ভারত বিরোধিতা নয় দেশের স্বার্থ রক্ষায় কথা বলে বিএনপি : মির্জা ফখরুল
শাহানুজ্জামান টিটু: দেশের স্বার্থ রক্ষায় কথা বললে কোনো রাষ্ট্রের বিরোধিতা হয় না। জাতীয় স্বার্থ, মর্যাদা ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এবং জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রথা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখা, বিশ্বায়নের যুগে দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সীমান্ত সমস্যাসহ দুদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিশ্চিত করা এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশেষ করে একটি দেশের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য অপর একটি দেশের স্বার্থ বিঘিœত করে তাদেরকে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা এসব বিষয় নিয়ে যদি কোনো রাজনৈতিক দল কথা বলে তার জন্য সেই দলকে কোনো রাষ্ট্রের বিরোধিতাকারী বলা যাবে না। একইভাবে বিএনপি নিজ দেশের স্বার্থে কথা বলে বলেই বিরোধীপক্ষরা ভারত বিরোধিতা বলে চালিয়ে দেয় এটা যেমন ঠিক না আবার ভারতের সাথে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি, দুদেশের অভিন্ন নদী ও পানি সমস্যা, সীমান্তে বিনা বিচারে মানুষ হত্যা, ফারাক্কা সমস্যাসহ নানা সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সাথে এসব সমাধানে কাজ করা উচিত ছিল কিন্তু ভারত সেটা না করে সমস্যাগুলো বরং জিইয়ে রেখে একের পর এক তাদের স্বার্থ রক্ষায় যা কিছু করার তা তারা করছে। বিএনপির বক্তব্য সেখানেই। দল হিসেবে বিএনপি জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতিনিধিত্ব করছে সেখানে দেশ যখন কোনো রাষ্ট্র থেকে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হবে তখন অবশ্য তার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করা জনগণের দল হিসেবে বিএনপির উপর বর্তায় বিধায় বিরোধীরা বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায় যে বিএনপি ভারত বিরোধিতার রাজনীতি করে। কথাগুলো বলেছেন দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি কোনো রাষ্ট্রের বিরোধিতা করে রাজনীতি করে না। আমরা রাজনীতি করি দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা, দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষার রাজনীতি। এই রাজনীতি করতে গিয়ে আমার দেশ, মাটি ও মানুষের কথা বলতে গিয়ে যদি কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যায় সেটাকে রাষ্ট্রের বিরোধিতা বলা যাবে না। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন স্পষ্টভাবে বলেছেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের কোনো বৈরিতা নেই। অগণিত প্রাণদান ও ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতার কথা আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। সেই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে অর্থনীতি, বাণিজ্য, পানিসম্পদ, জ্বালানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাবলীর নিরসনের নীতিতে আমরা বিশ্বাসী।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের স্বার্থ বির্সজন দিয়ে এক তরফাভাবে যদি সব কিছু দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে সেখানে আমরা কথা বললেই কী কোনো রাষ্ট্রের বিরোধিতা বলে? ভারতের জনগণের সঙ্গে শান্তি ও সহযোগিতার আবহে আমরা পাশাপাশি বাস করতে চাই। কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক দেশ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবেশী বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ব্যাহত করতে ভারতের বিগত শাসকদের একতরফা ভূমিকায় বাংলাদেশের মানুষ ক্ষুব্ধ।
এ প্রসঙ্গে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা, পানির ন্যায্য হিস্যা, সীমান্তে বিনাবিচারে মানুষ হত্যা, ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়া, আমাদের বন্দরগুলো অবাধে ব্যবহার করা এসব বিষয়ে বিএনপি কথা বললেই বলা হয় আমরা নাকি ভারতের বিরোধিতা করছি। আসলে কী তাই? আচ্ছা আপনিই বলুন, একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের যে অধিকার সেই অধিকার রক্ষা ও আদায় করতে গিয়ে যদি বিএনপি কোনো কথা বলে সেটাকে কী বলা হবে। রিজভী বলেন, তিস্তা চুক্তি হলো না ভারতের পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোগিতা না পেয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা সেই তিস্তার পানি ভাগাভাগির করার সাহস করছে না। সেখানে যদি তারা তাদের দেশের স্বার্থ রক্ষায় একযোগে কাজ করতে পারে তাহলে আমরা আমাদের দেশের পক্ষে, আমাদের মানুষের পক্ষে কথা বললে আমরা কেন একটা দেশের বিরোধী হব। এগুলো বলে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু এদেশের জনগণ এসব অপপ্রচারে বিশ্বাস করে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, শুধু ভারত নয় বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও যদি বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় ক্ষুণœ হয় তাহলে অবশ্যই বিএনপি এর প্রতিবাদ করবে। সম্পাদনা: এনামুল হক