যাত্রী হয়রানি অব্যাহত পরিবহন মালিকরা অনেক প্রভাবশালী : ওবায়দুল কাদের
আরিফুর রহমান তুহিন: বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মশিউর রহমানের ‘সড়কে গাড়ি না নামালে রুট পারমিট বাতিল করা হবে’ এমন হুমকি দেয়ার পর মঙ্গলবার সকালে আগের দিনের তুলনায় রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। ‘পরিবহন মালিকরা অনেক প্রভাবশালী’ সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের পর আবারো অনেক পরিবহন বন্ধ করে দেয় মালিক পক্ষ। যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত গাড়ি না পেয়ে আবারো ভোগান্তিতে পরে সাধারণ যাত্রীরা। সাথে আছে অতিরিক্ত যাত্রী উঠানো, বাড়তি সময় স্টপজে অপেক্ষা করা এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ নানাভাবে যাত্রী হয়রানির অভিযোগ।
সকালে ওবায়দুল কাদের সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, গাড়ির সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতরা সামান্য লোক নয়। এরা প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর। এদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিলে মালিকরা গাড়ি বন্ধ করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেন। তখন সরকারের অভিযান ব্যর্থ প্রমাণিত হয়। এর সঙ্গে অনেক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে। তিনি আরো জানান, চলমান অভিযান জনস্বার্থে পর্যালোচনা করতে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা কারা এ বিষয়ে মন্ত্রী কিছু বলেননি। সাধারণ যাত্রীদের বক্তব্য অনুযায়ী সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের কারণে পরিবহন মালিকরা আরো নৈরাজ্য করার সুযোগ পাবে। সরকারের উচিৎ এই সকল কুচক্রীমহলের মুখোশ উন্মোচন করে তাদের আইনের আওতায় আনা উচিৎ।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় বিআরটিএ চেয়ারম্যানের হুমকির পর মঙ্গলবার সকালে আগের দিনের তুলনায় রাস্তায় বাসের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তবে যাত্রীদের জন্য তা ছিল অপ্রতুল। বেলা ১২টার দিকে সড়কমন্ত্রীর বক্তব্যের পরপরই রাজধানীর সড়কগুলোতে পরিবহনে ভাটা পরে। বিআরটিএ’র রুট পারমিট বাতিলের হুমকির তোয়াক্কা না করে পরিবহন মালিকরা তাদের গাড়িগুলো ডিপোতে নিয়ে বন্ধ রেখে আবারো অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট তৈরি করে। দেখা দেয় তীব্র পরিবহন সংকট। উত্তরা, গাবতলী, গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, মিরপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায় সেখানকার ডিপোগুলোতে বিভিন্ন কোম্পানির বাস পার্কিং করে রাখা হয়েছে। ফলে দীর্ঘক্ষণ বাসের জন্য বিভিন্ন বাস স্টপেজে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কর্মমুখী যাত্রীদের। গন্তব্যের রুটের একটি বাস আসলেই সকলে ছুটে যাচ্ছে বাসে উঠার জন্য। প্রত্যেকটি গাড়িতেই ঠাসাঠাসি করে যাত্রী তোলার অভিযোগ পাওয়া যায়। সাথে আছে একটি স্টপেজে অকারণে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার অভিযোগ।
সব থেকে বেশি অভিযোগ পাওয়া যায় মিরপুর রুটে চলাচলরত পরিবহনগুলোতে। মিরপুর থেকে চলাচলরত প্রায় সকল রুটের গাড়িগুলো আগের সিটিং সার্ভিসের নিয়মানুযায়ী ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এদের মধ্যে প্রজাপতি, বসুমতি, বিহঙ্গ, বিকাশ অন্যতম। উত্তরা থেকে মিরপুর ১০ নম্বরের যাত্রী মো: শাকিল জানান, সিটিং সার্ভিস বন্ধে আমাদের কোনো লাভ হয়নি। বরং কষ্ট আরো বেড়েছে। এখনো আগের মতো ৩০ টাকা হারে ভাড়া নিচ্ছে। অথচ আগে আরামে বসে যেতে পারতাম। কোথাও দাঁড়াতো না। আর এখন ধাক্কা-ধাক্কি করে কোনোভাবে উঠেছি। প্রত্যেকটি গাড়ি যাত্রীতে বোঝাই থাকার পরেও একেক স্টপিজে ৪-৫ মিনিট করে দাঁড়িয়ে থাকছে। মনে হচ্ছে সিটিং সার্ভিস বন্ধের প্রতিশোধ নিচ্ছে পরিবহন শ্রমিকরা।
এদিকে ভাড়া আদায় নিয়ে বিভিন্ন বাসে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাত্রীদের দাবি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে পরিবহন মালিকরা বাসগুলোতে শ্রমিক নামে মাস্তান ভাড়া করে রাখছে। শ্রমিকদের চাহিদা অনুযায়ী ভাড়া না দিলে কয়েকজন মিলে চড়াও হওয়ার দাবীও করেন সাধারণ যাত্রীরা। পরিবহন শ্রমিকদের দাবি যাত্রীরা বিআরটিএ’র চার্ট অনুযায়ী ভাড়া তো দিচ্ছেই না উল্টো গাল-মন্দ করছে। অনেক যাত্রী তাদের মারধর করেছে বলেও জানান বিভিন্ন বাসে কর্মরত শ্রমিকরা। সম্পাদনা: এনামুল হক