সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা আওয়ামী লীগে ‘কাউয়া’র পর ‘ফার্মের মুরগি’ কারা ?
আল হেলাল শুভ: আওয়ামী লীগে ফার্মের মুরগি ঢুকেছে। ‘কাউয়ার’ পর দলের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের তৃণমূলসহ সর্বস্তরে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, কাউয়া ও ফার্মের মুরগি দু’টোই অনুপ্রবেশকারী অর্থে বলেছেন সাধারণ সম্পাদক। দলের তৃণমূল মনে করে, দলের মধ্যে যদি সত্যি অনুপ্রবেশকারী ঢুকে থাকে, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট জরিপ হওয়া প্রয়োজন। এর আগে আওয়ামী লীগে ‘কাউয়া’ ঢুকেছে বলে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সোমবার দুপুরে মেহেরপুরে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের দলের সাংগঠনিক অবস্থা বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, শুধু কাউয়া নয়, দেশি মুরগি হটিয়ে আওয়ামী লীগে ফার্মের মুরগি ঢুকেছে। ফার্মের মুরগির কারণে দেশি মুরগি কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। দেশি মুরগি দরকার, ফার্মের মুরগি নয়। ফার্মের মুরগি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। চারদিকে আতি নেতা, পাতি নেতায় ভরে গেছে। দলের সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে। দলের তৃনমূলের সঙ্গে বিভিন্ন স্তরে প্রশ্ন উঠেছে কাউয়ার পর ফার্মের মুরগি বলতে কি বুঝিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ফেসবুকসহ অন্য সামাজিক গণমাধ্যম গুলোতেও এ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা। আওয়ামী লীগের তৃণমূল মনে করে, দলের সাধারণ সম্পাদক ফার্মের মুরগি বলতে দলের মধ্যে থেকে সুবিধা ভোগী নেতা-কর্মীদের বুঝিয়েছেন। যারা দলে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি-জামায়াত, বিভিন্ন বাম দল এবং জাতীয় পার্টি থেকে দলে এসে দীর্ঘ প্রায় দশ বছরে তাদের বিপুল অর্থ ভা-ার তৈরি করেছে। আর দেশি মুরগি বলতে তিনি দলের সৎ ও ত্যাগী কর্মীদের বুঝিয়েছেন। যারা দলের গভীর বিপদের সময়ও আস্থা অর্জন করেছিলেন। সেদিক থেকে দলের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের সঙ্গে এক মত হচ্ছেন দলের তৃণমূল।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলের বিভিন্ন পর্যায়ে জামায়াতসহ অন্যদল থেকে অনেকেই দলে এসেছেন। তাদের অনেকেই বিভিন্ন খাতে সিন্ডিকেট তৈরি করে বিপুল অর্থের পাহাড় গড়েছেন। দলের এসব নেতা পরিচয়ধারীর কারণেই আওয়ামী লীগের পরিশ্রমী নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন পর্যায়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। অথচ এই অনুপ্রবেশকারী নেতাদের নামে বিভিন্ন অপরাধের মামলাও রয়েছে। তারা মূলত দলের সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও নেতাদের সান্ধিধ্যে থেকে ওই মামলা থেকে বাঁচতে বিশেষ সুবিধা নিয়ে থাকেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাদেরকেই ফার্মের মুরগি বলে বুঝিয়েছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ন আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, দলে সাধারণ সম্পাদক কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এই কথাটি বলেননি। শুনতে খারাপ লাগলেও তিনি মূলত বোঝাতে চেয়েছেন দলের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। দল দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় এ জন্য দলে কিছু অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। ‘কাউয়া’ ও ‘ফার্মের মুরগি’ এই দুটো বলতেই দলের সাধারণ সম্পাদক অনুপ্রবেশকারী বোঝাতে চেয়েছেন বলেও তিনি মনে করেন।
তবে আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ফার্মের মুরগি বলতে তিনি আসলে দলে থাকা সুবিধাভোগীদেরই বুঝিয়েছেন। তবে তার এই বক্তব্য মূল্যায়ন করা বেশ কঠিন।
তবে একই সঙ্গে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের মুরগি বলে সম্বোধন করায় তৃণমূলের অনেকে তার সমালোচনাও করেছেন। তৃণমূলের ওই নেতা-কর্মীরা মনে করেন, সাংগঠনিকভাবে অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়নের ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য সভা সমাবেশে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মুরগির সঙ্গে তুলনার করার কোনো প্রয়োজন পড়ে না। তৃণমূলের ওই নেতা-কর্মীরা মনে করেন, দলে কাউয়া বা ফার্মের মুরগি যাই ঢুকুক না কেন, দায় তো দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরেরই। একই সঙ্গে দলের কাউয়া ও ফার্মের মুরগির অনুপ্রবেশের রাস্তা বন্ধ করার পক্ষেও ওই সব তৃণমূল নেতা-কর্মী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের তৃণমূলের এক নেতা দলের মধ্যে এসব নিয়ে অনেক আলোচনা ও সমালোচনা রয়েছে। তবে দলের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য তো সত্যি। দলে সুবিধাভোগী শ্রেণি গড়ে উঠেছে। তবে দেশি মুরগি বলায় দলের ত্যাগী নেতারা অনেকেই মনোঃক্ষুন্ন হয়েছে। সম্পাদনা: এনামুল হক