পোশাকশিল্পে নারীর শ্রম মূল্যায়িত হয় কী?
মো. ওসমান গনি
জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি খাত হলো পোশাকশিল্প। আর এ পোশাকশিল্পে জড়িত শ্রমিকদের বেশিরভাগ হলো নারী শ্রমিক। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের গুণগত মান ভালো হওয়ার কারণে দিনদিন তৈরি পোশাকের নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। রপ্তানি বাণিজ্যে বাংলাদেশর পোশাকশিল্পের রয়েছে একচ্ছত্র আধিপত্য। কেবল রপ্তানি বাণিজ্যে নয়, এর সঙ্গে জড়িত আছে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। সারাবিশ্বে পোশাক খাতে বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে।
একসময় বাংলাদেশ ছিল কৃষিনির্ভর অর্থনীতির দেশ। বর্তমানে অর্থনীতির উন্নয়নের খাতে যোগ হয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প। এই পোশাকশিল্পই আজ বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে পরিচয় করে দিয়েছে নতুনভাবে। বাংলাদেশের পোশাক উন্নয়ন ও শিল্পোন্নয়নের মাধ্যমেই অর্থনীতির উন্নতি সুযোগ সৃষ্টি হয়। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের প্রায় ২০টির অধিক দেশে পোশাক রপ্তানি করে থাকে। সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে থাকে যুক্তরাষ্ট্রে। যা মোট রপ্তানির প্রায় ৫৬%। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের বৃহত্তর বাজার হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
অতীতে দেশে পোশাকশিল্পে কিছু দুর্ঘটনার কারণে শ্রমিকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বহু শ্রমিক মারা গেছেন। কিন্তু যে দুর্ঘটনা গোটা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে সেটি হলোÑ ২০১৩-তে রানা প্লাজা ট্রাজেডি। ১১শ-এর অধিক শ্রমিক নিহত হয়। যার জন্য সুষ্ঠু কাজের পরিবেশের অভাব দেখিয়ে অনেক বিদেশি ক্রেতা চলে যায়। যা আমাদের পোশাকশিল্পকে নাড়া দিয়েছে। শ্রমিকরা আজ নিরাপত্তা নিয়েই বেশি আতঙ্কিত। নিরাপত্তাহীতার কারণে আজ শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ছে। এই ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে এবং জাতির অস্তিত্বের স্বার্থেই সকল দুর্ঘটনার তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার হওয়া প্রয়োজন। আমাদের জন্য আশার আলো হলো এক্ষেত্রে সরকারের সুদৃষ্টিতে অনেক উন্নতি সম্ভব হয়েছে। এতে করে কর্ম পরিবেশ ফিরে আসায় অনেক ক্রেতাই তাদের বিনিয়োগে আস্থা ফিরে পেয়েছে।
উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি, উদ্ভাবন, কাজের পরিবেশ সৃষ্টি শ্রমিক মালিকের সম্পর্কের উন্নয়ন আরও ভালো হলে এই শিল্পের উন্নয়ন সম্ভব। বর্তমানে পোশাকশিল্প খাতটি অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্ভাবনাময়। এদেশের শ্রমিকের মজুরি তুলনামূলকভাবে কম। যা স্বল্পমূল্যে অধিক উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি করে। দেশের গার্মেন্টস সেক্টরে ৪০ লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করে, যার বেশিরভাগই নারী। পোশাকশিল্পকে মহিলা শ্রমিকরা তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক পরিচয় দিয়েছে। তারা দেখিয়েছে তাদেরই নিপুণ হাতে তৈরি পোশাক বাংলাদেশকে বিশ্বে নতুনভাবে পরিচয় করে দিয়েছে। কিন্তু শুরুতে মেয়েদের পোশাকশিল্পে যোগ দেওয়া সুনজরে দেখা হয়নি এবং পরিবার তথা সমাজে নানা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি পাল্টেছে এবং পরিবারে তাদের মতামতকে আজ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। পরিবর্তন এসেছে এসব শ্রমিকদের শিক্ষা ক্ষেত্রেও।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান