জার্মানিতে বৈষম্যের শিকার আফ্রিকার ‘গেস্ট শ্রমিকরা’
কামরুল আহসান : তাদের বলা হয় ‘ গেস্ট ওয়ার্কার,’ অতিথি শ্রমিক বা ভাড়াখাটা শ্রমিক হিসেবেই তারা জার্মানিতে পরিচিত। দশকের পর দশক ধরে তারা জার্মানিতে কাজ করছে কিন্তু এখনো তাদের দেওয়া হয়নি পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও নাগরিক অধিকার। বরং সেই প্রাচীন আফ্রিকান দাসের মতোই ব্যবহার করা হয় তাদের।
সেই ১৯৪৯ সালে জার্মানি ভাগ হয়ে যখন পূর্ব জার্মানি ও পশ্চিম জার্মানি গড়ে উঠেছিল তখন ধনতান্ত্রিক পশ্চিম জার্মানি এবং সমাজতান্ত্রিক পূর্ব জার্মানি উভয় পক্ষই ব্যাপক উৎপাদন কার্যক্রম সংগঠিত করার জন্যই তাদের ভাড়া করে এনেছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে। বিশেষ করে মোজাম্বিয়া থেকে। তখন পূর্ব জার্মানি কমিউনিস্ট রাশিয়া শাসিত এবং শ্রমিকদের ব্যাপারে তারা উদারহস্ত, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্যই শ্রমিকৎ শ্রেণির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর, তাই পূর্ব জার্মানি শ্রমিকদের অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করা হয়েছিল। বিশেষত, কিউবা, হাঙ্গেরি, ভিয়েতনামের অন্যান্য কমিউনিস্ট দেশগুলোর সঙ্গে তাদের এক করার চেষ্টা চলছিল। কিন্তু, গত শতকের নব্বইয়ের দশকে রাশিয়া থেকে কমিউনিস্ট সরকারের পতনের পর এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও সমাজতন্ত্র অবলুপ্তির পর পূর্ব জার্মানি ও পশ্চিম জার্মানি বার্লিন দেয়াল ভেঙ্গে এক হয়ে যায়। দুই জার্মানি এক হয়ে গেলেও এক হয়নি সেদেশের মানুষের সঙ্গে এক হতে পারেনি আফ্রিকা থেকে আসা অতিথি শ্রমিকরা। তারা বছরে পর বছর ধরে থেকে গেছে বিতাড়িতই। যদিও তাদের অনেকের আবাস্থল, বংশবিস্তার এখন জার্মানিতেই, তবে তাদের ভবিষ্যত এখনো অনিশ্চিত, প্রতি মুহূর্তেই তাদের যুদ্ধ করতে হচ্ছে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য। এখনো তাদের কাজের ক্ষেত্র সীমাবদ্ধ শারীরিক শ্রম সম্পর্কিত ইমরাত নির্মাণ কাজ সংশ্লিষ্ট বা কলকারখানায়। নেই তাদের উন্নত চিকিৎসা, আবাস্থল ও শিক্ষাব্যবস্থা।
দিনের পর দিন তারা নিপাতিত হচ্ছে আরো গহীন গভীর দরিদ্রতায়। তারা জানে না এর থেকে কী হবে তাদের উত্তরণের পথ। আজ এতো বছর পর নিজের দেশে ফিরে যাওয়াও তাদের উপায় নেই। তাদের পরিণতি যেন তাদের সেই পূর্বপুরুষ ঔপনিবেশিক আমলের দাসদের মতোই। আরব নিউজ