ঋণ বিক্রি একটা ব্যবসা মাত্র
অধ্যাপক আবু আহমেদ
তিস্তার চুক্তির ব্যাপারে কোনো একটা ফয়সালা করতে পারলে ভালো হতো প্রধানমন্ত্রীর সদ্য শেষ হওয়া সফরে। কিন্তু সেটি আর হলো না। অথচ তিস্তা চুক্তি ছিল বহুল আকাক্সিক্ষত। বাংলাদেশের মানুষ তো পানি চায়। আমাদের মানুষের ধারণা হচ্ছে, আমরা শুধু দিচ্ছি, কিন্তু পাচ্ছি না। এ ধারণাটা সবার মনে বাসা বাঁধছে। ভারত সবকিছুই পাচ্ছে, কিন্তু আমরা পাচ্ছি না। আমরা পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছি না। মমতা বলেছেন, পানি নেই। পানি তো তারা নিয়ে নিচ্ছে, পানি থাকবে কিভাবে। একটা অভিন্ন নদী কোনো রাষ্ট্র এককভাবে নিতে পারে না। এটা বেআইনি। মমতা যে নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন এটা আসলে ভিত্তিহীন। এটা তিনি পরিহাস করেই বলেছেন বলে মনে হয়। আমরা যেটা চাচ্ছি সেটার কোনো খবর নেই। তিস্তা চুক্তির বিষয়ে মমতা বাধা দিলে কেন্দ্রীয় সরকার শুনবে কেন? যখন পাকিস্তানকে পানি দেয়, তখন পাঞ্জাব বাধা দিলেও সেটা কোনো কাজে আসে না। তাহলে আমাদের ক্ষেত্রে মমতার বাধা কেন? ওটা তো কেন্দ্রীয় সরকার করবে।
বাংলাদেশ সরকার বা প্রধানমন্ত্রীর এ বিষয়ে আরেকটু জোরালভাবে বলা উচিত। একটা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এই চুক্তি বাস্তবায়ন চায় বাংলাদেশÑ লক্ষ্য নিয়ে এগোতে হবে। ২০১১ সালে মনমোহন সিংয়ের সময়ে তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, হয়নি মমতার বাধার কারণে। মমতা রাজনৈতিক কারণেই এই চুক্তির বিরোধিতা করবে। কিন্তু শেখ হাসিনার চিন্তা করা উচিত বাংলাদেশের মানুষের কথা। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য আমাদের আরও জোরাল পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। অন্তত একটা সময়সীমা নির্দিষ্ট করে বলা উচিত। ভারত সরকার এর আগেও বলেছে, এই সময়ের মধ্যে, ওই সময়ের মধ্যে হয়ে যাবে তিস্তা চুক্তি। হাইকমিশন থেকেও বারবার বলা হচ্ছে, এ চুক্তি সময়ের ব্যাপার। এত আশ্বাস, তবু চুক্তিটি এখনো সম্পন্ন হয়নি। এটা তো আমাদের জন্য সুখের নয়।
মোদি বলেছেন, তার এবং শেখ হাসিনার সরকার থাকাকালীন সময়েই তিস্তা চুক্তি হবে। আমার কথা হচ্ছেÑ চুক্তিটা হোক। এটা নিয়ে এত রাজনীতি করার কি দরকার। পানির ব্যাপার নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। আমাদের এখানে পানি পাচ্ছি না, সব শুকিয়ে যাচ্ছে। এখানে রাজনীতি কোনো ব্যাপার নয়, আওয়ামী লীগ-বিএনপি কোনো ব্যাপার নাÑ এখানে আসলে বাংলাদেশের স্বার্থের ব্যাপার। আমরা যদি ভারতের সঙ্গে যুক্ত থাকতাম তবে কি পানি পেতাম না। ১৯৪৭ সালে এবং পরবর্তীতে স্বাধীনতাযুদ্ধের মাধ্যমে যদি আমরা বাংলাদেশ না হতাম তখন কি পশ্চিমবঙ্গ আমাদের ডিনাই করতে পারত। এখন স্বাধীন দেশ হওয়াটা কি আমাদের অপরাধ হয়েছে?
প্রতিরক্ষাখাতে এত টাকা ঋণ দেওয়া সেটা আসলে একটা ব্যবসা। ভারত যদি ঋণ বিক্রি করে লাভবান হয় সেটা তো আমাদের জন্য ক্ষতিকর। তাদের কাছ থেকে আমাদের সামরিক সরঞ্জামসহ আরও কিছু জিনিস কিনতে হবে। অন্যান্য দেশও তো বসে আছে আমাদের ঋণ দেওয়ার জন্য। আমরা ঋণ নেব কি না সেটা তো আমাদের বিষয়। সারাবিশ্বে ঋণের ব্যবসাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় ব্যবসা। ঋণ বিক্রি করা বড় বড় দেশের টার্গেট। ঋণ বিক্রি করতে না পারলে তাদের চাকরিই থাকে না। ঋণ বিক্রি একটা ব্যবসা মাত্র।
পরিচিতি: অর্থনীতিবিদ
অনুলিখন: সাগর গনি
সম্পাদনা: আশিক রহমান