বাসের ভাড়া বৃদ্ধির অপচেষ্টা
ইকবাল হাবীব
গণপরিবহনে সিটিং সার্ভিস হলো একটা পদ্ধতি। পয়েন্ট টু পয়েন্ট সহজ। এবং এতে অর্থমূল্য একটু বেশি দিতে হয়। কিন্তু যারা সময়টাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন অর্থাৎ সকাল বেলায় অফিস যাতায়াতে যারা সিটিং সার্ভিস বাস ব্যবহার করেন, তারা একটা সুবিধা পান। এখন গণপরিবহনে না আছে কোনো পরিকল্পনা অথবা বিনিয়োগ। এরকম একটা পরিস্থিতিতে মানুষ যে সেবাগুলো পেত অর্থাৎ অফিস যাত্রীরা হয়তো এই পয়েন্ট টু পয়েন্ট সার্ভিসে চলে যেতে পারতেন। যাদের সময় নিয়ে গেলেও কোনো সমস্যা হতো না তারা লোকাল বাসে যেতেন। এই পদ্ধতি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি। পৃথিবীর যেকোনো দেশেই যান সেটা দেখা যাবে। সিঙ্গাপুর থেকে শুরু করে ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর, ভারত সব জায়গায় এই পদ্ধতি আছে। এখন যে ধারণায় সিটিং সার্ভিস বন্ধ করেছেন কর্তৃপক্ষ তাতে যাত্রীদের সুবিধা বাড়ায় না, সংকুচিত করে। যদি বাসের পরিমাণ কম থাকে তাহলে লোকাল বাসের পরিমাণ বাড়ানো হোক। এবং লোকাল বাস সার্ভিস শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হোক। সেগুলোর ব্যাপারে মালিক সমিতি, শ্রমিকদের কোনো ধরনের ঐক্যবদ্ধতা নেই। না আছে বাসকে শৃঙ্খলা করা, প্ল্যান চেঞ্জ করা, রুট চেঞ্জ করা, যেখানে সেখানে বাস থামানো বন্ধ করা, বেপরোয়াভাবে গাড়ি না চালানো, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা সেই সমস্ত ব্যাপারে কোনো যৌথ উদ্যোগ দেখি না। কিন্তু জনগণকে পীড়িত করার জন্য, তাদের বৈচিত্র্য সুবিধাগুলো সংকুচিত করার জন্য তাদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতার শেষ নেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিআরটিএ-এর মতো সরকারি সংগঠন। যাদের মূল দায়িত্ব গণপরিবহনের ম্যানেজমেন্ট বা বন্দোবস্ত করা। এবং নিয়ন্ত্রণ করা। নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এই যে তাদের অপারগতা, যত্রতত্র গাড়ি চালায় চালকেরা, বাস স্টপেজ নেই, চালকেরা রাস্তা ব্লক করে গাড়ি চালায় এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে সিটিং-এর নামে, এমনকি সিটিং না হলেও। এগুলোকে ঠিক না করে সব লোকাল বলে চালিয়ে দিল। আবার এগুলো করতে গিয়ে সিটিং বাসের ভাড়াটাকে লোকালে চাপিয়ে দিল। তার মানে বাসের ভাড়া বৃদ্ধির এটি একটি অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিআরটিএ-এর উচিত ছিল সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিশ্চিত করা। সেটা তারা করতে পারল না বরং সিটিং সার্ভিসের নামে এখন লোকাল সার্ভিস চালু করে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ানো হলো। এই সংকট নিরসনে দুটো কাজ পরিষ্কার করতে হবে। বিআরটিএকে শক্তিশালী করতে হবে। যারা অপারগ, পারছে না তাদেরকে অপসারণ করতে হবে। বিআরটিএর পলিসি ম্যানেজমেন্টকে ঢেলে সাজাতে হবে। এই যে আমরা বলছিÑ রুট মেনটেইন করার কথা, বাস স্টপেজ করা, যেখানে সেখানে গাড়ি না থামানো এ সব দ্রুততম সময়ে ঠিক করা একটি কাজ। দ্বিতীয় কাজ হচ্ছেÑ বাস মালিক সমিতিকেও দায়িত্ব নিতে হবে। এই বেসামাল কার্যক্রম বন্ধ করা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করা এবং জরুরি ভিত্তিতে আরও বেশি বাস নামানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা। জরুরি ভিত্তিতে আরও বেশি বাস নামানো। সড়কের সক্ষমতা অনুযায়ী যে পরিমাণ গাড়ি চলতে পারে তার আনুপাতিক হার নির্ধারণ করা বিআরটিএর দায়িত্ব। অর্থাৎ কয়টা বাস আছে, কয়টা ট্রাক আছে, কয়টা প্রাইভেটকার আছে এবং আনুপাতিক হার অনুযায়ী নগরীর সড়কে চলাচল করা যানের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা।
পরিচিতি: স্থপতি
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি
সম্পাদনা: আশিক রহমান