ইসলামে উগ্রবাদের সুযোগ নেই
মাওলানা আরশাদ মাদানি
অধুনা মুসলিমবিশ্বের পরিস্থিতি দিনদিন বদলে যাচ্ছে। গতকাল যে বিষয়টি আমাদের ধারণায়ও ছিলো না, আজ তা দিব্যি ঘটতে চলেছে। আগামীকাল আবার কোন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়, বলা মুশকিল। এর মোকাবিলায় মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধভাবে কৌশলী হওয়া আবশ্যক। যেখানে যেমন প্রয়োজন, সেখানে ঠিক তেমন পরিকল্পনাসহ এগোনো দরকার। একজন আলেম হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব দায়িত্ব রয়েছে। প্রবর্তিত সমাজব্যবস্থা বদলাতে বুঝে শুনে অগ্রসর হওয়া চাই। সময়টা নিজেদের চেতনার অনুকূলে নয়। উম্মতের এই দুর্দিনে প্রজ্ঞা ও দুর্দর্শিতার সঙ্গে কাজ করা আবশ্যক। কিছু অশিক্ষিত মুসলমান, অসচেতন মাওলানা, শত্রুর কবলে পড়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে। কিছু মানুষ অনভিজ্ঞ ও সঠিক বোঝ না থাকার কারণে ইসলামের আসল প্রতিচ্ছবির ওপর কালিমা লেপন করে চলছে। ইসলামের আসল চেহারা বিগড়ে দিচ্ছে। বর্তমানে দুনিয়া ইসলামের নাম শুনলে ভয় পায়। এটা ইসলামের আসল রূপ নয়। যদি আসল রূপ এমনই হতো, তাহলে সুদীর্ঘ চৌদ্দশো বছর ইসলাম বেঁচে থাকতে পারতো না। যখন ইসলামের সুমহান আদর্শ বৈ অন্য কোনো শক্তিই ছিলো না। অঙ্কুরেই ইসলাম নামক বৃক্ষের মৃত্যু হতো। ইসলামবিরোধি শক্তিগুলো নানা কৌশলে ইসলামের ভুল ব্যখ্যা দুনিয়াবাসীর সামনে উপস্থাপন করে যাচ্ছে। ইসলামি রাষ্ট্রগুলো তাদের তাবেদারগোষ্ঠীতে পরিণত হচ্ছে। সুতরাং নিজেদের তারুণ্যময় চেতনা নিয়ন্ত্রণে রেখে কৌশলী হওয়াটা সময়ের দাবি। উগ্রপন্থাকে সর্বাবস্থায় ঘৃণার চোখে দেখা চাই। উগ্রপন্থা উম্মতের সঠিক পথ দেখাতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। যে পথ ও পন্থায় কেবলই শান্তি ও নিরাপত্তা রয়েছে, সুস্থ মস্তিস্কে তাইই গ্রহণ করা জরুরি। কারণ ইসলাম প্রসারিত হয়েছে একমাত্র শান্তির পয়গাম দিয়ে। ভারতীয় উপমহাদেশে সর্বপ্রথম উত্তর ভারতের কেরেলাপ্রদেশে ইসলামের আগমণ ঘটে। অল্পকিছু (৩০/৪০জন) আরব বণিক নৌকা নিয়ে সেখানে অবতরণ করেছিলেন। তাদের চারিত্রিক সৌন্দর্য, মানবতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের ফলে ভারতে ইসলামের প্রসার ঘটেছে। তারা ইসলামের সুমহান আদর্শ, পারস্পরিক ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ সবার সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। আর এগুলোই হলো ইসলামের মূল শিক্ষা। প্রতিটি ধর্মই ভ্রাতৃত্ব ও মানবতার শিক্ষা দেয়। জুব্বা-পাগড়ি পরে যদি কেউ ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ায়, তাহলে সে অবশ্যই ভুলের ওপর রয়েছে। সঠিক পথ থেকে সরে গেছে। ঠিক তেমনি যদি কেউ ঠাকুরের পোশাক পরে ঘৃণা-উগ্রবাদ প্রচার করে, সেটাও ভুল বলে সাব্যস্ত হবে। সে নিজের ধর্মের গলদ প্রতিচ্ছবি প্রদর্শন করছে। সেজন্য আমাদের নতুনভাবে শপথ নেয়া দরকার, যেনো ইসলামের সেই সঠিক রূপ যা আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) দেখিয়েছেন, তাই প্রচার করি।লেখক: সিনিয়র মুহাদ্দিস, দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত। অনুবাদ : হাওলাদার জহিরুল ইসলাম