মমতা কি বাংলাদেশকে অবহেলা করল না?
রুহিন হোসেন প্রিন্স
ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। আমরা তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক চাই। কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্য করছি, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নে তারা সবসময় ভূমিকা রাখছে বলে মনে হয় না। প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরের আগে আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছিলাম, আমাদের প্রধান চাওয়া হচ্ছেÑ তিস্তার পানি। যেটা আজ থেকে প্রায় এক যুগ আগেই নির্ধারিত হয়ে আছে। সে ব্যাপারে তারা চুক্তি করলই না। বরং কতগুলো কনফিউশন সৃষ্টি করল। যে কনফিউশনে বাংলাদেশের মানুষ হতাশ। প্রসঙ্গক্রমে তারা এটা না করে বাংলাদেশের সঙ্গে তারা যে প্রতিরক্ষা সমঝোতা করল সেটাও বাংলাদেশের মানুষ অপ্রয়োজনীয় মনে করে। এটার এখন প্রয়োজন ছিল বলে মনে করে না। আমিও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না। ঋণের নামে যে টাকা দিল ভারত তার মধ্যে যে টাকা অস্ত্র কেনা এবং নানা খাতে দিল এ ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত স্পষ্ট ধারণা আসেনি। আমাদের আরও বিস্তারিত দেখতে হবে। কিন্তু সাধারণভাবে বলা যায়, যদি শুধুমাত্র অস্ত্র কেনা খাতে ঋণ দিয়ে থাকে, এবং সেই অর্থ দিয়ে ভারত থেকেই অস্ত্র কিনতে হবে, তাহলে আমার বিবেচনায় এটাও অপ্রয়োজনীয় এবং অগ্রহণযোগ্য। কারণ ভারত নিজেই একটা বড় অস্ত্র আমদানিকারক দেশ। এবং তাদের কাছে এমন কোনো উন্নত অস্ত্রের খবর আমরা জানি না যা তারা বিশ্বে রপ্তানি করে। এবং বাংলাদেশকে সেটা কিনতে হবে। আমি মনে করি প্রতিরক্ষা সমঝোতার নামে যে ঘটনা ঘটল এটা বাংলাদেশের জন্য মোটেই কাক্সিক্ষত ছিল না।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে আমরা দেখছি, ভারতের ডাবল স্ট্যান্ড আরও বেশি বহিঃপ্রকাশ হলো। কারণ তিস্তা চুক্তি নির্ধারিত ছিল। এই চুক্তি হওয়ার আশা করেছিল মানুষ। আমরা আগে থেকেই পানির একটা অংশ পেতাম। এই পানির আরও বেশি পরিমাণ পাওয়া দরকার। এটা হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে।
একটা নদী চালু থাকা অবস্থায় যে পানি দরকার সেটা আমাদের দিতে হবে। দ্বিতীয়ত হচ্ছেÑ যে অববাহিকা অঞ্চলজুড়ে এ এলাকার জনগোষ্ঠী তার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ন্যায্যতার ভিত্তিতে এই পানি বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। এটা একটা আন্তর্জাতিক আইন। সুতরাং আন্তর্জাতিক আইনটা ফলো করলেই তিস্তায় কি পরিমাণ পানি পাওয়া যাবে আমরা সেটা নিশ্চিত করতে পারতাম। কিন্তু আমরা এক্ষেত্রে দেখলাম যে বিলম্ব হচ্ছে সেটা কেন্দ্রীয় সরকারের। কেন্দ্রীয় সরকার তারা রাজ্য সরকারের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের দায়িত্ব তো রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলা না। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বলা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবার যে আশ্বাস দিলেন তাতে আমাদের মন গলার কিছু নেই। তিনি বরং এবার এই তিস্তা চুক্তি দিতে পারলে মানুষের বন্ধুত্বের সম্পর্ক যতটুকু এগিয়ে নিতে পারতেন, এ ব্যাপারে তিনি সফল হলেন না। একইসঙ্গে মমতাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হলো। মমতা পানি দেওয়ার বদলে বরং যেভাবে নাকচ করে দিয়ে কথাটা বললেন, এটা একেবারে অগ্রহণযোগ্য। এটা বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অবজ্ঞার শামিল বলে আমার কাছে মনে হয়। একই সঙ্গে তিনি আরও কয়েকটি নদীর নাম বলে যে বিতর্কের জন্ম দিলেন এটা একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। আমরা বরং মনে করি তিস্তার ন্যায্য পানি নিশ্চিত দিতেই হবে তাদের। একই সঙ্গে যে সব অভিন্ন নদী রয়েছে তারও ন্যায্য হিস্যা আমাদের দিতে হবে। পানি বণ্টনসহ অন্যান্য আরও অনেক বিষয় নিয়ে নানা ধরনের সমস্যা ঝুলে আছে দুই দেশের মধ্যে, সে সব বিষয়ে অবিলম্বে আলোচনা হওয়া উচিত। ন্যায্যতা ভিত্তিতে সব সমস্যার সুরাহা হওয়া দরকার বলেই আমরা মনে করি।
পরিচিতি: কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সিপিবি
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান