সিটিং সার্ভিস বন্ধে অভিযান পরিবহন শ্রমিকদের অনিয়ম ভোগান্তিতে সাধারণ যাত্রী
আজ থেকে জরিমানার সঙ্গে কারাদ- দেওয়া হবে : ম্যাজিস্ট্রেট
শাকিল আহমেদ ও আরিফুর রহমান তুহিন: অতিরিক্ত ভাড়া, গাড়ির কৃতিম সঙ্কট, যাত্রী-শ্রমিক বাক-বিত-াসহ নানা অনিয়মে চলছে রাজধানীর যাত্রী পরিবহনগুলো। বিআরটিএর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৬ এপ্রিল থেকে রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধ হলেও এখনো অব্যাহত আছে সিটিং সার্ভিসের চিটিংবাজি। শুধু কৌশলটা একটু ভিন্ন। আর সিটিং সার্ভিস বন্ধে লাভবান মূলত বাস মালিক-শ্রমিকরাই। ভোগান্তি কমেনি যাত্রীদের।
বিআরটিএ অভিযান চালিয়েছে অনিয়ম বন্ধে। ডিএসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্রেট মামুন সর্দার বলেছেন, আজ বাস শ্রমিকদের জরিমানা করা হয়েছে সোমবার থেকে জেলে পাঠানো হবে। রোববার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সিটিং সার্ভিস বন্ধ ঘোষণা করা হলেও সকালে কিছু কিছু পরিবহন সিটিং সার্ভিস চালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু যাত্রীদের প্রতিরোধ এবং বিআরটিএর অভিযানে কোনো কোনো জায়গায় সিটিং সার্ভিস বন্ধ হলেও পরিবহন শ্রমিকরা ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেয়। তারা কিছু গাড়ি বন্ধ করে দিয়ে কৃত্রিম পরিবহন সঙ্কট তৈরি করে। এর পর গাড়ি বোঝাই করে যাত্রী তুলে আগের নিয়মে ভাড়া নেয়। রাজধানীর সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, গাবতলী, মিরপুর, উত্তরাসহ সব জায়গায় একই চিত্র দেখা যায়। এদের মধ্যে অনিয়মে এগিয়ে আছে মিরপুর ও সাভার রুটের পরিবহনগুলো।
উত্তরার বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক মাহাবুবা ইসলাম ইরা জানান, তিনি প্রতিদিন মিরপুর ১০ নম্বর থেকে উত্তরায় সিটিং সার্ভিসে আসতেন। সকালে একই গাড়িতে এসেছেন। কিন্তু গাড়ি চলছে লোকাল বাস হিসেবে। বহু কষ্টে বসুমতি পরিবহনের একটি গাড়িতে উঠেন। লোকাল বাস অনুযায়ী ভাড়া কম হওয়ার কথা থাকলেও মাহাবুবার কাছ থেকে আগের মতোই ৩০ টাকা ভাড়া নেয় বসুমতি পরিবহন।
একই অভিযোগ করেন বনশ্রী থেকে বসুন্ধরা গেটে আসা আসিম পরিবহনের যাত্রী সোহেল। তিনি বলেন, সিটিং সার্ভিস বন্ধ হওয়ায় ভাড়া কম হওয়ার কথা থাকলেও এখনো পরিবহনগুলো আগের মতোই ভাড়া নিচ্ছে। বনশ্রী থেকে বসুন্ধরা আগে ২৫ টাকা ভাড়া ছিল এখনো ২৫ টাকাই নেয়া হচ্ছে। তাহলে লাভ কি হলো? প্রশ্ন তার।
সড়কে গাড়ি কম থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে বলাকা পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব ১১-৭৬২৮) কন্ট্রাকটার মোহাম্মদ সবুজ জানান, সরকার সিটিং সার্ভিস বন্ধ করায় মালিকরা প্রায় অর্ধেক গাড়ি বন্ধ করে রেখেছে। আমরা অল্প কয়েকজন গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হইছি। তাই রাস্তায় গাড়ি কম। সবুজ আরো বলেন, কাল আরো গাড়ি বন্ধ থাকবে। তহন বুঝবেন মজা। অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে সবুজ বলেন, আমরা ঠিকমতোই ভাড়া নিচ্ছি। তবে কিছু কিছু গাড়ি ভাড়া বেশি নিচ্ছে। একই কথা জানালেন উত্তরা থেকে ছেড়ে আসা সুপ্রভাত, তুরাগ, ছালছাবিল ও ৩ নম্বর পরিবহনের শ্রমিকরা।
সিটিং সার্ভিস বন্ধ হওয়ায় সব থেকে বেশি লাভবান হয়েছেন ছাত্ররা। একমাত্র তাদের ভাড়াই কমেছে। এখন তারা সকল গাড়িতে হাফ-ভাড়া দিতে পারছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ (নৈশ) বিভাগের ছাত্র মাজেদুর রহমান শুভ জানান, উত্তরা থেকে আগে নিলক্ষেতে আসতে ভিআইপি-২৭ পরিবহন ৫০ টাকা নিত। আজ ৩০ টাকা ভাড়া হারে পনেরো টাকা দিয়েছিলাম। কন্ট্রাকটারের অনুরোধে ২০ টাকা দিয়েছি। ৩০ টাকাতো বাঁচলো।
আবার সিটিং সার্ভিস একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেককে অসন্তুষ্ট হতে দেখা গেছে। বিশেষ করে মহিলা এবং স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীদের। তাদের দাবী অল্প কিছু হলেও সিটিং সার্ভিস রাখা উচিত ছিলো। তবে সেটা একটা নির্দিষ্ট হারে। বিমানবন্দর থেকে আসা ধানম-ির একটি বেসরকারি বিশ্ববদ্যালয়ের নাদিয়া জানান, আগে তিনি বিমানবন্দর থেকে ২৭ পরিবহনে ধানম-ি আসতেন। ভাড়া একটু বেশি হলেও অনেকটা ঝামেলাহীনভাবেই বসে আসতে পারতেন। এখন গাড়িতে সিট পাওয়া দুষ্কর হয়ে গেছে। একমাত্র ভরসা সংরক্ষিত মহিলা আসন। আর সেটা না পাওয়া গেলে গাদাগাদী করে দাঁড়িয়ে আসতে হবে।
এদিকে সিটিং সার্ভিস বন্ধ এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ঠেকাতে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়েছেন বিআরটিএ। এ সময় ট্রাস্ট, খাজা বাবা, স্বাধীন, নিউ ভিশন পরিবহনসহ বেশ ককয়েকটি পরিবহনকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও গাড়ির মধ্যে ভাড়ার তালিকা না রাখার দায়ে ২ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত।
খাজা বাবা পরিবহনের যাত্রী আসাদ বলেন, গুলিস্তান থেকে ফার্মগেট যাবো। আগে ১৫ টাকা নিতো আজও তাই নিয়েছে। সরকারি তালিকা অনুযায়ী ভাড়া হওয়ার কথা ১০ টাকা। তালিকা দেখাতে বললাম দেখালো না। এখন আমাদের বসিয়ে রেখে জরিমানা গুনছে।
মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী বিআরটিএ’র আদালত -২ এর নির্বাহী পরিচালক মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, সরকার রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধ ঘোষণা করেছে। পরিবহনগুলো তা মানছে কিনা দেখার জন্য মোবাইল কোর্ট বসানো হয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগে আধা ঘণ্টায় ২৫ থেকে ৩০টি পরিবহনকে ২ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অন্য দিকে নিউ মার্কেট এলাকায় ভাড়ার তালিকা না থাকায় ও যাত্রীদের অভিযোগের কারণে ঠিকানা পরিবহনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন ডিএসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্রেট মামুন সর্দার। বলেন, আজ বাস শ্রমিকদের জরিমানা করা হয়েছে সোমবার থেকে জেলে পাঠানো হবে। সম্পাদনা: এনামুল হক