বদ্বীপের প্রতিবেশ আর সভ্যতার ধারাবাহিকতা…
ফিরোজ আহমেদ
তিস্তায় পানি কোথায়, যে দেব? মমতার এই কথা শুনে নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রের কথা মনে পড়ছে। তারুণ্যে তিনি ছিলেন ফারাক্কাবিরোধী মানুষ। কিন্তু ফারাক্কা থেকে পানি সরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের নানান স্থানে খাল কেটে, সেই জল দিয়ে কৃষিকাজ, নৌ চলাচল, মৎস্যচাষের বন্দোবস্ত হয়েছে। চার দশকে গড়ে উঠেছে নতুন বাস্তুসংস্থান, নতুন প্রকৃতি। রাজশাহী অঞ্চল মরুভূমি হয়ে যাক, সুন্দরবন লবণাক্ততায় খাক হয়ে যাক, এই যে বাড়তি পানির ওপর নির্ভরতা ভারতে তৈরি হয়েছে, এখন কি আর এত সহজ পদ্মায় পানি দেওয়া?
তিস্তার কথাও একই। বিশ বছরে যে নতুন নির্ভরশীলতা তিস্তার চুরি করা পানির ওপর তৈরি হয়েছে, হতে থাকবে ভারতের নানান স্থানে, রংপুর-কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাটে তার প্রতিকূল প্রভাব যতই গভীর হোক, ‘আজ পাচ্ছি-কাল পাচ্ছি পরশু পেলেও পেতে পারি’ করে সরকারগুলো যে আমাদের কি গভীর বিপদের মুখে, স্থায়ী বঞ্চনার মুখে, সম্ভাব্য একটা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের উত্থানের মুখে ঠেলে দিচ্ছে, গোটা দেশকে আসলে পানিহীন একটা মরুভূমি বানিয়ে ফেলছে, তার কোনো তুলনা মিলবে না।
ভারতকে চাপ দিয়ে ন্যায্য পাওনা আদায় করতে পারে এমন দেশপ্রেমিক শক্তির উত্থান বিলম্বিত হলে প্রতিবেশগত দিক দিয়ে আমাদের বহু বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে। যেকোনো অবস্থা থেকেই দেশকে পুনর্গঠন করা সম্ভব, ইতিহাস আর অর্থনীতি জ্ঞান আমাদের সেই শিক্ষা দেয়। কিন্তু তার আগে আমরা যা হারাচ্ছি, হাজার হাজার বছরের পানি-পলির প্রেমে মমতায় গড়ে ওঠা বদ্বীপের প্রতিবেশ আর সভ্যতার ধারাবাহিকতা, সেই ক্ষতি অপূরণীয়।
লেখক: কেন্দ্রীয় সদস্য, গণসংহতি আন্দোলন
ফেসবুক থেকে