প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের লাভ-ক্ষতির হিসাব
ড. দেলোয়ার হোসেন
আলোচিত ভারত সফর করে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সফরে বাংলাদেশ কি পেল, কী পেল নাÑ লাভক্ষতির হিসাব কষা হচ্ছে এখন। এ সফর নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। সমালোচনাও আছে। সবাই এ বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করছেন। আমার মতে, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে অনেক কিছুই পেয়েছে বাংলাদেশ। একটি সফর কখনো পাওয়া না পাওয়ার মাধ্যমে বিবেচনা করা হয় না। একটি সফরের কিছু আউটকাম বা ফলাফল থাকে। অনেকসময় দেখা যায়, আমরা বড় ধরনের কিছু আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকি। কিন্তু এগুলো যখন বাস্তবায়ন করতে যাই দেখা যায় যে, কাজগুলো আর যথাযথভাবে হয় না। ভারত সফরে আমাদের অর্জনের মধ্যেÑ বিভিন্ন সেক্টরের মাধ্যমে সম্পর্ক উন্নয়ন। প্রধানমন্ত্রীর এ সফর একদিকে যেমন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বহুমাত্রিক যে দিক রয়েছে সেখানে অর্থনৈতিক, নিরাপত্তার, কানেকটিভিটি, জ্বালানি, পানি সমস্যা সমাধানের বিষয় ছিল। তিস্তা চুক্তির সুরাহা যে এ সফরে হবে না, তা তো আগে থেকেই ধারণা করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকেও এ রকম কিছু বলা ছিল না যে, তিস্তা চুক্তিটি সম্পাদন হবে। বিষয়টিকে ফলাফলের জায়গাতে আনা যাবে না। এছাড়া অন্য যে বিষয়গুলো রয়েছে সেখানে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ট হয়েছে। কাছাকাছি এসেছে। নতুন কিছু সেক্টর উন্মোচিত হয়েছে। ভারতের মতো রাষ্ট্র ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ ঘোষণা করেছে, সাধারণ তারা অন্য কোনো রাষ্ট্রকে এ ধরনের অফার করেনি। সেক্ষেত্রে এই বিষয়টা দুদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের একটি ইতিবাচক দিক বলে আমি মনে করি।
ভারতের সঙ্গে আমাদের একটা এমওইউ হয়েছে। এমওইউ-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী চীন, রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেভাবে সামরিক সরঞ্জাম বা সামরিক সহযোগিতা পাচ্ছে, ভারত সঙ্গেও এমন আদান-প্রদান আছে, সেটাকে আরেকটু এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সামরিক সরঞ্জাম বা পোশাক তো আমরা তৈরি করতে পারি না। অস্ত্র ছাড়াও পোশাক থেকে শুরু করে তাদের জামা-কাপড়ের বোতামগুলোও আমদানি করতে হয়। এ ধরনের বিষয়গুলোর একটা বাণিজ্যিক দিক আছে। যে দিক থেকে তা আমরা নিতে পারি, এটা একটা উৎস হিসেবে কাজ করছে।
পানির সমস্যাটা আসলেই গুরুত্বপূর্ণ। এই সমস্যা ভারতের সঙ্গে আমাদের আছে। যা এখনো অমীমাংসিত বিষয়। এ বিষয়ে তেমন একটা অগ্রগতি হয়নি বললেই চলে। আমরা দেখছি, এখনো তিস্তা চুক্তি হয়নি। তিস্তা নিয়ে অনেকে বড় বড় কথা বলেছেন। কিন্তু পানির বিষয়ে কার্যকর কোনো অগ্রগতি হয়নি। এছাড়া অন্যান্য বিষয়গুলোতে যে অগ্রগতি হয়েছে তা অত্যন্ত ইতিবাচক। আশাব্যঞ্জক।
প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত আরও কাছাকাছি এলো। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে যেভাবে অভ্যর্থনা দিয়েছে ভারত সেটা অভূতপূর্ব। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় যারা প্রাণ দিয়েছিলেন, তাদের সম্মানিত করা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। তার ফলে আত্মার জায়গাটা আরও শক্তিশালী হয়েছে। দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে যে ভুল বোঝাবুঝি আছে এ সফরের মাধ্যমে সেটা দূর হয়েছে। ভারতের সঙ্গে যে সম্পর্ক আমাদের, একইভাবে অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
পরিচিতি: আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি
সম্পাদনা: আশিক রহমান