শাবানের আমল ও ফজিলত
হাবীবুল্লাহ সিরাজ
আসছে মাহে রমজান। আল্লাহপ্রেমী মুমিন বান্দাদের অধীর আগ্রহে কাটে রমযান পূর্ব সময়গুলো। কখন আসবে রমযান! এক নীরব ব্যাকুলতায় ছটফট করে আমলপ্রিয় মুমিন বান্দা। একদিকে আল্লাহ হুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমযান পড়তে থাকে, অন্য দিকে শারীরিক প্রস্তুতি ও কর্মের ঝামেলা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে থাকে। আর নিজেকে সমস্ত ব্যস্ততা থেকে মুক্ত করার উত্তম সময় হলো শাবান। শাবান মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে হজরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রমজান ও রজব মাসের মধ্যবর্তী মাস এই শাবান মাস। এ শাবান সম্পর্কে মানুষ গাফেল ও উদাসীন। অথচ এ মাসে বান্দার আমলনামা আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। আমি চাই আমার আমল এমন অবস্থায় পেশ করা হোক যে, আমি রোজাদার (সুনানে নাসায়ি) অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা এ মাসে সারা বছর মৃত্যুবরণকারী মানুষের নাম লিপিবদ্ধ করেন (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি চাই আমার নাম এমন অবস্থায় লিপিবদ্ধ করা হোক যে, আমি রোজাদার)
উল্লিখিত দুই হাদিস দ্বারা বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়েছে, শাবান মাসে রোজার গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে অন্য নফল আমলের তুলনায় রোযা (নফল) বেশি রাখতেন। এ ছাড়াও রোযা রাখা এ কারণে কর্তব্য যে, সামনে মহিমান্বিত মাস রমযান। রমযান মাসের প্রস্তুতিস্বরূপ এ মাসে রমযান মাসের আমল করা। যেন রমযান শুরু হলে হঠাৎ করে রোযা রাখার কারণে শরীরিক কোনো অসুবিধার মধ্যে পড়তে না হয়। যদি আগে রোযার হালকা অভ্যাস থাকে তাহেলে রমযান মাসে অসুবিধায় পড়তে হবে না। আর যদি অভ্যাস না থাকে তাহলে হয়তো রমযান মাসে অসুবিধায় পড়তে হতে পারে। এখানে একটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, যারা নবীজীর আমলের মতো এ মাসে রোযা রাখেন ১৫ শাবানের পর থেকে আর রোযা না রাখা। বিশেষ করে শেষের দুই-তিন দিন। এর দু’টি কারণ, একটি হলো যে, যদি শাবান মাসেই রোযা রেখে ঘটনাচক্রে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে রমযান মাসের রোযা রাখতে তার খুব কষ্ট হবে বা অসম্ভব হয়ে পড়বে, যা কখনো কাম্য নয়। দ্বিতীয়ত, শেষের দিনগুলো সন্দেহপূর্ণ। রমযান না শাবান! তবে তাদের জন্য অনুমতি আছে, যারা নিয়মিত সপ্তাহের দুই-তিন দিন রোযা রাখে। আর সেই দিনগুলো মাসের শেষে পড়ছে। বুখারির রেওয়াতে আছে, হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যেন রমযানের এক দিন আগে, দু’দিন আগে আগে রোযা না রাখে। ওই ব্যক্তি ছাড়া যে প্রতি মাসেই ওই দিন রোযা রাখে; এ মাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান। বিশেষ একটি রাতের নাম। সর্বসাধারণের কাছে যা শবেবরাত নামে পরিচিত। এ রাতের ফজিলত একাধিক হাদিস রয়েছে। তন্মধ্যে যেটি সর্বাধিক সহীহ তা হলো, আল্লাহ তায়ালা শবেবরাতের রাতে তার সৃষ্টির প্রতি মনোযোগি হন, কাফের মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। সহীহ ইবনে হিব্বান হাদিস, হাদিস- ৫৬৬৫। অন্য একটি হাদীসে এসেছে আল্লাহ তায়ালা এরাতে প্রথম আসমানে এসে ডাকতে থাকেন এই বলে যে, আছো কি কোন রিযিক তালাশকারী আমি তাকে রিযিক দিবো, আছো কি কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো, আছো কি কোন রোগমুক্তি প্রার্থী আমি তাকে সুস্থ করে দিবো। সুনানে ইবনে মাযাহ, হাদিস : ২৩৮৪
লোকসমাজে দেখা যায়, এ রাতে বিশেষ খাবারের আয়োজন করে। মসজিদে হারুয়া-রুটি পাঠায়। এ সবের কোনা ভিত্তি কুরআন-হাদিসের কোথাও নেই। সুতরাং এসব অবশ্য বর্জনীয়।