বেড়াতে গিয়ে ফিরে এসে সাপকে পায় না। খুঁজতে খুঁজতে দেখে সটান সোজা হয়ে শুয়ে আছে। ব্যাঙ মনে মনে ভাবল বাহ এই তো সুমতি হয়েছে। কাছে গিয়ে কথা বলে নেড়ে চেড়ে দেখে সাপটা মরে সোজা হয়ে গেছে। তখন সে কাঁদতে কাঁদতে বলল, জীবনে সোজা হলি না মরার পর সোজা হয়ে কি লাভ রে শয়তান?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাপ কখনো সোজা হয় না। আপনি যতই ছাড় দিন ওরা ছোবল মারবেই। যে আপনি আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে গান তাকে ওরা কখনো ছেড়ে কথা বলবে না। আপনি ভুল করলে দেশ ও জাতির কি হবে সেটা নিশ্চয়ই আপনি জানেন। আমরা আপনার মুখ চেয়ে আছি।
লেখক: সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা: আশিক রহমান