‘কাউয়ার’ পর এবার আওয়ামী লীগে ফার্মের মুরগি ঢুকেছে : ওবায়দুল কাদের
আল হেলাল শুভ : আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের ‘কাউয়ার’ পর এবার ফার্মের মুরগি বললেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, শুধু কাউয়া নয়, দেশি মুরগি হটিয়ে আওয়ামী লীগে ফার্মের মুরগি ঢুকেছে। গতকাল সোমবার দুপুরে মেহেরপুরে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। কিছুদিন আগে ওবায়দুল কাদের সিলেটের এক সমাবেশে ‘সংগঠনে ‘কাউয়া’ (কাক) ঢুকছে’ বলে মন্তব্য করেন। পরে তার এমন বক্তব্য নিয়ে দলে ও দলের বাইরে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা হয়।
গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দল নিয়ে বলেন, শুধু কাউয়া নয়, দেশি মুরগি হটিয়ে আওয়ামী লীগে ফার্মের মুরগি ঢুকেছে। ফার্মের মুরগির কারণে দেশি মুরগি কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। দেশি মুরগি দরকার, ফার্মের মুরগি নয়। ফার্মের মুরগি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। তিনি আরও বলেন, চারদিকে আতি নেতা, পাতি নেতায় ভরে গেছে। তবে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করা চলবে না। তাহলে কাউকে ক্ষমা করা হবে না। দেশ বাঁচাতে হলে, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে।
কিছুদিন আগে সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, প্রচার লীগ, তরুণ লীগ, কর্মজীবী লীগ, ডিজিটাল লীগ, হাইব্রিড লীগ আছে। কথা হাছা, সংগঠনে কাউয়া ঢুকছে। জায়গায় জায়গায় কাউয়া আছে। পেশাহীন পেশিজীবী দরকার নেই। ঘরের ভেতর ঘর বানানো চলবে না। মশারির ভেতর মশারি টানানো চলবে না। তার এমন বক্তব্য নিয়ে দলে ও দলের বাইরে ব্যাপক আলোচনা- সমালোচনা হয়। দলের সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যে অনেকে অবাকও হন বলেও তখন জানায় দলীয় সূত্রগুলো।
মুজিবনগর দিবসের ওই আলোচনা সভায় বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না বলে ১৭ এপ্রিল পালন করে না। অবশ্য তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে কি না, সে সন্দেহ পোষণ করেন তিনি। তিনি বলেন, বিএনপি এখন নালিশ পার্টিতে পরিণত হয়েছে। যাকে পায় তার কাছে সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ করতে থাকে। তারা চোরাবালিতে আটকে গেছে।
বিএনপির মধ্যে ‘ভারত জুজু’ কাজ করছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সর্বোচ্চ সম্মান জানিয়েছেন, এতেই তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। বিএনপির মরা গাঙে আর পানি আসবে না। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। মাথাব্যথা হচ্ছে শেখ হাসিনার প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা নিয়ে।’
সকাল সাড়ে ১০টায় ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ নাসিমসহ আওয়ামী লীগের নেতারা মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর আম্রকাননে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেখানে গার্ড অব অনার গ্রহণ করেন তারা। অভিবাদন শেষে আনসার-ভিডিপির একটি দল ‘হে তারুণ্য রুখে দাঁড়াও’ শিরোনামে গীতিমাল্য উপস্থাপন করে। বেলা পৌনে ১১টার দিকে শেখ হাসিনা মঞ্চে শুরু হয় আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গতকাল সকালে মুজিবনগর দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে তিস্তা চুক্তি না হওয়ার জন্য বিএনপি ‘চক্রান্ত’ করছে। তিনি বলেন, আসলে তিস্তা চুক্তি শেখ হাসিনার আমলে যাতে না হয়, এর জন্য যত রকমের চেষ্টা আছে তা করে যাচ্ছে বিএনপি। কথায় বলে, যাকে দেখতে নাড়ি তার চলন বাঁকা। মোটকথা তাদের উদ্দেশ্য তিস্তা চুক্তি শেখ হাসিনার আমলে যাতে না হয়, এটাই তাদের লক্ষ্য। তিস্তা চুক্তি নিয়ে বিএনপির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাংবাদিকদের কাদের বলেন, বিএনপি হচ্ছে একটা ইস্যু তৈরির দল, এখন তাদের হাতে ভারতবিরোধী ইস্যু। সম্পাদনা: এনামুল হক