ভাস্কর্য সরানো নিয়ে কোনো আলোচনা করেননি প্রধান বিচারপতি
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য সরিয়ে নেওয়ার জন্য ওলামাদের একাংশ দাবি করছে। তারা বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা করেছেন। তবে ওই ভাস্কর্য সরানোর ব্যাপারে সরকার ও আইন মন্ত্রণালয়ের কোনোকিছু বলার ও করার কিছুই নেই। সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক প্রধানও প্রধান বিচারপতি। তাই এই ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে তিনি কোনোকিছু স্থাপন করানো ও সরানোর সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। এই ব্যাপারে অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। আলেমরা যে ভাস্কর্য সরানোর দাবি তুলেছেন এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ও মন্ত্রণালয় প্রধান বিচারপতিকে কোনো অনুরোধ করতে পারবেন না। কিংবা কোনো সিদ্ধান্ত নিতেও বলতে পারবেন না। তিনি যা বলবেন, সেই সিদ্ধান্তই কার্যকর করবেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আলেমরা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য সরানোর জন্য দাবি করে আসছেন। শনিবার এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলেমদের সঙ্গে বৈঠক করার পর প্রধান বিচারপতি কোনো সিদ্ধান্ত দিয়েছেন কি না বিষয়টি নিয়ে। এই ব্যাপারে তিনি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেল কিংবা অন্য কারও সঙ্গে আলোচনা করেননি এবং কোনো নির্দেশনাও দেননি। এই ব্যাপারে সূত্র জানায়, প্রধান বিচারপতি যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করা হবে। তিনি বিষয়টি নিয়ে কোন আলোচনা না করায় ও কোনো নির্দেশনা না দেওয়ার কারণে এখন বিষয়টি যেভাবে রয়েছে সেইভাবেই থাকবে। আগামীতে প্রধান বিচারপতি যদি কোনো সিদ্ধান্ত দেন তাহলে সেই হিসেবে কাজ করা হবে।
আলেমদের আপত্তি ও ভাস্কর্য সরানোর বিষয়টি নিয়ে দাবির বিষয়ে সূত্র জানায়, এটি তো রাতারাতি হয়নি। এটি একটি সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে করা হয়েছে। যখন করা হয়েছে সবাই দেখেছেন। হঠাৎ করে কেন আপত্তি উঠছে এটা বোঝা যাচ্ছে না। পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে এমন মনে করা হচ্ছে কি না এই ব্যাপারে সূত্র জানায়, সেটা যারা দাবি করছে তারাই বলতে পারবেন।
এদিকে আইন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ভাস্কর্যটি যেহেতু মূল ভাস্কর্যের সঙ্গে মিল নেই এবং পরিবর্তন করা হয়েছে। তাতে মূল প্রতীকী বিরাজ করছে না। এই কারণে সেটি না রাখাই ঠিক হবে। যদিও মন্ত্রণালয় থেকে এই ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন বিভাগের কাছে কোনো চিঠি দেওয়া হবে না। কারণ সেই এখতিয়ার মন্ত্রণালয়ের নেই।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলবেন বলে আমেল সমাজের যারা তার সঙ্গে দেখা করেছিল তাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন।
তবে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং দলের মুখপাত্র হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে গ্রিক দেবী থেমিসের যে ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে তা সরানো না সরানোর সম্পূর্ণ এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্টের। এই ব্যাপারে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। হাছান মাহমুদ বলেন, জাতীয় ঈদগাহের সামনে স্থাপিত কোনো ভাস্কর্য যাতে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না করে তা নিশ্চিত করা উচিত। সুপ্রিম কোর্ট একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তারা নিজস্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ ভাস্কর্য স্থাপন করেছে। তা রাখা বা না রাখার সিদ্ধান্তও তাদের নিজস্ব বিষয়।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে যে মতামত দিয়েছেন তা হলো, সুপ্রিম কোর্টের সামনে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান। আর এ জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের স্বকীয়তা রক্ষা করা উচিত। সেখানে গ্রিক ভাস্কর্য রাখা বা না রাখার এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্টের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু যাতে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না লাগে এবং নামাজের সময় তা যেন না দেখা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন।
হেফাজতের দাবি অনুসারে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য সরানো এবং কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদকে স্নাতকোত্তর মর্যাদার ঘোষণা দেওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।
জোটের নেতারা সরকারের এই অবস্থানটিকে অগ্রহণযোগ্য মনে করছেন। তারা মনে করছেন, একবার আলেমদের দাবি অনুযায়ী এটি সরানো হলে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তি আরও উৎসাহিত হতে পারে। এছাড়া সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীর কাছে নতি স্বীকার বলেও মনে করছেন। তারা মনে করছেন, সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীর দাবি মেনে নেওয়া হলে আগামীতে আরও অনেক বিষয়ে দাবি তুলতে পারে। এতে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা এবং বাংলাদেশের ভিত্তিতে আঘাত আসতে পারে।