রাসুল সা. -এর মেরাজ
মাহফুজ আল মাদানী
বুখারী শরীফের বর্ণনানুযায়ী, হজরত মালেক ইবনে সা’সা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে রাতে আকাশ ভ্রমণ করানো হয়েছিল, সে রাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি কা’বার হাতিম অংশে শুয়ে ছিলাম। বর্ণনাকারী কখনও হাতিমের স্থলে হেজর বলেন। হঠাৎ একজন আগন্তুক (জিবরাঈল আ.) আমার নিকট এলেন। তিনি আমার হলকুমের নিচ থেকে নাভি পর্যন্ত বিদীর্ণ করেন। তারপর আমার হৃদপিন্ড বের করেন। তারপর ঈমানে পরিপূর্ণ একটি সোনার থালা আমার কাছে আনা হয় এবং তাতে আমার হৃদপিন্ড ধৌত করা হয়। অতঃপর খচ্ছরের চেয়ে ছোট ও গাধাঁর চেয়ে বড় একটি শুভ্র প্রাণী আমার সামনে উপস্থিত করা হয়। ওটাই বোরাক। তার প্রতিটি পদক্ষেপ দৃষ্টির শেষ সীমানায় গিয়ে পড়ত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তারপর তাতে আমাকে আরোহণ করানো হয়। (এরপর জিবরাঈল আ. আমাকে নিয়ে মসজিদে হারাম তথা বাইতুল্লাহ থেকে বাইতুল মাকদাসে নিয়ে যান। তথায় সকল নবী-রাসুলগণকে নিয়ে দু’রাকাত নামায আদায় করার পর জিবরাঈল (আ.) একটি পাত্রে শুরা ও অন্য পাত্রে দুধ নিয়ে উপস্থিত হলেন। আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। তখন জিবরাঈল (আ.) বলে উঠলেন, আপনি সত্য, খাঁটি ও স্বভাবজাত ধর্ম গ্রহণ করেছেন)।
তারপর জিবরাঈল (আ.) আমাকে নিয়ে উর্ধ্বলোকে যাত্রা শুরু করেন। প্রথম আসমানে পৌঁছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কে? বললেন, আমি জিবরাঈল। আবার প্রশ্ন করা হলো আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। পূণরায় প্রশ্ন করা হলো, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? হ্যাঁ সূচক উত্তর শুনে বলা হলো, তাঁর প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাঁর আগমন কতইনা উত্তম। তারপর দরজা খুলে দেয়া হলো। আমি ভেতরে ঢুকে হজরত আদম (আ.) কে দেখতে পাই। জিবরাঈল (আ.) বললেন, উনি আপনার পিতা হজরত আদম (আ.)। তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, নেককার পুত্র ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তারপর জিবরাঈল (আ.) আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানে পৌঁছলেন। সেখানে প্রথম আসমানের মত অনুমতি ও সালাম বিনিময় শেষে দরজা খুলে দেয়ার পর ভিতরে প্রবেশ করে হজরত ইয়াহইয়া ও হজরত ঈসা (আ.) কে দেখতে পেলাম। তাঁরা দুজন পরস্পর খালাতো ভাই। জিবরাঈল (আ.) আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে বলেন, এঁরা হলেন হজরত ইয়াহইয়া ও হজরত ঈসা (আ.)। তাঁদেরকে সালাম করুন। আমি তাদেরকে সালাম করলে তাঁরা সালামের জবাবে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ। এভাবে জিবরাঈল (আ.) আমাকে নিয়ে তৃতীয় আসমানে যাওয়ার পর অনুমতি ও সালাম শেষে ভিতরে প্রবেশ করার পর হজরত ইউসুফ (আ.) এর সাথে সাক্ষাত হলো। সেখানে ইউসুফ (আ.) এর সাথে সালাম ও কুশলাদি বিনিময় শেষে জিবরাঈল আমাকে নিয়ে আরো উর্ধ্বলোকে চতুর্থ আসমানে আসেন। পূর্বের ন্যায় অনুমতি প্রার্থনা ও সালাম বিনিময়ের পর ভিতরে গিয়ে হজরত ইদরিস (আ.) এর সাথে সাক্ষাত হয়। সেখানে সালাম বিনিময় শেষে জিবরাঈল (আ.) আমাকে নিয়ে পঞ্চম আসমানে পৌঁছেন। সেখানে হজরত হারুন (আ.) এর সাথে সাক্ষাত হয়। জিবরাঈল (আ.) বললেন, উনি হারুন (আ.), তাঁকে সালাম করুন। আমি তাকেঁ সালাম দিলে তিনি জবাবে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ। এরপর একে একে ষষ্ঠ ও সপ্তম আসমানে হজরত মুসা (আ.) ও হজরত ইবরাহীম (আ.) এর সাথে সাক্ষাত হয়। ষষ্ঠ আসমানে হজরত মুসা (আ.) এর সাথে সালাম বিনিময় শেষে সামনে অগ্রসর হলে তিনি কাদঁতে লাগলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন আমার পরে এমন এক যুবককে নবী করে পাঠানো হয়েছে, যার উম্মত আমার উম্মতের চেয়ে অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করবে। সপ্তম আসমানে হজরত ইবরাহীম (আ.) এর সাথে পরিচয় করাতে গিয়ে জিবরাঈল (আ.) বললেন, ইনি আপনার পিতা হজরত ইবরাহীম (আ.)। তাঁেক সালাম করুন। আমি তাঁেক সালাম জানালে তিনি জবাবে বললেন, নেককার পুত্র ও নেককার নবীকে সাদর সম্ভাষণ।
তারপর আমার সম্মুখপানে সিদরাতুল মুন্তাহা প্রকাশিত হয়। আমি দেখলাম তার ফলগুলো হাজর অঞ্চলের মটকা এবং পাতা হাতির কানের ন্যায়। জিবরাঈল (আ.) বললেন এটাই সিদরাতুল মুন্তাহা। আমি সেখানে চারটি নহর দেখতে পেলাম। অতঃপর আমার সামনে বায়তুল মা’মুর পেশ করা হয়। আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়। আমি ফিরে চললাম। হজরত মুসা (আ.) এর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার সময় তিনি বললেন, আপনাকে কি আদেশ করা হয়েছে? বললাম, দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দেয়া হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মত দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে সক্ষম হবে না। তখন আমি আল্লাহর দরবারে গিয়ে পঞ্চাশ ওয়াক্ত হতে কমিয়ে ক্রমান্বয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আদেশ নিয়ে আসি। পূনরায় হজরত মুসা (আ.) এর নিকট এলে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনাকে কি আদেশ করা হয়েছে? আমি বললাম দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আদেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মত প্রত্যেহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ে সক্ষম হবে না। আপনার পূর্বে আমি বণি ইসরাঈলের লোকদের পরীক্ষা করে দেখেছি এবং তাদের হেদায়াতের জন্য যথেষ্ট চেষ্ঠা করেছি। তাই, আমি বলছি, আপনি আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং আরো কমানোর প্রার্থনা করেন। উত্তরে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি আমার রবের নিকট এত অধিকবার প্রার্থনা করেছি যে, আবার প্রার্থনা করতে লজ্জাবোধ করছি। বরং আমি এতেই সন্তুষ্টি ও আনুগত্য প্রকাশ করছি। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি যখন হজরত মুসা (আ.) কে অতিক্রম করে সামনে অগ্রসর হলাম তখন জৈনক আহ্বানকারী আহ্বান করে বললেন, আমার অবশ্য পালনীয় আদেশ জারি করে বান্দাদের জন্য লঘু করে দিলাম।