হিন্দু-বৌদ্ধ ধর্মভিত্তিক শিক্ষার স্বীকৃতি চান বিশিষ্টজনরা
বিশ্বজিৎ দত্ত : হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও ¯œাতক শ্রেণীর মার্যাদা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বিরা। গতকাল হিন্দু ধর্মাবলম্বি বরেণ্য ব্যাক্তি ও নেতৃবৃন্দ জানান,কওমি মাদ্রাসার ধর্মভিত্তিক দাওরায়ে হাদিস( হাদিসের বাড়ি) শিক্ষাকে ¯œাতোকোত্তর স্বীকৃতি দেয়ার অন্যান্য ধর্মাবলম্বিদের শিক্ষাকেও স্বীকৃতি দেওয়া রাষ্ট্রের দ্বায়িত্ব। হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আগামী ২২ জুন এ বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবি দাওয়া পেশ করবে বলে জানিয়েছেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাণাদাশগুপ্ত। অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, হিন্দু ও বৌদ্ধদের সারাদেশে ধর্মভিত্তিক পড়াশুনা করার অনেকগুলো বিদ্যালয় রয়েছে।এগুলোকে টোল বলা হয়। এই টোলগুলোতে এসএসসি পাশ করার পর ভর্তি হতে হয়। সেখানে সংস্কৃত, পালি ভাষা ছাড়াও হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মবিষয়ক শিক্ষা দেয়ার পর সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এটি পাশ করতে ৩ থেকে ৫ বছর সময় লাগে।এই সার্টিফিকেটটিকে ¯œাতক শ্রেণীর মর্যাদা দেয়া খুবই যৌক্তিক দাবি। তা ছাড়া এই টোলগুলো আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অন্যতম একটি অংশ। আগে প্রত্যেকটি উচ্চ বিদ্যালয়ে একজন পন্ডিত থাকতেন। এই প-িত শিক্ষকরা হিন্দু ও বৌদ্ধ ছাত্রদের সংস্কৃত বা ধর্ম ক্লাস নিতেন।এখন স্কুলগুলোতে হিন্দু বা বৌদ্ধ ধর্ম পড়ানোর মতো কোন শিক্ষক নেই। এসব সমস্যা সমাধানেও হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মভিত্তিক শিক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া দরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙলা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ জানান, একটা সময় দেশে চতুস্পাঠি বিদ্যালয় ছিল। সরকারি সহায়তা ছাড়াই এগুলো পরিচালিত হতো। এইসব বিদ্যালয়ের পাঠ খুবই উন্নত মানের। সংস্কৃত, পালি, দর্শন, সাহিত্য, ধর্ম, ইতিহাস, অর্থনীতি, জ্যোতিষ এসব বিষয়ে পাঠদান করা হতো। এই বিদ্যালয়গুলো শতাব্দির পর শতাব্দি বাংগালী সমাজকে পাঠদান করে আসছে। এটি একটি পরীক্ষিত শিক্ষা ব্যবস্থা।এই শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাঙালী ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত চুতুস্পাঠি শিক্ষাকে সরকারি স্বীকৃতি দেয়া খুবই প্রয়োজন।
রাণাদাশগুপ্ত জানান, পাকিস্তান আমল থেকেই বাংলাদেশে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বিদের ধর্মীয় শিক্ষার জন্য পলি ও সংস্কৃত শিক্ষা বোর্ড রয়েছে। এই শিক্ষাবোর্ডকে সক্রিয় করার জন্য এতোদিন হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায় সরকারের কাছে কোন দাবি জানায়নি। এখানে যারা কাজ করেন, তাদের বেতন মাসে ৩০০ টাকার মতো। সরকার তাদের কোন বেতন দেননা। সরাদেশে ৩০০ শাতাধিত চতুস্পাঠি স্কুল রয়েছে। এখানে ধর্মীয় শিক্ষার উপর ডিগ্রী দেয়া হয়। কিন্তু সরকারিভাবে এই ডিগ্রীকে স্বীকৃতি দেয়া হয় না। আমরা টোলের শিক্ষাকে ¯œাতক শিক্ষার মর্যাদা দেয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে পালি ও সংস্কৃত শিক্ষা বোর্ডকে সরকারি অন্যান্য বোর্ডের সমান মর্যাদা ও সুবিধা প্রদানের ও দাবি জানাচ্ছি।