শ্রমিকদের অভিযোগ সাভারে ট্যানারি শিল্পে দূষিত হচ্ছে তুরাগ, ধলেশ্বরী
কমল সরকার : বুড়িগঙ্গাকে দূষণের হাত থেকে রক্ষার কথা বলে শিল্প বন্ধ করা হলেও কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে দূষিত হচ্ছে তুরাগ এবং ধলেশ্বরী নদীর পানিÑ এমনই অভিযোগ করেছেন হাজারীবাগ ট্যানারি শিল্পের কর্মহীন শ্রমিকরা।
আদালতের নির্দেশে ট্যানারিগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে নানা কর্মসূচি চালিয়ে আসা শ্রমিকরা গতকাল মঙ্গলবার হাজারীবাগে এক সমাবেশ করে এ অভিযোগ করেন। এ সমাবেশে মালিকপক্ষের লোকজনও উপস্থিত ছিলেন। ট্যানারি মোড়ে শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন ও চামড়াশিল্প রক্ষা ঐক্য পরিষদ। চামড়াশিল্পের শ্রমিকদের পাশাপাশি মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরাও এতে বক্তব্য রাখেন।
দীর্ঘ মামলার পর সাভারে কারখানা স্থানান্তরের উদ্দেশ্যে হাজারীবাগের গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় গত ৮ এপ্রিল।
সমাবেশে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে সাভারেও পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। বুড়িগঙ্গাকে দূষণের হাত থেকে রক্ষার কথা বলে শিল্প বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু সাভারে এখনকার যে অবকাঠামো তাতে তুরাগ, ধলেশ্বরী নদীকে দূষণমুক্ত রাখা যাচ্ছে কি? সেখানে তো পর্যাপ্ত পদক্ষেপের অভাবে আরও মারাত্মকভাবে দূষণ হচ্ছে। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরাতে পরিবেশবাদীদের তৎপরতার দিকে ইঙ্গিত করে এই শ্রমিক নেতা বলেন, পরিবেশবাদীরা এখন ঠিকই চুপ হয়ে গেছে।
হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তরের পর সাভারের উপর দিয়ে প্রবাহিত ধলেশ্বরী নদী যেন বর্জ্য দূষণের কবলে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে সরকারকে ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। সমাবেশে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও নবগঠিত ঐক্য পরিষদের কো-চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে হাজারীবাগের কারখানা অচল করার পর বুড়িগঙ্গা কি এখন দূষণমুক্ত হয়ে গেছে?
স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় থাকা একটা শিল্পকে চক্রান্ত করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাব শুধু মালিকদের উপর নয়, শ্রমিক ও সাধারণ জনগণের উপরও পড়বে। এর জন্য বিসিক ও পরিবেশবাদীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। মালিক সমিতির নেতার সঙ্গে এক সুরে শ্রমিক নেতা মালেকও বলেন, ‘বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে তাদের এদেশীয় দোসররা চামড়াশিল্পের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। দেশের একটি চলমান শিল্পের ৩০ হাজার শ্রমিক আজকে বেকার হয়ে আছে।
বিসিক সাভারে আধুনিক ও পরিবেশসম্মত চামড়া শিল্পনগরী গড়ার কথা বললেও শ্রমিকদের জন্য কোনো সুযোগ সুবিধা না থাকার সমালোচনা করেন মালেক।
হাজারীবাগের ৬০ থেকে ৭০ হাজার একর জমিতে যে কারখানাগুলো ছিল, তাদের জন্য সাভারে ২০০ একর জমির ব্যবস্থা করা হলো। শ্রমিকদের আবাসনের বিষয়টি সেখানে নেই। হাসপাতাল, খেলার মাঠ, আবাসন ব্যবস্থা নেই। তাহলে কী করে এটা আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব শিল্পনগরী হয়? বেকার শ্রমিকরা সেটা জানতে চায়। পরিবেশ রক্ষার নামে হাজারীবাগে যে মানবিক বিপর্যয় ঘটানো হয়েছে সেজন্য বিসিক ও পরিবেশবাদীদের জবাবদিহি করতে হবে। পরিস্থিতির উত্তরণে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিসিকের দায় দায়িত্ব আছে। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কিছুই বলছে না।
শ্রমিক নেতা আক্তার হোসেন বলেন, শুধু মালিকদের কথা বিবেচনায় সাভারের এই চামড়া শিল্পনগরী। সেখানে স্কুল নেই, হাসপাতাল নেই, শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা নেই।
সমাবেশের সভাপতি শ্রমিক নেতা আবুল কালাম আজাদ বলেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ফলে হাজারীবাগে ভূতুড়ে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অথচ সাভারে এখনো পরিবেশ রক্ষা করে শিল্প চালানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
১৫ দিনের মধ্যে তারা সব ঠিক করবে বললেও এটা একটা ভাঁওতাবাজি। এই সময়ের মধ্যে তারা সাভারের কর্মক্ষেত্রে প্রস্তুত করতে পারবে না।
গত বছর শ্রম মন্ত্রণালয়ের মালিক-শ্রমিকদের বৈঠকে যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছিল, তা এক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। কিন্তু দেড় বছরেও তা বাস্তবায়িত হয়নি বলে ক্ষোভ জানান মালেক।
চুক্তিতে প্রতিটি কারখানায় ৪০ শতাংশ শ্রমিকের চাকরি স্থায়ী করার কথা। কোনো কারখানা এখনো তার বাস্তবায়ন করেনি বলে সমাবেশ থেকে জানানো হয়।
ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন শ্রমিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিকদের নিয়োগপত্র ও প্রত্যায়নপত্র দিতে হবে। যেসব মালিক তা মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, আমরা যে বিপদে পড়েছি তা থেকে উত্তরণের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আগের চেয়ে অনেক দ্রুতগতিতে সমস্যার সমাধান করতে হবে। শ্রমিকদের অভয় দিয়ে তিনি বলেন, সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে চামড়াশিল্পে ৩০ থেকে ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। পুরনো লোকদের বাদ দিয়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাবে না। সম্পাদনা: শিমুল মাহমুদ